ঢাকা: প্রতিকূল সময়ে দৃঢ়তার সঙ্গে কলম হাতে তুলে নিয়েছিলেন রাবেয়া খাতুন। তার সেসব লেখার মাধ্যমে মানুষের মাঝে চিরভাস্বর হয়ে থাকবেন।
সোমবার (০৪ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমিতে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসে এ মন্তব্য করেন বিশিষ্টজনরা।
রোববার (০৩ জানুয়ারি) বিকেলে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান রাবেয়া খাতুন।
এরপর সোমবার সকাল ১১টায় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য তার মরদেহ নিয়ে আসা হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সাড়ে ১১টা থেকে একাডেমির নজরুল মঞ্চে অস্থায়ী বেদীতে তার শ্রদ্ধানুষ্ঠান শুরু হয়।
শুরুতেই আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এছাড়াও রাবেয়া খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান ও মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, নাট্যজন মামুনুর রশিদ ও নাসির উদ্দিন ইউসুফ প্রমুখ।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় তথ্য মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণসঙ্গীতশিল্পী সমন্বয় পরিষদ, ঢাকা পদাতিক, জাতীয় কবিতা পরিষদ, চন্দ্রাবতী একাডেমি, টইটুম্বর, জাসদ, বাংলাদেশ টেলিভিশন নাট্যশিল্পী সংসদ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও পরিবেশক সমিতি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।
শ্রদ্ধা জানাতে এসে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, রাবেয়া খাতুন আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। তার মতো এমন একজন লেখিকার চলে যাওয়া সাহিত্যাঙ্গনের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। সময়ের সঙ্গে লড়াই করে তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন।
রামেন্দু মজুমদার বলেন, আমাদের যারা পথ দেখিয়েছেন জাগতিক নিয়মে তারা চলে যাচ্ছেন। সারা বিশ্বে চলমান মহামারি করোনার কারণে এই চলে যাওয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। রাবেয়া খাতুন বর্ণাঢ্য ও দীর্ঘ জীবন পালন করেছেন। তিনি সকল ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। তিনি যে কাজ করেছেন সে কাজ থেকে যদি তরুণরা উজ্জীবিত ও উৎসাহিত হয় তাহলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে।
নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, পঞ্চাশের দশকে তিনি কলম হাতে ধরেছিলেন। সেই সময়টি ছিল পশ্চাৎপদ সময়। বাংলাদেশের অগ্রসরতার পেছনে তার অবদান রয়েছে। একজন নারী লেখক হিসেবে তার অনমনীয় মনোভাব উদাহরণস্বরূপ। তিনি শুধু নিজেই সফল হননি, নিজের সন্তানদেরও প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, রাবেয়া খাতুন একজন সচেতন লেখক ছিলেন। তিনি সব সময় সমাজের নিপীড়িত মানুষের জন্য কলম ধরেছেন।
অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে তিনি কাজ করেননি। শিশুসাহিত্য থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্য- সব ধরনের রচনা তিনি করেছেন। তিনি ছিলেন বহুমাত্রিক লেখিকা। মুক্তিযুদ্ধের উপর তার লেখা অমর হয়ে থাকবে।
পরিবারের পক্ষে রাবেয়া খাতুনের মেয়ে জামাই প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, আজকে আপনারা যারা এখানে এসেছেন সবাই রাবেয়া খাতুনকে ভালোবেসে এসেছেন। তার লেখার মাধ্যমে তিনি আপনাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আপনাদের ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা তাকে আজীবন স্মরণীয় করে রাখবে।
বাংলা একাডেমি থেকে রাবেয়া খাতুনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে চ্যানেল আই কার্যালয়ে। চ্যানেল আই কার্যালয়ে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বনানী কবরস্থানে রাবেয়া খাতুনকে দাফন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২১
ডিএন/এইচএডি