ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সাধারণ আমন ধানের চেয়ে উৎপাদন বেশি 'বেগুনী' ধানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
সাধারণ আমন ধানের চেয়ে উৎপাদন বেশি 'বেগুনী' ধানে

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চর আলী হাসান গ্রামের কৃষক সিরাজ উদ্দিন ৪০ শতাংশ জমিতে চলতি আমন মৌসুমে 'বেগুনী' রঙয়ের ধান চাষ করেছেন। এ ধান অন্যান্য ধানের চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে।

ফলে এ ধানের সুনাম আশপাশের কৃষকেদর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।  

শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) কৃষক সিরাজ তার জমির ধান কাটা শুরু করেছেন। কাটা ধান মাড়াই করে বেশিরভাগ অংশই বীজ হিসেবে রাখবেন। বাকীটা নিজেই চাল করে ভাত রান্না করে খাবেন। তার ইচ্ছে, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ব্যতিক্রমী এ ধানের বীজ সবখানে ছড়িয়ে দিতে।  

কৃষক সিরাজ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বেগুনী রঙয়ের ধান চাষে অন্য আমন জাতের ধানের মতই খরচ হচ্ছে। তবে এ ধানের উৎপাদন অন্য ধানের চেয়ে বেশি হয়েছে। বেগুনী ধান চাষাবাদে অনেক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাই আগামীতেও এ ধানের চাষ করবো এবং বীজ সংগ্রহ করে সেগুলো অন্য কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করবো।  

তিনি বলেন, সখের বশে এ ধানের চাষ করা। ধানের গুণাগুণ নিয়ে আগে তেমন জানতাম না। এখন শুনী এ ধানে নাকি অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। একদিকে পুষ্টি, অন্যদিকে উৎপাদনও ভাল হয়েছে। তবে সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘুর্ণিঝড় চিত্রাংয়ের কবলে পড়ে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ো বাতাসের কারণে কিছু ধান চিটা হয়ে গেছে। তা-না হলে ফলন আরও বেশি হতো।  

কৃষক সিরাজ বলেন, তার জামাতা ধানগুলো সংগ্রহ করেছে তার জমিতে লাগানোর জন্য। কিন্তু পানির অভাবে তিনি সেগুলো লাগাতে পারেননি। তাই সেগুলোর চাষ আমি নিজেই করেছি।  

চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা শ্রাবন মাসে বীজতলায় বীজ বপন করি। একমাস পর চারা রোপন করি। প্রতি গোছায় দুটি-তিনটি চারা লাগিয়েছি। এখন দেখি একেকটি গোছায় ১২-১৪ টি ধান গাছ হয়েছে। এ ধানের শীষ অনেক লম্বা। ধানগুলো মাঝামাঝি আকারের। ধানের পাতা সবুজ রঙয়ের হলেও ধানগুলো বেগুনী রংয়ের। চালও বেগুনী। অন্য ধানের মতোই সার-ওষুধ ব্যবহার করেছি। শ্রমও কম লেগেছে। এতে বাড়তি কোন খরচও হয়নি।  

তিনি আশা করতেছেন, প্রতি শতাংশে এক মন করে ধানের উৎপাদন হবে।

সিরাজ উদ্দিনের জামাতা কৃষক আজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ফেজবুকের মাধ্যমে এ ধানের সন্ধান পাই। এক বন্ধুর সাহায্যে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকা থেকে ৭০০ টাকা কেজি ধরে তিন কেজি ধান আনিয়েছি। সময়মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় নিজের জমি ধান চাষের উপযোগী না হওয়ায় আমার শ্বশুরকে দিয়েছি। তিনি ধানগুলোর চাষ করেছেন। ফলন ভাল হয়েছে। এ ধানের চাষাবাদ আমাদের এলাকার জমির জন্য উপযুক্ত বলে মনে হচ্ছে।  

তিনি জানান, চীন থেকে এ ধানের বীজ বাংলাদেশে আসে। এগুলো পুষ্টিকর ধান হিসেবেই জানেন। তাদের এলাকায় অন্য কোনো কৃষক এ ধানের চাষাবাদ করেনি। তবে আগামীতে চাষাবাদের জন্য অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।  

চর চরুহিতা এলাকায় কৃষক জয়নাল আবেদীন বলেন, ধানগুলো দেখতে সুন্দর। ফলনও ভালো হয়েছে। আগামীতে আমিও পরীক্ষামূলকভাবে এ ধানের চাষ করবো। তাই কৃষক সিরাজের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করবো।  

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. জাকির হোসেন বলেন, বেগুনী রঙয়ের ধান চাষ সম্পর্কে আমাদের কাছে তেমন কোন তথ্য নেই। বিক্ষিপ্তভাবে কোন কোন কৃষক হয়তো চাষাবাদ করতে পারে।  

এ ধান সম্পর্কে জার্নাল অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রির একটি গবেষণাযর বরাত দিয়ে মার্কিন স্বাস্থ্য বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম মেডিকেল নিউজ টুডে জানিয়েছে, বেগুনী রঙের চালের ভাতে হৃদরোগ, ক্যান্সার ঝুঁকি কমাতে পারে এবং মানুষের লিভার সচেতজ রাখে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০২২
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।