বরিশাল: আগুন লাগার পর এমভি অভিযান-১০ লঞ্চ ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চরকাঠির নদী সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সেখানে লঞ্চটিকে নোঙ্গর করানো হলে হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক কম হতো বলে দাবি করেছেন যাত্রীসহ স্থানীয়রা।
যাত্রীদের কেউ বলছেন, চরকাঠিতে গিয়ে লঞ্চটি নদী তীরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। কেউ বলছেন, সেখানে নোঙ্গর করার উদ্দেশ্যেই নেওয়া হয়েছিল। তবে লঞ্চটি পরিচালনায় যুক্ত কারও বক্তব্য না পাওয়ায় প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ কার্গো ট্রলার বাল্কহেড শ্রমিক ইউনিয়নের ঝালকাঠি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম ঘটনার পর পরই ঝালকাঠি পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির সাগরের সঙ্গে ট্রলার নিয়ে উদ্ধার অভিযানে ঝাপিয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, অভিযান-১০ লঞ্চটি আগুন লাগার পর ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের চরকাঠির নদী সংলগ্ন এলাকায় গিয়েছিল। সেখানে যাত্রীরা নামার চেষ্টাও করেন, কয়েকজন নেমেও যান। কিন্তু হঠাৎ করেই লঞ্চটি পেছনের দিকে আসতে শুরু করে এবং সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ প্রান্তে দিয়াকুলে গিয়ে নোঙ্গর করে। আর এ সময়ের মধ্যেই পুরো লঞ্চে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
চরকাঠিতে লঞ্চটিকে নোঙ্গর করে রাখা হলে হতাহতের সংখ্যা অনেক কম হতো বলে দাবি করেন সাইফুল ইসলাম। প্রায় সব যাত্রীই ভালোভাবে লঞ্চ থেকে নেমে যেতে পারতেন বলে মনে করেন তিনি।
শ্রমিক ইউনিয়নের এই নেতা বলেন, কয়েকটি ট্রলার নিয়ে যাত্রীদের উদ্ধারে আমরা যখন এগিয়ে যাই তখন আগুনের তাপে লঞ্চের কাছে যেতে পারিনি। প্রথমে নদী থেকে দুই পা পুড়ে যাওয়া একজনকে উদ্ধার করি। এরপর আরও ২০ জনকে এবং তারপর একবার ৭০-৮০ জনকে উদ্ধার করেছি।
যাত্রীদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, নলছিটির পরেই যাত্রীরা লঞ্চের ইঞ্জিন রুমে বিকট শব্দ পেয়েছেন। আর ইঞ্জিন রুম থেকেই আগুন লেগেছে। পরে যাত্রীরা বাঁচার জন্য যে যেভাবে পারেন লাফিয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ শিশু সন্তানের কথা চিন্তা করে নদীতে লাফ দেননি।
সাইফুল ইসলাম বলেন, চরকাঠিতে লঞ্চটি যখন তীরের সঙ্গে ধাক্কা লাগে তখন ওদের (স্টাফদের) উচিত ছিল কোনো কিছুর সঙ্গে বেঁধে দেওয়া। তাহলে হতাহতের সংখ্যা কম হতো। কিন্তু ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লঞ্চটি ভাসতে ভাসতে দিয়াকুলে চলে আসায় হতাহতের সংখ্যা এত হলো। যাত্রীরা জানিয়েছেন, লঞ্চটি যখন চরকাঠিতে পৌঁছায় তখন স্টাফরা লঞ্চের সামনের গেট খোলেননি। টিকিটের কথা চিন্তা করে স্টাফরা গেট খোলেননি বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ। তবে স্টাফরা নদীতে লাফিয়ে পড়ে চলে গেছেন।
দিয়াকুলের নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এখানে লঞ্চটি পৌঁছানোর পর স্টাফরা লঞ্চ না বেঁধে চলে যান। স্থানীয়রা অনেকেই লঞ্চটিকে বেঁধে যাত্রীদের উদ্ধার করতে বললেও তারা তা শোনেননি।
একই কথা বলেন ওই লঞ্চের যাত্রী নাছিমা। তিনি বলেন, আগুন নেভানো তো দূরের কথা, স্টাফরা যাত্রীদের কোনো ধরনের সহযোগিতায় এগিয়ে আসেননি। লঞ্চটি তীরে আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা লাফিয়ে পড়ে চলে যান। আর এ কারণে কোনো স্টাফ হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলে দাবি নিখোঁজদের স্বজন
রিপন ও সুমন।
এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. তোফায়েল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, লঞ্চের চালক ছিল কি ছিল না, এগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। কাগজে কলমে মিলিয়ে বাস্তবেও আমরা দেখবো।
প্রথম যেখানে লঞ্চটি থামানোর জন্য গিয়েছিল সেখানে থেকে অন্য স্থানে সরে আসার বিষয়ে তিনি বলেন, পুরো বিষয়গুলো আমরা যাচাই করছি। প্রথম যে স্থানে লঞ্চটি গিয়েছিল সেখানকার স্থানীয় মেম্বার এবং ঘাটে লাগার পর যারা উদ্ধার কাজে এসেছিলেন তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
তবে টিকিটের জন্য যাত্রীদের নামতে দেওয়া হয়নি, এমন অভিযোগ এখন পর্যন্ত কারো কাছ থেকে শোনেননি বলেও জানান তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২১
এমএস/এমজেএফ