ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

মুক্তমত

মধ্যস্বত্বভোগীরা দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনার সুযোগ নিচ্ছে

ড. জাহাঙ্গীর আলম খান, সৌজন্যে: কালের কণ্ঠ |
আপডেট: ০৮:৫২, অক্টোবর ১০, ২০২৫
মধ্যস্বত্বভোগীরা দুর্বল বাজার ব্যবস্থাপনার সুযোগ নিচ্ছে ড. জাহাঙ্গীর আলম খান

সাম্প্রতিক সময়ে খুচরা বাজারে সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের বিপণন ব্যবস্থায় প্রধান সমস্যা হলো, কৃষক তাঁর ন্যায্য দাম পান না এবং ভোক্তাদের অতিরিক্ত দাম দিয়ে ভোগ্যপণ্য কিনতে হয়।

বর্তমান বাজারব্যবস্থার কারণে কৃষক ও ভোক্তা উভয়েই ঠকছেন, লাভবান হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। এখন বাজারব্যবস্থাকে যদি কৃষকের অনুকূলে নেওয়া যায়, তাহলে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই লাভবান হবেন।

সবজির এই দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি স্তরভিত্তিক সমস্যা কাজ করছে। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূলত পাঁচটি মুখ্য কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সরকারকে বেশ কিছু উদ্যোগও নিতে হবে। যেমন—

১. হাতবদল ও দীর্ঘ বাজার শৃঙ্খল : উৎপাদিত স্থান থেকে ঢাকায় আসা এবং পরে পাইকার, কারওয়ান বাজার এবং সেখান থেকে রিটেইলারদের কাছে সবজি পৌঁছানো পর্যন্ত অনেক হাতবদল হয়। এই প্রতিটি স্তরে মার্কেটিং কস্ট (বাজারজাত খরচ) এবং মার্কেটিং মার্জিন (মুনাফা) যোগ করা হয়।

এতে তিন-চারটা স্তরে হাতবদল হয়ে যখন এটি খুচরা পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন এর দাম অনেক বেড়ে যায়।

২. অমৌসুম ও কম উৎপাদন : বর্তমানে শীতকালীন সবজির মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। এখনো গ্রীষ্মকালীন মৌসুম চলায় সবজির উৎপাদন তত বেশি হয়নি। উৎপাদন কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এই সময় সবজির কিছুটা সংকট থাকে এবং দাম বেশি থাকে।

৩. বৃষ্টিপাতজনিত ক্ষতি : এ বছর প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। এই প্রবল বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় সবজি অনেক নষ্ট হয়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির জন্য সবজি পরিবহন এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে আসতেও অসুবিধা হচ্ছে। এটিও সবজির মূল্যবৃদ্ধির আরেকটি কারণ।

৪. অপচয়জনিত খরচ : যেহেতু সরবরাহ চেইনটি খুব লম্বা, তাই নর্থ বেঙ্গল বা কুমিল্লার মতো দূরবর্তী এলাকা থেকে সবজি আসতেও দেরি হয়।

এই দীর্ঘ সময়ের কারণে সবজি রাজধানীর বাজারে বিক্রি হতে হতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অপচয় হয়। এই অপচয়ের খরচটি তখন সবজির মূল দামের সঙ্গে মিশে যায়, তখন দাম অনেক বেড়ে যায়।

৫. চাঁদাবাজি : হাতবদল, অমৌসুম ও বৃষ্টির কারণের পাশাপাশি চাঁদাবাজিকেও সবজির মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে সবজির দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—

১. বাজার শৃঙ্খল ছোট করা (ফার্মারস মার্কেট) : সরকারকে মার্কেটিং চেইন ছোট করার উদ্যোগ নিতে হবে। এই লক্ষ্যে ফার্মারস মার্কেট বা কৃষকের বাজার চালু করার চেষ্টা হচ্ছে, যেখানে কৃষকরা সরাসরি সবজি সরবরাহ করবে এবং রিটেইলাররা সরাসরি কিনতে পারবেন। এটি কার্যকর হলে হাতবদল কমবে, মার্কেটিং কস্ট ও মার্জিন কমে যাবে এবং সবজির দামও অপেক্ষাকৃতভাবে কমে আসবে।

২. নিয়মিত বাজার মনিটরিং : বাজার মনিটরিং দুর্বলতার কারণেও সবজির দাম বেড়ে যায়। যদি নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয়, তাহলে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা মাত্রাতিরিক্ত লাভ করতে পারবেন না।

৩. উৎপাদন বৃদ্ধি : বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতির কারণেও পণ্যের দাম বেড়ে যায়। তাই সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে উৎপাদন বাড়ানোয় জোর দিতে হবে। উৎপাদন না বাড়লে কোনো সময়েই সরবরাহ বাড়বে না।

লেখক : কৃষি অর্থনীতিবিদ
অনুলিখন : সজীব আহমেদ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।