মাদারীপুর: মাদারীপুরের পাঁচ যুবককে রোমানিয়ায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি করছে দালালচক্র!
রোমানিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভনে এরই মধ্যে তাদের পরিবারের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। বর্তমানে রোমানিয়ার অজ্ঞাত কোনো স্থানে আটকে রেখে তাদের পরিবারের কাছে ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে আরো টাকা দাবি করা হচ্ছে।
অভিযোগ পাওয়ার পর চক্রের একজনকে গ্রেফতার করেছে মাদারীপুর সদর থানা পুলিশ।
বর্তমানে রোমানিয়ায় দালাল চক্রের হাতে বন্দি রয়েছেন মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার বালিগ্রাম ইউনিয়নের খাতিয়াল গ্রামের মৃত সৈয়দ সালামের ছেলে তানভীর, একই গ্রামের সাঈদ হাওলাদারের ছেলে বায়েজিদ হাওলাদার ও রাশেদ হাওলাদার, মাদারীপুর সদর খোয়াজপুর ইউনিয়নের মিলন মিয়া এবং মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকি নওহাটা গ্রামের মোফাজ্জেল হাওলাদার।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, একই দালাল চক্রের হাতে বসনিয়ায় বন্দি রয়েছেন মাদারীপুরের আরো পাঁচ যুবক।
বৃহস্পতিবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে ভুক্তভোগী পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে সেদিনই আল আমিন (২৯) নামে চক্রের একজনকে আটক করে পুলিশ। আটক আল আমিন মাদারীপুর সদর উপজেলা হাজির হাওলা এলাকার জাফর বেপারীর ছেলে।
জানা গেছে, আল আমিন ছাড়াও মাদারীপুর সদরের রাস্তি এলাকার শামিম আকন ও তার স্ত্রী সুমি বেগম (২৮), রাস্তি এলাকার সিরাজ আকন (৬০), মাদারীপুর সদরের হাজির হাওলা এলাকার জাফর বেপারী ও তার স্ত্রী রীনা বেগম, হাজির হাওলা এলাকার সিরাজ আকনের স্ত্রী রানু বেগম একই দালাল চক্রের সদস্য।
রোমানিয়ায় অবস্থানরত তাদের আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার এবং উচ্চ বেতনে ভালো চাকরির দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে চলতি বছরের গত ৩ আগস্ট ভুক্তভোগী পাঁচজনের পরিবারের কাছ থেকে আট লাখ টাকা করে নেন তারা। এক মাসের মধ্যে ইতালিতে পৌঁছে দেওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্নভাবে তারা যুবকদের আটকে রাখেন। বর্তমানে ওই পাঁচ যুবককে ১৫ দিন ধরে রোমানিয়ার কোনো এক স্থানে আটকে রেখে ১০ লাখ টাকা করে দাবি করছেন চক্রের সদস্যরা। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো থানায় অভিযোগ করলে দালাল চক্রের সদস্য আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানায়, এ চক্রের মাধ্যমে ইতালিতে যাওয়ার উদ্দেশে গিয়ে মাদারীপুরের আরো পাঁচজন অনেকদিন ধরে বসনিয়ায় আটকা রয়েছেন।
রোমানিয়ায় বন্দি থাকা তানভীরের ভাই মো. সৈয়দ সেলিম বলেন, রোমানিয়া থেকে ইতালিতে পাঠানোর জন্য গ্রিসে অবস্থানরত শাহিনের সঙ্গে চুক্তি করে তার ভাগিনা আল আলিন ও তার স্ত্রী সুমিসহ সবাইকে উপস্থিত রেখে আমরা পাঁচ পরিবার তাদের আট লাখ টাকা করে দিয়েছি। কিন্তু তারা আমার ভাইসহ অন্যদের ইতালিতে না নিয়ে রোমানিয়ার কোনো এক জায়গায় আটকে রেখে আরো টাকা দাবি করছেন। আমার ভাইসহ সবার বন্দিদশা থেকে মুক্তি চাই এবং দালাল চক্রের বিচার চাই।
এ ব্যাপারে আল আমিনের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর থেকে তারা কেউ বাড়িতে নেই বলে জানান প্রতিবেশীরা।
তবে অভিযুক্ত শাহিনের স্ত্রী সুমি বেগম জানান, আমার স্বামীর সঙ্গে আমার অনেক বছর কোনো যোগাযোগ নেই। তাছাড়া আমি আমার বাবার বাড়ি থাকি। তারা শাহিনকে টাকা দিয়েছে কিনা, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। বিষয়টি জানার পরে আমি শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম মিঞা বলেন, আমরা অভিযোগ পাওয়া মাত্রই একজনকে আটক করেছি। একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২১
এসআই