ঢাকা: অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে গুলশানের নিকেতনে এক বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেন ফেন্সি আরা। মাসিক সাত হাজার টাকার চুক্তিতে কাজে যোগ দিলেও দেওয়া হতো মাত্র এক হাজার টাকা।
অর্থাভাবে গৃহকর্মীর কাজে যোগ দিয়ে অর্থ মেলেনি, বরং প্রায়ই কারণে-অকারণে মারধর করতেন গৃহকর্ত্রী। এভাবেই একদিন মারধরে নিহত হন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের বাসিন্দা ফেন্সি আরা। এরপর তার মরদেহ গুম করতে গাড়িতে করে উত্তরার দিয়াবাড়িতে ফেলে আসেন গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী।
শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদস্যদের মাধ্যমে মোমিনুল জানতে পারেন, তার স্ত্রী ফেন্সি আরার মরদেহ মিলেছে উত্তরা দিয়াবাড়ির একটি ঝাউবনে। এরপর তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে মরদেহ শনাক্ত করেন।
এরপর পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তরের একটি দল রাজধানীর গুলশান নিকেতনের ৬ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ি থেকে গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হক (৬৩) ও মূল হত্যাকারী গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসানকে (৬০) গ্রেফতার করে। গৃহকর্মী ফেন্সিকে হত্যা পর মরদেহ গুম করতে দিয়াবাড়িতে ফেলে আসার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন তারা।
রোববার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও পিবিআই ঢাকা মেট্রো-উত্তর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।
তিনি বলেন, ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তুরাগ থানার দিয়াবাড়ির ঝাউবন এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক তরুণীর (৩০) মরদেহ উদ্ধার করে তুরাগ থানা পুলিশ। ওই খবরের ভিত্তিতে পিবিআই পরিদর্শক মোহাম্মাদ তরিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মরদেহ শনাক্তের একটি জরুরি দল ঘটনাস্থলে যায়।
এরপর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অজ্ঞাতনামা তরুণীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। জানা যায়, নিহতের নাম পারভীন ওরফে ফেন্সি আরা। তার বাদী দিনাজপুর চিরিরবন্দর এলাকার আলোকডিহি সরকার পাড়ার। পিবিআই নিহতের স্বামী মোমিনুলসহ অন্য আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত করে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভিকটিম ফেন্সি দেড় বছর আগে অভাবের তাড়নায় স্বামী-সন্তানসহ ঢাকা শহরে চলে আসেন। ঢাকায় এসে তিনি নিকেতনের ৬ নম্বর সড়কের ১৫ নম্বর বাড়ির এ-১/ ফ্ল্যাটে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেন। ওই বাড়ির গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হাসান।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গৃহকর্তা সৈয়দ জসীমুল হাসান বলেন, ১ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহ ও ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে গৃহকর্ত্রী সৈয়দা সামিনা হাসান ফেন্সিকে লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে জ্ঞান হারান তিনি। পরে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বুকে চাপ দিলে বুকের হাড় ভেঙে যায় ও তার মৃত্যু হয়।
ঘটনার পর গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রী শলাপরামর্শ করে মরদেহ গোপন করতে ড্রাইভার রমজান আলীর (৪১) সহায়তায় প্রাইভেটকারে (গাড়ি নং-২২-৪৫৪৪) করে তুরাগের দিয়াবাড়ি এলাকায় ঝাউবনে ফেলে আসেন।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা বলেন, ভিকটিম ফেন্সির স্বামী মোমিনুল ঢাকা শহরে রিকশা চালাতেন। ফেন্সি ওই বাসায় কাজ নেওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারতেন না মোমিনুল। একদিন তার স্ত্রী ফোনে জানায়, তাকে গৃহকর্ত্রী মারধর করে আটকে রেখেছে। এ সংবাদে তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এরপর তিনি একদিন ওই বাসায় স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসেন। এরপর আর কোনো দিন দেখা করতে পারেননি। পরে গত অক্টোবরে তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যান।
ওই বাসায় তার স্ত্রী কাজ নেওয়ার পর থেকে গৃহকর্তা জসীমুল হাসান প্রতি মাসে তার মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে মাত্র এক হাজার টাকা করে পাঠাতেন। যদিও কথা ছিল মাসে সাত হাজার করে টাকা দেবেন।
স্ত্রী ফেন্সি নিহতের ঘটনায় স্বামী মোমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে সত্যতা স্বীকার করেছেন। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য রোববার (৫ ডিসেম্বর) আদালতে পাঠানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২১
পিএম/জেএইচটি