ঢাকা: দেশে নারী উদ্যোক্তা তৈরি করতে পুরুষ ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে নারীরা যাতে কাজ করার সুযোগ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তিনি।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নবম জাতীয় এসএমই পণ্যমেলা-২০২১ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসএমই ফাউন্ডেশন নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ভূমিকা রাখছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি সামনের দিনে আরও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। এখানে আমি অবশ্য আমাদের পুরুষ সমাজকে পরামর্শ দিতে পারি। আপনারাও ব্যবসা করেন, আপনাদের স্ত্রীর নামে এই এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ঋণ নিয়ে তাকেও একটু কাজ করার সুযোগ করে দেন। তাতে সংসারের সাথে সাথে মেয়েরা শিল্পায়নও করতে পারবে, তাতে উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হবে। সেই সুযোগটা অন্তত আপনারা দেবেন, সেখানে বাধা দিয়েন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ক্ষুদ্র কুটির শিল্পকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর নীতিকে অনুসরণ করে আমরা একদিকে কৃষির উন্নয়ন করে যাচ্ছি, পাশাপাশি শিল্প গড়ে তোলা ও প্রসারে কাজ করে যাচ্ছি। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। সারা দেশে যাতে শিল্পায়ন হয় সে ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করা। ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমে দেশের নারী সমাজ যাতে স্বনির্ভর হতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা করছি।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা জাতিসংঘের এমডিসি অর্জ করেছি। এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছিলেন। আমরা পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বস্তবায়ন করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালের যে রূপকল্প আমরা গ্রহণ করেছিলাম তা অর্জন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। এখন ২০২১ থেকে ২০৪১ সালের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ’৪১ সালে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হবো। মর্যাদা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে চলবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কর্মসূচি।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশনের গুরুত্ব তুলে ধরে প্র্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার কর্মসূচি যদি বাস্তবায়ন করতে চাই আমাদের স্বাভাবিকভাবেই কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ শিল্প সব ধরনের শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে। আর সে দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা বিভিন্ন পরিকল্পনা করে যাচ্ছি। এসএমই নীতিমালা ২০১৯ আমরা প্রণয়ন করেছি এবং ২০২৪ সালের মধ্যে জাতীয় আয়ে অর্থাৎ জিডিপিতে যাতে ৩২ শতাংশ অবদান রাখে সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এসএমইর বিদ্যমান অবদান হচ্ছে ২৫ শতাংশ। আমাদের সেইভাবেই উদ্যোক্তা সৃস্টি করা দরকার। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই ফাউন্ডেশন বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছে। পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বড় অবদান রাখছে। নারীরা এক সময় পিছিয়ে থাকতো। তাদের মাঝে তেমন কোনো উদ্যোক্তা ছিল না, আজকে নারী উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসছে। কাজেই আমরা নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়াসহ ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টিতে এসএমই ফাউন্ডেশন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
সরকারপ্রধান যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে না তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যত্রতত্র শিল্প গড়ে তোলা যাবে না। কৃষি জমি নষ্ট করবেন না। খাদ্য চাহিদা কমবে না, বাড়বে। কোভিডের কারণে খাদ্য চাহিদা আরও বেড়েছে। কেউ যদি উদ্যোক্তা হয় তাহলে তার জায়গা ঠিক করে দিতে হবে। সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানেও উদ্যোক্তারা অংশ নিতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী পণ্যের মান আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু উৎপাদন করলেই হবে না, পণ্য যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে যে জিনিসের চাহিদা রয়েছে, সেখানে সেটা যাতে আমরা রফতানি করতে পারি। কৃষির দিকেও নজর দেবেন। শিল্পের কাঁচা পণ্যটা যাতে নিজেদের দেশ থেকে আহরণ করা যায় সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, এফবিসিসিআইএর সভাপতি জসিম উদ্দিন, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২১
এসকে/এমজেএফ