বরিশাল: সময় যতো ঘনিয়ে আসছে, আসন্ন কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে ততোই বাড়ছে উম্মাদনা। বিভিন্ন দেশের ফুটবল দলের সমর্থনে এরইমধ্যে বরিশালজুড়ে চলছে প্রত্যাশার আলোচনা-সমালোচনা, বাড়ছে উত্তেজনা।
এছাড়া সমর্থনকারী দেশের ফুটবল দলের জার্সি ও সেই দেশের পতাকা কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। অনেকে আবার সীমানা দেয়াল, ভবনের দেয়াল ও রাস্তা-ব্রিজ-কালভার্টেও এঁকে দিচ্ছেন সমর্থনকারী দেশের পতাকা। এ যেন এক উৎসবের আমেজ। সেইসঙ্গে নগরজুড়ে বেড়েছে পতাকা বিক্রেতার সংখ্যাও।
এদিকে বিশ্বকাপ খেলা উপভোগ করার জন্য অনেকে প্রজেক্টর ভাড়া নেওয়ার চিন্তা করছেন। অনেকে ইতোমধ্যেই কিনে ফেলেছেন টেলিভিশন। কেনার চিন্তা করছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে বরিশাল নগরের গোরস্থান রোড এলাকার বাসিন্দা ও আর্জেন্টিনা দলের সমর্থক শাকিল হাওলাদার বলেন, অফিসেই সহকর্মীরা মিলে খেলা দেখার আয়োজন করেছি। এরইমধ্যে এক বড় ভাই (জ্যেষ্ঠ সহকর্মী) খেলা দেখার জন্য টেলিভিশনও কিনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেইসঙ্গে আর্জেন্টিনার খেলার দিনগুলোতে বিশেষ খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও করা হবে।
এদিকে খেলার সময়গুলোতে পাড়া-মহল্লায় প্রজেক্টর ভাড়া নেওয়ার জন্য এরইমধ্যে অনেকেই অগ্রিম বুকিং দিয়ে রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, প্রজেক্টর ভাড়ার দিন ও সময়গুলো দেখে মনে হচ্ছে- বরিশালে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সাপোর্টারই বেশি। এর পরের সারিতেই অবস্থান ফ্রান্স, জার্মান, স্পেন ও পর্তুগালের সাপোর্টারদের।
নগরীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যুব সমাজের উদ্যোগে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার পাশাপাশি খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনের কথাও জানা গেছে। আলেকান্দা এলাকার বাসিন্দা আলামিন বলেন, বন্ধু-বান্ধব ও ছোট ভাইদের মধ্যে সবাই আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সাপোর্টার, তাই উভয় দলের খেলার দিনগুলোতে খিচুড়ি খাওয়ার আয়োজন করা হবে। এর আগাম প্রস্তুতি আমরা নিয়েও রেখেছি।
এদিকে বিজয় দিবস ও আসন্ন ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশের পতাকার সঙ্গে বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের পতাকার বিক্রি ভালো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ পতাকা বিক্রেতা আয়নাল হক। তিনি বলেন, সামনে ডিসেম্বর মাস হওয়ায় দেশের পতাকার কদর বাড়বে। আর চাহিদা থাকায় দেশের পতাকার সঙ্গে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকাও বিক্রি করছি।
যদিও এ বছর জার্সি বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের বৃহত্তর মহসিন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, শীত মৌসুমে খেলা হওয়ার কারণে এবার শীতের পোশাকের নিচে জার্সি পরতে হবে। হয়তো এ কারণেই ফুটবলপ্রেমীরা জার্সি তেমন একটা কিনছেন না।
তবে ব্রাজিলের সমর্থক আহমেদ মিনার বলেন, জার্সি গায়ে দিয়ে ঘুরে বেড়ালে কিংবা নিজ দেশে অন্য দেশের পতাকা উড়ালে নিজেকে জাহির করা ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না। আমি একটা দলকে সমর্থন করি এবং সেটা মন থেকেই। প্রত্যাশাও করছি, ব্রাজিল সবকটা খেলায় জিতে এবারেও বিশ্বকাপ ঘরে তুলবে।
ঠিক এমনটাই প্রত্যাশা আর্জেন্টিনার সমর্থক রাসেল হোসেনেরও। এই যুবক বলেন, ফুটবল মানেই আবেগের জায়গা। নিজ দেশ বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও অন্যদের খেলা দেখবো। আর বিশ্বকাপে বরাবরের মতো এবারেও আমি আর্জেন্টিনার সাপোর্টার। সব খেলা না দেখলেও আর্জেন্টিনারগুলো মিস হবে না।
এদিকে বিবির পুকুর পাড়, বঙ্গবন্ধু উদ্যান, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক, ত্রিশ গোডাউনসগহ নগরীর আড্ডাস্থলগুলোতে তরুণ-যুবকদের সঙ্গে তরুণীদের মুখেও আসন্ন বিশ্বকাপ নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা শুনতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জীবন, কালু, সেলিম, রিপনসহ অনেকে।
তবে পৃথক পৃথক দলের সমর্থক হলেও সবাই সৌহার্দ্য বজায় রেখেই কাতারে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করবেন- এমনটাই প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৫, ২০২২
এমএস/এনএস/এসএ