ঢাকা: স্বাধীনতার পর যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিয়েছিলেন সেটা যদি করে যেতে পারতেন তাহলে ঐ পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠতো এতে কোনো সন্দেহ নেই।
রোববার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, 'তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দিয়েছিলেন এবং সেই বৃটিশ আমল থেকে তৈরি করা শাসন ব্যবস্থা আমুল পরিবর্তন করে গণমুখী ব্যবস্থা করবার পদক্ষেপ তিনি নিয়েছিলেন সেটা যদি করে যেতে পারতেন, তাহলে ঐ পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠতো এতে কোনো সন্দেহ নেই। '
'মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় একটা জাতির জন্য কিছুই না। '- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, 'সাড়ে তিন বছর মাত্র সময়, এর মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশ গড়ে বাংলাদেশকে একটা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলেন। ৫ বছরের একটা কর্মসূচি তিনি নিয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে সকলকে নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করার জন্য। '
'কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত বেশি বুঝে ফেলে এবং তাদের অপপ্রচার, তাদের অপকর্ম, সেই সময় নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করে তোলা, যা কিছু করতে যান সেখানে বাধা দেওয়া। কারণ স্বাধীনতা বিরোধীরা সব সময় সক্রিয় ছিল। '
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বাংলাদেশের যদি অতীত ইতিহাস দেখেন একমাত্র এই ভূমিপুত্র বলতে, এই মাটির সন্তান বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই প্রথম এদেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন। তার আগে যারাই ছিল এই দেশে তাদের জন্ম ছিল না। দেশকে তিনি চিনতেন, জানতেন, ভালোবাসতেন এবং দেশের কল্যাণেই তিনি তার জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। '
প্রতিটি ক্ষেত্রেই বঙ্গবন্ধুর অবদান রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে মোট চার বারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আজকে রাষ্ট্রপরিচালনা করতে যেয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই যখন দেখি সমস্ত কাজের ভিত্তি তিনি তৈরি করে গিয়েছিলেন- আমার অবাক লাগে, এত অল্প সময়ের মধ্যে এত আইন, এত নীতিমালা তিনি কিভাবে করেছেন। এটা একটা বিস্ময়। ... প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে তার অবদান রয়েছে। '
১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে নিহত হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে দাঁড়াক, বাংলাদেশের মানুষ মাথা উঁচু করে চলুক, সম্মান নিয়ে চলুক এটা আমাদের স্বাধীনতা বিরোধী পরাজিত শক্তি কখনো চায়নি বলেই জাতির পিতাকে শুধু হত্যাই করেনি, আমাদের সমস্ত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বিচ্যুত করেছিল। '
৭৫ এর পর ইতিহাস বিকৃতির কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, 'প্রজন্মের পর প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস জানতে দেয়নি। শুধু মাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরই মানুষ আস্তে আস্তে জানতে পারে। '
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটির কথা স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, 'তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন মুক্তি পেলেন এবং ফিরে এলেন বাংলার মাটিতে। আপনারা দেখেন আমি একজন পরিবারের সদস্য হিসেবে এইটুকু বলবো আমার আব্বা কিন্তু আমাদের কাছে আসেন নাই। তিনি পরিবারের কাছে না জনগণের কাছে আগে গিয়েছিলেন। বাংলার মানুষকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন সেই মানুষের কাছেই আগে ছুটে গিয়েছিলেন। '
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, 'দীর্ঘ নয়টা মাস যে কারাগারে ছিলেন সেখানে তার ওপর যে অত্যাচার, নির্যাতন, আপনারা লক্ষ্য করবেন শুকিয়ে কি রকম ... হয়ে যান। ৪০ পাউন্ড ওজন তার কমে যায়। তিনি বন্দী খানা থেকে চলে যান লন্ডন; সেখানে প্রেস কনফারেন্স করেন, প্রাইমমিনিস্টারের সঙ্গে দেখা করেন। আমাদের প্রবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেখান থেকে তিনি দিল্লি হয়ে আসেন। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং তাদের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারপর তিনি ঢাকায় আসেন। সেখান থেকে তিনি সরাসরি রেইসকোর্স ময়দানে চলে যান। তার যে ভাষণ দিলেন একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পরিচালনার সমস্ত দিকনির্দেশনা ওই ভাষণে আছে। '
শেখ হাসিনা বলেন, 'একজন মানুষ একটা জাতির প্রতি, মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে পরে, মানুষকে কতটা ভালোবাসতে পারলে এই ভাবে আত্মত্যাগ করতে পারে; এই ভাবে মানুষের কথা বলতে পারে। ৭ই মার্চের ভাষণ, ১০ জানুয়ারির ভাষণ। আমি মনে করি আমাদের সকলের এই ভাষণগুলো শোনা উচিত, নতুন প্রজন্মের শোনা উচিত। তাহলে রাজনীতি করার একটা প্রেরণা, দিক নির্দেশনা পাবে। '
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শেখ বজলুর রহমান, আবু আহমেদ মান্নাফী, এসএম মান্নান কচি ও হুমায়ুন কবির।
সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।
বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২১
এমইউএম/এমএইচএম