ঢাকা: ছোটপর্দার অভিনেত্রী আশা চৌধুরী প্রায়ই দুসম্পর্কের ভাই শামীম আহমেদের বাইকে যাতায়াত করতেন। সোমবার (০৪ জানুয়ারি) মধ্যরাতে শামীমের বাইকে থাকা অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান অভিনেত্রী আশা।
ঘটনার তিনদিনেও ঘাতক ট্রাকের সন্ধান পায়নি পুলিশ। তবে পরিবারের সন্দেহের জেরে বাইকার শামীমকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে অভিনেত্রী আশার মৃত্যু নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?
পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে এটিকে দুর্ঘটনা বলেই মনে হয়েছে। ঘটনার পরদিন নিহতের পরিবারের সদস্যরাও এটিকে দুর্ঘটনা বলেই দাবি করে। তবে সন্ধ্যার দিকে তারা এই ঘটনার জন্য বাইকার শামীমকে সন্দেহ করেন। পরিবারের সন্দেহের ভিত্তিতেই শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে বিস্তারিত বের হয়ে আসবে।
এদিকে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘাতক ট্রাকটি শনাক্তের চেষ্টা করছে পুলিশ। এজন্য আশেপাশের এলাকার সিসিটিভি ফুটেজেরও খোঁজ চলছে। একটি ট্রাকের চাপায় দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও ট্রাকটি এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ট্রাকটি শনাক্ত করে চালককে গ্রেফতার করা গেলে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার (০৪ জানুয়ারি) মধ্যরাতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান অভিনেত্রী আশা চৌধুরী। এ ঘটনায় দারুস সালাম থানায় সড়ক পরিবহন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আশার দুর্ঘটনার সময় পেছনে থাকা একটি গাড়ির ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পিক আপের পেছনে মোটরসাইকেলে মোড় ঘুরতে দাঁড়িয়ে ছিল আশাকে বহনকারী বাইকটি। হঠাৎ দ্রুত গতির একটি ট্রাক আশার বাইকটিকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। ধাক্কা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশার বাইকের রাইডার বাইকের ডান দিকে আর আশা বামে পড়ে যায়। ট্রাকটি আশার মুখ থেঁতলে ফেলে। এরপর বাইক চালককে দৌড়ে আশার কাছে যেতে দেখা গেছে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাইকার শামীম আহমেদকে (৩৫) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। তিনি পুলিশের কাছে নিজেকে আশার দুসম্পর্কের ভাই বলে দাবি করেছেন। পরিবারের সন্দেহের ভিত্তিতে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি নিজের দায় অস্বীকার করেছেন। তবুও পরিবারের সন্দেহের জেরে তদন্তের স্বার্থে শামীমকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
আশার বাবা আবুল কালাম জানান, শামীমের সঙ্গে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল না। তবে আশা তাকে ভাই বলে সম্বোধন করতো। শামীম মাঝেমধ্যেই আশাকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে পৌঁছে দিত। দুর্ঘটনার ২-৩ দিন আগে আশা তার মাকে বলেছিলেন, শামীম ভাইয়ের বাইকে উঠতে ইদানিং তার ভয় লাগে।
তিনি বলেন, ঘটনার দিন শামীম আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আশাকে রাত ১০টার মধ্যে বনানী থেকে মিরপুরে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাবে। তার পরেও দুর্ঘটনার দিন রাত দেড়টা পর্যন্ত কেন তারা বাসায় ফিরলো না। তাই আমাদের সন্দেহ হচ্ছে সে ইচ্ছা করে আশাকে দুর্ঘটনায় ফেলেছে কি-না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দারুসসালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা নিশ্চিত হয়েছি একটি ট্রাকের চাপায় অভিনেত্রী আশার মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘাতক ট্রাকটি এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমরা আশেপাশের সাম্ভাব্য সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজছি। আশা করছি দ্রুতই ট্রাকটি শনাক্ত করা যাবে, ট্রাকটি শনাক্ত হলে চালককেও গ্রেফতার সম্ভব হবে।
আশা যে মোটরসাইকেলে ছিলেন তার চালক শামীম আহমেদকে আমরা সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার করেছি। তার বাড়ি ঝিনাইদহে, আশার দুসম্পর্কের ভাই হন তিনি। প্রায় ৮-৯ বছরের চেনাজানা শামীমকে ভাই বলেই সম্বোধন করতেন নিহত আশা চৌধুরী। মাঝে-মধ্যে আশা তার বাইকে চলাফেরা করতেন।
শামীমকে গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন রাতেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়া হয়। নিহতের পরিবারের সন্দেহ করছে, পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে সব কিছুই এখন পর্যন্ত ধারণা। আমাদের তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।
অভিনেত্রী আশা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি মিরপুরের রূপনগরের ২০ নম্বর রোডের ৩৭ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। আশা বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত শিশুশিল্পী ছিলেন। তিনি নিয়মিত নাটক, টেলিফিল্মে অভিনয় করে আসছিলেন।
আরও পড়ুন>> সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে চলে গেলেন অভিনেত্রী আশা
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২১
পিএম/এইচএডি