ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী-বান্ধব ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
ভবিষ্যতে প্রতিবন্ধী-বান্ধব ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে: পরিকল্পনামন্ত্রী

ঢাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, সাইক্লোন সেন্টারগুলোতে (ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র) প্রতিবন্ধীদের এক্সেস নেই, এটি আজ আমি জানলাম। আমার মাথায় ছিল না।

আগামীতে যে সেন্টারগুলো তৈরি হবে, সেখানে আমি আমাদের ইনফ্রাস্ট্রাকচার (অবকাঠামো) ডিজাইনারদের সঙ্গে কথা বলব। তাদের (প্রতিবন্ধী) উপযোগী করে সেগুলো তৈরি করা হবে।

সোমবার (২৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার অডিটোরিয়ামে ডিজঅ্যাবলড রিহ্যাবিলিটেশন অ্যান্ড রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন (ডিআরআরএ) আয়োজিত ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে সমাজের মূলধারায় একীভূতকরণে করণীয়’ শীর্ষক একটি জাতীয় মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, একসময় তো প্রতিবন্ধীদের লুকিয়ে রাখতেন, বলতেন না মা-বাবা। কষ্ট পেতেন নীরবে। এখন তো এটি কেটে গেছে অনেকটা। অল্পসংখ্যক হয়তো এখনো আছে। নেই, আমি বলব না। তবে পরিবর্তন হয়েছে। এর কারণ শিক্ষার হার বেড়েছে, অর্থনৈতিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সব সমস্যার মূল কারণ আসলে আর্থিক সক্ষমতা।

তিনি বলেন, জনগণের কল্যাণে বিভিন্ন ভাতা চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী, যেগুলো চিন্তা করেনি কেউ। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় ভাতা- এগুলো তিনি ইন্ট্রোডিউস করেছেন। অনেকেই বলেন, তোমরা এত কম টাকা দিয়ে কি সাহায্য করছ মানুষকে, বাড়িয়ে দাও। কিন্তু, যার পকেটে শূন্য টাকা, তার কাছে এই টাকাই কিন্তু বিশাল কিছু। এই টাকাটাই বিশাল একটি অভিঘাত সৃষ্টি করে, এটা আপনি সামনাসামনি না গেলে বুঝবেন না। এটি আসলে প্রধানমন্ত্রীর একটি স্ট্র্যাটেজি। তার কৌশল হলো, যদি বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তাহলে এর ওপর তারা নির্ভর হয়ে পড়বেন। তাহলে উল্টো হবে।  

এম এ মান্নান বলেন, এই মুহূর্তে আমরা একটি আর্থিক চাপে আছি, এটি লুকোছাপার বিষয় নয়।  এ নিয়ে আমাদের অপরাধবোধও নেই। সারা বিশ্বেই এটি হচ্ছে। আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন চাই। পরিবর্তন হচ্ছে, এটা আমাদের চরম শত্রু ও স্বীকার করবে।

তিনি বলেন, এই যে সবার মাথার ওপর বিদ্যুৎ, এর চেয়ে বড় আশীর্বাদ কি হতে পারে। এগুলা খোঁটা দেওয়ার বিষয় নয়। খামোখা খুঁত খোঁজা উচিত নয়। এটি কেন স্বীকার করা হচ্ছে না? এই যে গ্রামে-গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকে ডাক্তারের সেবা পাচ্ছেন আমাদের মা-চাচিরা, বিনামূল্যে সেবা পান, এগুলো নিয়ে কথা বলা উচিত।  

তিনি আরও বলেন, কথায়-কথায় মালয়েশিয়ার উদাহরণ দেওয়া হয়, মাহাথির মোহাম্মদ তো ২২ বছর টানা দেশ চালিয়েছেন। তখন তো বলা হয়, মাহাথির মোহাম্মদ ভালো মানুষ। শেখ হাসিনার যখন ১০ বছর হয়ে যায়, তখন বিরক্ত হয়ে যায়! দুই ধরনের মনোভাব। কাজেই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্থিতিশীলতা জরুরি। যদি তিনি নির্বাচিত কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ থাকে, ফাইন, কমিশন গঠন করুন, কাগজ লিখুন। কিন্তু, সেটি না করে আপনারা লাঠিসোঁটা নিয়ে অমুক তারিখের পর আর থাকতে পারবেন না, আমাদের কথা চলবে এই ধরনের অরাজক, অবৈধ, অন্যায় কথা বলে রাজনীতি করা যায় না। শুধু রাজনীতি নয়, আমাদের অর্থনীতির ক্ষতি হবে, আমাদের জীবনমান আরও নিচে যাবে। এই প্রতিবন্ধী ভাইবোনদের জীবনমান আরও নিচে নামবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, প্রতিবন্ধী মানে প্রতিবন্ধকতা হয়ে যায়। এই জায়গায় প্রথম স্টেপ হলো, মায়ের সেবা করা। মূলত মায়েদের সেবা ঠিকমত না করার ফলেই কিন্তু প্রতিবন্ধী শিশু তৈরি হয়। এজন্য সরকার মাতৃত্বকালীন সময় থেকেই ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত জন্মের পরও অনেক দুর্ঘটনার কারণে এমন শিশুর জন্ম হয়। একইসঙ্গে, ওই পরিবারটি অন্যদের চেয়ে ভিন্ন হয়ে যায়। এই জায়গায় আমাদের কাজ করতে হবে।

এইচএডি অ্যান্ড আই, ডিএএইচডব্লিউ- এর উপদেষ্টা সুশান হফনার বলেন, আমি এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। আমি আশা করি, সবার যৌথ চেষ্টায় এই প্রতিবন্ধীরা এগিয়ে যাবেন।  

জিএলআরএর উপদেষ্টা শিবু জর্জ বলেন, যখনই আমরা কোনো পরিকল্পনা করব, বা এগিয়ে যাওয়ার চিন্তা করব, আমরা আশা করব এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের কথা মাথায় রেখেই আমরা পরিকল্পনা করব।

সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, আসলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় কারো হাত নেই। এদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবন্ধী হওয়ার পরও নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাদের আমি অভিনন্দন জানাই। এক সময় বাবা-মাও প্রতিবন্ধীদের বোঝা মনে করতেন। তাদের বোঝাতে হবে। চলাচল এবং যাতায়াতের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে। বাংলাদেশে বধিরদের স্কুল আছে, সেগুলো কীভাবে চলছে সে বিষয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। বধির বা প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেট বাড়াতে হবে, পাশাপাশি সঠিকভাবে এই বাজেট যাদের পাওয়ার কথা, পাচ্ছেন কি না তদারকি করতে হবে। পাশাপাশি একটি প্রোপার ডাটাবেজ তৈরি করতে হবে, যাতে করে এই কাজটি সহজ হয়।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডিআরআরএর নির্বাহী পরিচালক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমরা প্রতিবন্ধীদের নিয়ে দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে কাজ করছি। বাংলাদেশের ১৭টি জেলায় তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবিকায়ন, প্রশিক্ষণ, একীভূত আর্থিক উন্নয়ন ও দুর্যোগ মোকাবিলাসহ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করে আসছি।

অনুষ্ঠানে ডিআরআরএর সুফলভোগী হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবন্ধীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন, যখন কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে। দুর্যোগ চলাকালে চলাচলে সবচেয়ে বেশি ঝামেলায় পড়েন প্রতিবন্ধীরা। আমরা চাই, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে প্রতিবন্ধীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। একইসঙ্গে ওই সময়ে যাতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নারীদের মধ্যে প্রথম আইনজীবী নূরজাহান বেগম বলেন, চটগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় আমাদের চলাচলে অসুবিধা হয়। আমার চাওয়া থাকবে আমাদের জন্য যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কোর্ট বিল্ডিংয়ে যদি আমাদের মতো শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের ইশারা ভাষা ব্যবহার করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের কার্যক্রম আরও সহজ হয়ে যায়।

আরও বক্তব্য রাখেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য শবনম জাহান শিলা, সাবেক সংসদ সদস্য শিরীন নাঈম পুলক, বিএসএসএমএমইউর অধ্যাপক ডা. জহুরুল হক, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন খান, পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সিইও সৈয়দ শাহরিয়ার আহসান, ডিআরআরএর উপদেষ্টা স্বপ্না রেজা প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, ২৮ নভেম্বর, ২০২২
এমকে/ আরএইচ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।