লালমনিরহাট: শীতের রাতে উষ্ণতার কম্বল নিয়ে ছিন্নমূল ও এতিম শিশুদের দুয়ারে দুয়ারে ছুটছেন লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর।
রোববার (১০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০টার দিকে আদিতমারী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মহিষখোচা কামার পাড়া হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুদের হাতে কম্বল তুলে দেন তিনি।
জানা গেছে, তীব্র শীতের পাশাপাশি গত দুই দিন ধরে সুর্যের দেখা নেই হিমালয়ের পাদদেশের জেলা লালমনিরহাটে। ফলে শীতের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে কয়েকগুণ। শীতার্ত মানুষদের উষ্ণতা দিতে রাতের আঁধারে গাড়িতে কম্বল নিয়ে ছুটে চলছেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।
ফুটপাত ও স্টেশনের বারান্দায় শুয়ে থাকা ভাসমান মানুষের পাশাপাশি আশ্রয়ণ, গুচ্ছগ্রাম, বৃদ্ধাশ্রম, হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় থাকা শিশুদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন আবু জাফর। শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এভাবে প্রতি রাতে ফেরিওয়ালার মতো উষ্ণ কম্বল বিতরণ করছেন তিনি।
জেলা প্রশাসক আবু জাফর প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছুটে বেড়ান শীতার্তদের খুঁজে। দীর্ঘ একশত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ জেলায় একেক দিন একেকটি উপজেলায় ঘুড়ে বেড়ান তিনি। সঙ্গে নেন সংশ্লিষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। সন্ধ্যা নামলেই তার গাড়িতে তুলে নেন শীতবস্ত্র কম্বল।
প্রশাসনের শীর্ষ পর্যয়ের এ কর্মকর্তাকে রাতের আঁধারে ঘরের দুয়ারে কম্বল নিয়ে হাজির হতে দেখে আবেগে আপ্লুত হন অনেক ছিন্নমূল শীতার্ত মানুষ।
শুধু কম্বলই বিতরণ করেন না জেলা প্রশাসক আবু জাফর। এ সময় এসব এতিম শিশু ও ছিন্নমূল মানুষদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের অন্য কোন অভাব অভিযোগ থাকলে তা শুনে সমাধানের চেষ্টা করেন। ছিন্নমূল এসব মানুষের দুয়ারে পৌঁছাতে অনেক সময় গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেও যেতে হয় তাকে। তবুও অন্যের দ্বারস্থ না হয়ে ছুটে গিয়ে নিজ হাতেই শীতের উষ্ণতার কম্বল তুলেন দেন জেলা প্রশাসক আবু জাফর।
রোববার রাতে কম্বল বিতরণের সময় তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল ইসলাম, আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম।
মহিষখোচা কামার পাড়া হযরত ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ) হাফিজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার প্রধান শিক্ষক হাফেজ মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা শিশুদের পড়াচ্ছিলাম। রাত সাড়ে ১০টায় হঠাৎ মাদরাসার ভেতরে কম্বল নিয়ে ঢুকে পড়লেন কয়েকজন। পরে জানলাম ডিসি স্যার নিজেই এসেছেন এতিম ও কোরআনের হাফেজ শিশুদের কম্বল দিতে। এ সময় তিনি (ডিসি) মাদরাসার কোনো সমস্যা আছে কি না এসব নিয়েও কথা বলেন। শিশুদেরকে পাঠ্য বিষয় নিয়ে প্রশ্নও করেন। আগামীতে কোনো সমস্যা মনে হলে সরাসরি যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন ডিসি স্যার। এমন মানবতার ডিসি আমি দেখি নাই। ‘
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, শীতের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৪০ হাজার ও বেসরকারীভাবে ১০ হাজার পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। রাতের আঁধারে কম্বল নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে যার প্রয়োজন তাকে দেয়া সম্ভব। পথশিশু, এতিম ও ছিন্নমূল মানুষজন অনেক সময় কম্বলের অভাবে শীতে কষ্ট করে। তাই তাদেরকে একটু উষ্ণতা দিতে সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাত বা দিন বলে নয়, মানুষের সেবা করাই আমাদের কাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০২১
এমএইচএম