বরগুনা: ‘বাংলাদেশ আমার অহংকার’- স্লোগানে উজ্জীবিত র্যাব-৮ এর আয়োজনে বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলায় ‘উপকূলীয় জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের হল রুমে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্বল্প পরিধির এ দস্যুদের অচিরেই নির্মূল করতে সক্ষম হব। জলদস্যু নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স ঘোষণাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেছেন।
আমাদের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটে যাওয়া পাথরঘাটায় জলদস্যুদের হাতে আটক জেলেদের উদ্ধার করেছে র্যাব। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে এ অঞ্চলে জলদস্যু মুক্ত করব। তবেই এ অঞ্চলে জেলে পরিবার হবে আশঙ্কামুক্ত। মৎস্য লুণ্ঠনকারী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ‘উপকূলীয় জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার প্রধান অতিথি র্যাব ফোর্সেস এর মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বরিশাল বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামান।
র্যাব ফোর্সেস এর অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদের সভাপতিত্বে র্যাব ও পুলিশ সুপার মো. শফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- র্যাব ফোর্সেস গোয়েন্দা শাখার পরিচালক মশিউর রহমান, জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্টেডিয়াম মাঠে (জিয়া মাঠ) র্যাবের নিজস্ব দুটি হেলিকপ্টারে করে পাথরঘাটায় পৌঁছান র্যাব ফোর্সেস এর অতিরিক্ত আইজিপি মহাপরিচালক, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি সহ র্যাব এর কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এর পরপরই লঞ্চ ঘাটের দিকে রওনা হন। সেখানে প্রধান অতিথি জেলেদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় পর্বে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘উপকূলীয় জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করে জীবিকার তাগিদে উপকূলীয় জীবন মানের ওপরে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন আয়োজিত মতবিনিময় সভার অতিথিরা।
মতবিনিময়ের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন- র্যাব-৮ এর অধিনায়ক জামিল।
মতবিনিময় সভায় নির্যাতনের শিকার জেলে নেছার ও কামালের মা আম্বিয়া বেগম কথা বলেন। এসময় জলদস্যুদের দস্যুপনার নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মা আম্বিয়া।
৪টি স্থায়ী র্যাব ক্যাম্প স্থাপন করার কথা থাকলেও না করায় দুঃখ প্রকাশ করে র্যাব ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন, ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী।
গোলাম কিবরিয়া পিয়ার নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, মাদক নির্মূলে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ একমাত্র এই মাদকের ভয়াল থাবায় গোটা সমাজ ধ্বংসের পথে।
বরগুনা থেকে আগত বিশেষ অতিথি হিসেবে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, আমরা সবাই র্যাবের শক্তি জোড়দার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আলোচনা করেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ জনগণকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে এবং সেইসঙ্গে সাধুবেশী লোক দেখতে চায় না দেশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক বলেন, এ জেলার মৎস্য আহরণকারীদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ঝড়ের কবলে পড়ে সাগরেই মৃত্যুবরণ করেন। তবে তাদের মরদেহ খুঁজে না পাওয়ায় আমরা তাকে মৃত ঘোষণা করতে পারি না। তাই কাগজ-কলমে সরকারি কোনো সুবিধা তাদের পরিবার পায় না। এদের জন্য এমন একটি ব্যবস্থা করা উচিত, যাতে করে এদের সরকারি সব সুবিধা দেওয়া যায়। পুলিশ সুপার নৌ পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে জোড়দার করতে সুপারিশ করেন।
‘উপকূলীয় জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় র্যাব ফোর্সেস এর পক্ষ থেকে ৮ জেলে পরিবারের মধ্যে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে নিহত জেলে মুসা মিয়ার স্ত্রী মোসাম্মৎ তাজিনুর বেগমকে ১ লাখ ও বাবুল ফকির, কামাল, জামাল, হেলাল উদ্দিন, সেলিম সরদার, সাইফুল ইসলাম, লোকমান খানকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২১
আরএ