ঢাকা, সোমবার, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০২ জুন ২০২৫, ০৫ জিলহজ ১৪৪৬

মুক্তমত

সংস্কারের নামে বিরাজনীতিকরণের পদধ্বনি

মাহমুদ হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৫১, মে ৩১, ২০২৫
সংস্কারের নামে বিরাজনীতিকরণের পদধ্বনি প্রতীকী ছবি

দেশে নির্বাচন, রোডম্যাপ বা সংস্কার অথবা গণতন্ত্র উত্তরণে কোনো কিছুই হচ্ছে না। অনেকটা এমন যে ‘আছি, চলুক না।

নির্বাচনের দিকে না তাকালেই হলো’। বন্দর, করিডোর অথবা স্টার লিংক কেনাবেচা চুক্তি নিয়েই পার হয়ে যাক সময়টুকু। গত বছর জুলাই-আগস্টে দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিষ্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা যেমনটা আশা করা হয়েছিল, গত দশ মাসে তার ধারে-কাছে সরকার যেতে পেরেছে কি না, তা নিয়ে রয়েছে বিস্তর বির্তক। বিগত দশ মাসে সরকারের কর্মকাণ্ডের দৃশ্যমান বিষয়গুলো অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে। দেড় হাজার ছাত্র-জনতার রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে এ সরকার। অথচ সেই গণহত্যাকারী হাসিনা গংদের বিচার চলছে শম্বুক গতিতে। অন্যদিকে কিছু অদক্ষতা ও নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে পুরো সরকারের ওপর থেকে দিন দিন মানুষের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। ফ্যাসিস্ট বাহিনীর বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও গড়িমসি লক্ষ্য করছে সচেতন মহল। ফলে অবাধে অস্ত্র ব্যবহারে চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই এবং প্রকাশ্যে খুন ও রাহাজানির ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি ‘মব জাস্টিস’র মতো ঘটনা তো অহরহই ঘটছে। সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নে ধীরগতি এবং আমলাতন্ত্রিক মারপ্যাঁচে অনেক কিছুই এখন লেজে-গোবরে অবস্থা। প্রশ্ন উঠেছে সরকার কোন সুতোর টানে বার বার হোঁচট খাচ্ছে। কারা সরকার চালাচ্ছে। কেন বার বার ঠুনকো কারণে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা, শাহবাগ ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানুষ জড়ো হয়। কেন তা দামানো যাচ্ছে না। সরকার কেন আগাম সংবাদ পাচ্ছে না বা পেয়েও উদাসীনতার ভান করছে— এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে। অন্যদিকে, নতুন করে দেশে ভয়াবহ জ্বালানি সংকটে নাভিশ্বাস উঠেছে জনগণের। খবরে প্রকাশ, দেশীয় গ্যাস উৎপাদন হ্রাস, ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি ও অব্যবস্থাপনার কারণে শিল্প, কৃষি ও গৃহস্থালি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনও গ্যাস ঘাটতিতে ব্যাহত হচ্ছে, ফলে লোডশেডিং বেড়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষও চাপে পড়েছে। এ দায়ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিতে হচ্ছে।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। দেশকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে প্রথম ও একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন। যা গত ১৭ বছর ধরে তা বাংলাদেশে অনুপস্থিত। ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে যে লাখ লাখ তরুণ-যুবক নতুন ভোটার হয়েছেন তারা কেউই এখনো তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি। তারাও মুখিয়ে আছে একটি নির্বাচনের জন্য। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেওয়ার জন্য। অথচ দশ মাসেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। অনেকেরই মনে থাকার কথা নানা ধরনের সংস্কার আর রাজনীতির গুণগতমান পরিবর্তনের জিকির তুলে এক-এগারোর সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বিশেষ আদালত বানিয়ে সাজা নিশ্চিত করা, শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধরে এনে শায়েস্তা করার নামে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে নাজুক করে তোলাসহ নানা কিছু শুরু করেছিল তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত রাজনীতিবিদদের কাছে মাথা নত করে দুই বছর শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল সেনা সমর্থিত সেই সরকার। এর আগে পরের ঘটনা সবার জানা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও সংস্কার নিয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বিভিন্ন কমিশন গঠন করেছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কমিশন তাদের রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ফিরিয়ে নেয়ার মূল বা প্রধানতম কাজ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সুষ্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না বা দৃশ্যমান কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। জাপান সফরে গিয়েও প্রধান উপদেষ্টা আগামী বছর জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জানিয়েছেন। অথচ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জোর দাবি করছে বিগত ১৬ বছর ধরে রাজপথে আন্দোলনকারী রাজনৈতিক দল ও শক্তিসমূহ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি বলেছে, ‘কোনো রোডম্যাপ নয়, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ দেওয়ার সময় এসে গেছে’। একইদিন আন্দোলন সংগ্রামের মূল রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জোর দিয়ে বলেছেন, ‘চলতি বছরে ডিসেম্বরের মধ্যেই হতে হবে জাতীয় নির্বাচন’। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নির্বাচনের তারিখ নিয়ে নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও বিএনপি মুখোমুখি।

দশ মাস হতে চলছে বর্তমান সরকারের বয়স। কোনো বিষয়েই সরকারের কোনো ক্যারিশমা চোখে পড়ছে না। কাকতালীয় ও অনেকটা অ্যারেঞ্জ আন্দোলনের ফসল হিসেবে তড়িঘড়ি আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা ও একটি বিনিয়োগ সম্মেলন ও সাম্প্রতিক জাপান সফর ছাড়া উচ্চকণ্ঠে বলার মতো সরকারের তেমন অর্জন নেই বলেও মনে করছে দেশবাসী। তদুপরি ’মানবিক করিডোর’ দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নানা আলোচনা সর্বোপরি ভারতে পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কূটনৈতিক ব্যর্থতা নানাভাবে ভোগাচ্ছে সরকারকে। তবে প্রধান উপদেষ্টার ব্যক্তিগত ক্যারিশমায় বিদেশ সফরকে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড হিসেবেই ধরে নিচ্ছে অনেকে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে এবং বাইরে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। সরকার জনগণের ভাষা-আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেনে তিনি। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতির অযথা ঘোলাটে না করে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করুন’। জনগণের ভোটে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠা না করা গেলে পতিত স্বৈরাচারকে মোকাবিলা করা সহজ হবে না। একটি অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষে পতিত স্বৈরাচারকে মোকাবিলা যে কতটা কঠিন, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল মানুষগুলো।

সরকারই বরং জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণাকে সুকৌশলে ‘অল্প সংস্কার, বেশি সংস্কার’ এরকম একটি অভিনব শর্তের বেড়াজালে বলা যায় আটকে দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ অন্ধকারে থাকায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাড়ছে অস্থিরতা। প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে  কোনো না কোনো দাবি নিয়ে মানুষ রাস্তায় নামছে। মাত্র ১০ মাসের মাথায় সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কিন্তু এক ধরনের অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকার জনগণের ভাষা-আশা-আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হলে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তেই থাকবে। রাজনীতিবিদরা আশংকা করছেন এ অবস্থা চলতে থাকলে এই সরকারের পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। সুতরাং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের সক্ষমতা সম্পর্কে আরও সতর্ক হতে হবে এখনই।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মানুষ আর নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নানা আশার বাণী বা স্বপ্ন দেখানোর ধূম্রজালে আর থাকতে চাচ্ছে না। কেননা ১/১১-র সরকারও সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছিল এবং ওই সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা শেষ পর্যন্ত কেউই আর দেশে থাকতে পারেননি। জীবনের শেষ দিনগুলো তাদের কাটাতে হচ্ছে বিদেশের মাটিতে। অথচ সত্যিই তারা যদি দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে পারতেন, সত্যিই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে পারতেন, ব্যবসায়ীদের ‘সাইজ করতে’ গিয়ে শেষ পর্যন্ত অর্থনীতি বিপন্ন করে না তুলতেন; ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে গণবিরোধী অবস্থান না নিতেন— তাহলে ইতিহাসে অত্যন্ত সম্মানজনক আসনে থাকতে পারতেন।

কুখ্যাত মাইনাস টু ফর্মুলার প্রবক্তা ছিল দেশের দুটো পত্রিকা ও বিদেশি মদদপুষ্ট গুটিকয়েক ‘সুশীল সমাজ’র প্রতিনিধি ও প্রতিবেশী একটি দেশ। তারা বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়নি। তাই নানা কূটকৌশলে ১/১১ সৃষ্টি করে বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে তছনছ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ক্ষমতার মসনদে পাকাপোক্ত করে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে। প্রায় দুই দশক পর সেই অপশক্তি আবারো মাঠে নেমেছে। তারা এখন মাইনাস  টু’র স্থলে ‘মাইনাস পলিটিক্স’ নিয়ে কাজ করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগে সংস্কার নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য ছিল না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পরই শুরু হয় সংস্কারের জিকির। এই জিকিরে শামিল হয়েছেন ধর্মের নামে রাজনীতি করা একটি বড় দল। সাথে আছে দেশ-বিদেশে অবস্থানকারী ডান-বামের কয়েকজন ইউটিউবার ও একটি চরমপন্থী গোষ্ঠী। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন হেফাজতে ইসলামের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক একজন সাংবাদিক। যারা কিছু হলেই গরু জবাই করে উৎসব পালনের নামে তাণ্ডব করে। পাকিস্তানপন্থী স্লোগান দেয়। অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সোনালি ফসল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরুণদের একাংশের নতুন দলও নির্বাচনকে প্রাধান্য দেওয়ার জায়গায় রাখতে চাচ্ছে না। তারা সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি করছে। তারা সংবিধান সংশোধনে রাজি নয়। নির্বাচন বিরোধিতাকারী আরেকটি অংশ বিদেশে বসে বিএনপি নেতাদের কল্পিত চরিত্রহননের অপচেষ্টায় লিপ্ত। বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট বিরোধী এই শক্তির মাঝে জামায়াত, এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, ইউটিউবার পিনাকী ভট্টাচার্য, ইলিয়াস হোসেন, প্রথম আলো, ডেইলি স্টার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে। খুব আশ্চর্যের বিষয় ফ্যাসিস্ট বিরোধী এই সব ব্যক্তি, দল ও প্রতিষ্ঠান এক সুরে কথা বলা অনেকের কাছেই অভিনব মনে হচ্ছে। তবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন হলে তা যে সম্ভব তারও প্রমাণ এটা। যেন যেকোনো মূল্যেই হোক নানা ছুতোয় নির্বাচন পিছিয়ে দিয়ে বিএনপিকে বাদ দিয়ে নতুন কোনো শক্তির উত্থান ঘটানো।

প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস অনুযায়ী ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ হবে প্রায় ১৭ মাস। আর জুনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সে সময় গড়াবে ২৩ মাস। এ চেষ্টার নেপথ্যের কারণ খুঁজতে মহাকাশ বিজ্ঞান চর্চার প্রয়োজন নেই। দুয়ে দুয়ে চার মেলালেই জনগণ সব বুঝতে পারছে। বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেব হোক বা ভোটের হিসেবই হোক বাংলাদেশের পরবর্তী ক্ষমতায় প্রধানত দাবিদার বিএনপি। সকল জরিপ ও জনগণ তাই মনে করে। সংস্কারের নামে কালক্ষেপণ করে শুধুমাত্র বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই সব ব্যক্তি ও সংগঠন।

প্রশ্ন হলো, সংস্কার না হলে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে কেন? যদি ডিসেম্বরেও জাতীয় নির্বাচন হয়, তাহলেও অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ হবে ১৭ মাস। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য ১৭ মাস কি কম সময়? যদি এই সময়ের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হয়, তাহলে এমন একটি অনির্বাচিত ও অরাজনৈতিক সরকার কেন এতটা সময় ক্ষমতায় থাকবে— যার আন্তরিকতা নিয়ে খুব একটা প্রশ্ন না থাকলেও নানা ইস্যুতে অদক্ষতার প্রমাণের পাশাপাশি জবাবদিহিতাহীন প্রস্থানের সুযোগ থাকবে।

যদি সংস্কার না হয় এবং শুধু নির্বাচনই যদি এই সরকারের ম্যান্ডেট হয়, তাহলে ১৬ মাস কেন, ছয় মাসও লাগার কথা নয়। কেননা অতীতের তত্ত্বাবধায়ক সরকারগুলো তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়েছে, ২০০৭ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদে।

তার মানে, সংস্কার ও পরিবর্তনের রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকার পরও সেটি নাও হতে পারে শুধু ইনটেনশন অথবা সদিচ্ছার কারণে। ফলে জনমনে এই প্রশ্নও আছে, এবারও যদি কাঙ্ক্ষিত সংস্কার না হয়, অন্তত যেসব জায়গায় সত্যিই বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন— যেমন: সংবিধানের যেসব অনুচ্ছেদ প্রধানমন্ত্রীকে এককভাবে এমনভাবে ক্ষমতাবান করে দিয়েছে, যার ফলে তিনি যা খুশি করতে পারেন কিংবা রাষ্ট্রপতি ও সংসদকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন, যে অনুচ্ছেদ সংসদ সদস্যদের বাকস্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রিত করে, যে অনুচ্ছেগুলো সংবিধানের মৌলিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যে অনুচ্ছেদ নাগরিকের পরিচয় ও আত্মপরিচয় বিনির্মাণের পথে নানাবিধ বিতর্ক উসকে দেয়, যে অনুচ্ছেদ নাগরিকের মৌলিক অধিকারগুলো সুরক্ষা হওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে— সেগুলোয় যদি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন তথা সংশোধন আনার বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা না যায় বা ঐকমত্য হলেও শেষ পর্যন্ত যদি বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে ‘সংস্কার সংস্কার’ বলে এত চিৎকার করে কী লাভ হবে? তাই অতিদ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বিস্তারিত বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটি ঐকমত্য সৃষ্টি করা প্রয়োজন সংস্কার, নির্বাচন ও পরবর্তী সংসদ নিয়ে।

একটি অনির্বাচিত সরকার শুধু সংস্কারের অজুহাতে নির্বাচন না দিয়ে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে, সেই সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারাবে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন। অন্যদিকে, দেশের ভেতরেও এই সরকারের প্রধানতম অংশীজন হিসেবে রাজনৈতিক দল, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন পক্ষ রয়েছে। সেখানে বিএনপিসহ ফ্যাসিস্ট বিরোধী বিভিন্ন দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছে। সম্প্রতি সেনা প্রধানও এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘায়িত হলে অংশীজনদের সঙ্গেও সরকারের দূরত্ব আরও বাড়লে অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে দেশের রাজনীতি। মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই বিপ্লবের প্রিয় বাংলাদেশ চলে যাবে বিরাজনীতিকরণের অতল গহ্বরে, যা কারোই কাম্য হতে পারে না।

মাহমুদ হাসান, চিফ এডিটর, Hellobangla.news

এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।