রংপুর: রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় ইউনুস আলী নামে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে টাকা চুরির অপবাদে দুই শিশুকে ঘরে বন্দি করে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৬ জানুয়ারি) উপজেলার টেপা মধুপুর ইউনিয়নের মোল্লাটারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের শিকার শামীম মিয়া (১০) কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রাজিব মোল্লাটারী গ্রামের সামসুল হকের এবং রাসেল (৯) ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চৈতারামোড় বাজেমজকুর গ্রামের মন্তাজ আলীর ছেলে।
শামীমকে কাউনিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নেওয়া হলেও সন্ধ্যায় রাসেলকে কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শামীমের মা সোহাগী বেগম জানান, সংসারে অভাবের কারণে শামীম একটি পিকআপ ভ্যানে সহকারী হিসেবে কাজ করে। চারদিন পর মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে নাওগা থেকে বাড়ি ফিরে খাওয়া শেষে গাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে সে। বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে লোকমুখে জানতে পারেন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার ছেলের হাত পা বেঁধে মারধর করছেন। পরে তিনি জানতে পারেন যে, মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকার আকরাম হোসেন নামে এক ব্যক্তির ঘরের সিঁধ কেটে ৭০ হাজার টাকা কে বা কারা চুরি করেছে। এ ঘটনায় আকরাম এবং তার ভাই ইয়াকুব ও ইউপি সদস্য ইউনুস আলী তার ছেলেকে সন্দেহ করে অমানবিক নির্যাতন চালায়। পরে খবর পেয়ে কাউনিয়া থানা পুলিশ ওই বাড়ি থেকে শামীমকে উদ্ধার করে। পরে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করতে গেলে ইউনুস মেম্বারের লোকজন তাকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসা না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেলে সেখানে পুরো পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে আকরাম ও ইউনুস মেম্বারের লোকজন। এ ঘটনার পর থেকে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
রাসেলের বাবা মন্তাজ আলী জানান, বুধবার সকালে তিনি কাজে বেরিয়ে যান। বিকেলে বাড়ি ফিরে জানতে পারেন, দুটি মোটরসাইকেলে করে ইউসুফ মেম্বার ৪/৫ জন লোকসহ এসে তার ছেলেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান এবং বেধড়ক মারধর করেন। এ অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসে সে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সন্ধ্যায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশু রাসেল জানায়, অনেক আকুতি মিনতি করেও মেম্বারের নির্যাতন থেকে রক্ষা হয়নি। টাকা চুরি করিনি বলার পরেও তাকে এবং শামীমকে বেঁধে পিটিয়েছেন মেম্বার ইউসুফ, আকরাম ও ইয়াকুব।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ইউপি সদস্য কারণে অকারণে বিভিন্ন বয়সী শিশু ও মানুষদের ধরে এনে মারধর করেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ওমর ফারুক জানান, রাসেলের দুই উরুতে চারটা সুই ফোটানো হয়েছে এবং বাম হাঁটুর নিচে ফোলা আছে। এছাড়া ডান পায়ের পাতায় রক্ত জমাট হয়েছে। তার এক্স-রে করার জন্য প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য ইউনুস আলী বলেন, আমি মারধর করিনি। আকরাম ও ইয়াকুবের বাড়িতে মারধর করা হয়েছে।
মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আকরাম হোসেন মুঠোফোনে বলেন, প্রথমে শামীমকে নিয়ে আসা হয়। পরে তার কথামত রাসেলকে আনা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, মেম্বার শিশু দুইজনকে চর থাপ্পর মেরেছেন।
এ বিষয়ে টেপামধুপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। ভুক্তভোগী দুই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুমুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ডিউটি অফিসার গিয়েছিল। পরে শিশু দুটিকে তাদের পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২২
এমআরএ