ঢাকা: বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ও অর্থ আত্মসাতের ৩ মামলায় এক আসামির জামিন শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কেন নীরব, জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বেসরকারি ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার সাবেক ম্যানেজার মোহাম্মদ আলীর জামিনের ওপর শুনানিতে এ প্রশ্ন করেন হাইকোর্ট।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) হাইকোর্টে সংশ্লিষ্ট শুনানিতে জামিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম আবুল হোসেন। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
এ ঘটনায় করা ৫৬ মামলার মধ্যে ১২ মামলার আসামি ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তা মোহম্মদ আলীর জামিন শুনানিতে গত ৮ নভেম্বর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন শাখা থেকে প্রায় দুই হাজার সাতাত্তর কোটি চৌত্রিশ লাখ দুই হাজার নয়শত একানব্বই টাকা যা সুদসহ দুই হাজার পাঁচশত নব্বই কোটি ঊনপঞ্চাশ লাখ একানব্বই হাজার চারশত তেপ্পান্ন টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রাথমিক অনুসন্ধান করে মোট ৫৬টি মামলা দায়ের করে।
এসব মামলায় ৮২ জন ঋণ গ্রহীতা ছাড়াও বেসিক ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কাজী ফকরুল ইসলাম, ডিএমডি ফজলুস সোবহান, সাবেক ডিএমডি শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, জিএম এ. মোনায়েম খান, জিএম মোহাম্মদ আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী চৌধুরীসহ ২৭ কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। বেসিক ব্যাংকের গুলশান শাখা, প্রিন্সিপাল/প্রধান শাখা, দিলকুশা শাখা এবং শান্তিনগর শাখাসহ মোট চারটি শাখার ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়ে গুলশান থানায় ২৩, মতিঝিল থানায় ১২ ও পল্টন থানায় ২১টিসহ মোট ৫৬ টি মামলা করা হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা ২৭, ব্যবসায়ী ৮২ ও বেসরকারি সার্ভেয়ার ১১ জনসহ মোট ১২০ জনকে আসামি করা হয়। এরমধ্যে মোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মামলাগুলো দীর্ঘদিন যাবত তদন্তাধীন আছে। মামলার তদন্ত দীর্ঘায়িত হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো- আত্মসাৎকৃত অর্থ সম্পূর্ণরূপে নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে টাকার অবস্থান গোপন করা হয়েছে। মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের শনাক্তকরণ ও তাদের জবানবন্দী গ্রহণ (১৬১ ধারায়) কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। সকল সাক্ষীর কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বর্ণিত মামলায় আলামত প্রচুর ও ব্যাংকের বিশাল পরিমাণ কাগজপত্র থেকে প্রকৃত সব আলামত শনাক্ত করা সময়সাধ্য। এছাড়া প্রকৃত আসামি শনাক্তের প্রক্রিয়াটিও এ মামলায় বেশ জটিল। এছাড়া, মামলার প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহের জন্য মালয়েশিয়ায় এমএলএআর করা হয়েছে। সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও আলামত এখনও পাওয়া যায়নি।
মামলাগুলোর আগের তদন্তকারী কর্মকর্তারা বদলিসূত্রে অন্যত্র চলে যাওয়ায় একাধিকবার তদন্তকারী কর্মকর্তাও পরিবর্তন করা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্তকাজ এগিয়ে চলছে। আসামি ও আলামত শনাক্ত করা, সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণ ও এমএলএআর’র পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশ থেকে মামলার প্রয়োজনীয় আলামত পাওয়া সাপেক্ষে এবং প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া শেষ করে যথাসম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে সকল মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ৫৬ মামলায় আত্মসাৎকৃত অর্থের মধ্যে ১১৫ দশমিক ৭৮ কোটি টাকা উদ্ধার বা ব্যাংকে জমা করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত প্রশ্ন করেন, সাত বছরেও তদন্ত শেষ হলো না? বলা হচ্ছে, প্রকৃত আসামিদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল। সব আলামত শনাক্ত করা সময়সাধ্য ও সাক্ষীদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। কথাগুলো আপত্তিকর। দুদক যদি এসব কথা বলে, তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? ড্রামা দেখার মতো। আমরা সবাই দেখছি ড্রামা হয়ে যাচ্ছে। কোটি কোটি টাকা নিয়ে যাবে, দুদক চেয়ে চেয়ে দেখবে?
এ সময় তদন্ত শেষ করতে দেরি হচ্ছে কেন জানতে চান আদালত। দুদককে কাজ করতে হবে বলেও উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
ইএস/এমজে