যশোর: মারামারির একটি মামলায় বাদীর ভুলে পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি হারিয়ে গত এক বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন যশোরের চৌগাছার যুবক সোয়েব আক্তার। আদালতে মামলাটি নিষ্পত্তির পর মানবাধিকার কমিশন ভুক্তভোগীকে চাকরিতে পুনর্বহালের সুপারিশ করেছে।
মারামারি মামলার প্রকৃত আসামি সাইফের বাবার নাম মোশারেফ হোসেন ওরফে ফাজু। পুলিশের শিক্ষানবিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাওয়া মো. সোয়েব আক্তারের বাবার নাম ও ঠিকানা একই। মামলায় সাইফকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। বাবার নাম ও গ্রামের নামের মিল থাকায় প্রশিক্ষণে থাকা সোয়েব আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) প্রেসক্লাবে যশোর মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে চাকরি ফিরে পেতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সোয়েব আক্তার চৌগাছা উপজেলার জামিরা গ্রামের মোশারেফ হোসেনের ছেলে।
ভুক্তভোগী সোয়েব আক্তার জানান, মারামারির ঘটনায় ২০১৭ সালের ৬ মার্চ চৌগাছা থানায় ১১জনের নামে মামলা করেন বারুইহাটি গ্রামের শাহজাহান আলী। যার নম্বর-০৪। ওই মামলার ১০ নম্বর আসামি জামিরা গ্রামের মোশারেফ হোসেন ওরফে ফাজুর ছেলে মো. সাইফ। একই বছরের ২৭ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট শিক্ষানবিশ কনস্টেবল হিসেবে প্রশিক্ষণে যোগদান করেন তিনি। এক পর্যায়ে ২০২০ সালের ২৯ জানুয়ারি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন খুলনার সহঅধিনায়ক মো. সাজ্জাদুর রহমান রাসেল স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে মো. সোয়েব আক্তারের নামে যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে উল্লেখ করে চাকরি থেকে অব্যাহতির ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর যশোরের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সাইফুদ্দীন হোসাইন এক রায়ে সব আসামিকে খালাস দেন।
সোয়েব আক্তার আরও দাবি করেন, মারামারির ওই মামলায় আমি আসামি নই। ১০ নম্বর আসামির বাবার নাম ও গ্রামের নামের সঙ্গে মিল থাকায় আমাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটি আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। আমি নিরপরাধ হয়েও চাকরি হারিয়েছি। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে চাকরিটা পেয়েছিলাম সোনার হরিণের মতো। সেই চাকরি হারিয়ে অসহায় দিনযাপন করছি। চাকরি ফিরে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করেছি। দ্বারে দ্বারে ঘুরছি।
এরপরও উপায় না পেয়ে বৃহস্পতিবার যশোর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন সোয়েব। চাকরি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ভুক্তভোগী এ যুবক।
চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিফাত খান রাজিব বাংলানিউজকে বলেন, চাকরিতে যোগদানের সময় পুলিশ ভেরিফিকেশনে সোয়েবের নামে কোনো মামলার তথ্য ছিল না। পরে বাদীপক্ষের লোকজন সোয়েব আক্তারকেই সাইফ বলে দাবি করলে আবার তদন্ত করা হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, মামলায় সোয়েব নিয়মিত হাজিরাও দিয়েছে। পরে বাদীপক্ষের সঙ্গে আপস করে খালাস পায় সে।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২০
ইউজি/ওএইচ/