ঢাকা, রবিবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৩ জুলাই ২০২৫, ১৭ মহররম ১৪৪৭

মুক্তমত

অগণতান্ত্রিক অপশক্তির প্রধান টার্গেট তারেক রহমান

মোহাম্মদ আল আমিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫০, জুলাই ১৩, ২০২৫
অগণতান্ত্রিক অপশক্তির প্রধান টার্গেট তারেক রহমান

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে দেশকে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া থামাতে দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারী বিশেষ করে অগণতান্ত্রিক অপশক্তিগুলো এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে প্রধান টার্গেট বানিয়েছে।  

পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, দেশে যখনই কোনো ইস্যুতে পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ছায়াতলে থাকা চক্রান্তকারীরা, যারা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কায় রয়েছে, তারা তারেক রহমানের জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্যবস্তু করে তোলে।

অনেকেই মনে করছেন, ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ স্লোগানে দেশ পুনর্গঠনের তারেক রহমানের স্বপ্নই তার ও তার দলের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অন্যতম প্রধান কারণ। হীনমন্যতা ও ঈর্ষা থেকে কিছু দল ও গোষ্ঠী তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা এখন তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা না থাকলেও তাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।  

একই সঙ্গে চক্রান্তকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে নানা ইস্যু সৃষ্টি করে তাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দেখা গেছে, মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইটি ইসলামপন্থি দল ও একটি নতুন রাজনৈতিক দল যেভাবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে, তা সুপরিকল্পিত বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অথচ বিএনপি সংশ্লিষ্ট পাঁচজন নেতাকর্মীকে তদন্ত ছাড়াই আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে কঠোর সাংগঠনিক শৃঙ্খলার নজির স্থাপন করেছে।

স্বল্পসংখ্যক এই রাজনৈতিক দল রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে, এমনকি কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মিছিল বের করে তারেক রহমানের নাম উল্লেখ করে অশোভন স্লোগান দেয়, যা রাজনৈতিক ও সামাজিক শিষ্টাচারের বাইরে। এতে স্পষ্ট হয়, এসব প্রতিবাদ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এছাড়াও এই দুষ্টচক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে অপপ্রচার ছড়িয়ে তারেক রহমানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করছে, যিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করে দল পরিচালনা করছেন।

তারেক রহমান দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য এবং গণতন্ত্রের জন্য তার ভূমিকায় বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। গত প্রায় ১৫ বছর ধরে তিনি ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণ-অভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন, যার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তাদের নেতা, স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারান।

তার কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, তিনি দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র নিয়ে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি সব সময় দলের মধ্যে যেকোনো অনিয়মের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থাকেন এবং দলের উচ্ছৃঙ্খল সদস্যদের শক্ত হাতে দমন করেন।

অভ্যুত্থানের পরবর্তী অস্থির সময়ে তারেক রহমানের দৃঢ় নির্দেশনায় বিএনপির নেতাকর্মীরা যেকোনো বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সচেষ্ট ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি দলের নেতাকর্মীদের অরাজকতা ও সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে সতর্ক করেন। এছাড়াও তারেক রহমান সব সময় দলের যেকোনো নেতাকর্মীর অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কোনো তথ্য পাওয়ার সাথে সাথেই দ্রুত সাংগঠনিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

সম্প্রতি পটুয়াখালী জেলা বিএনপির ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান বলেন, আপনারা এমন কিছু করবেন না, যাতে জনগণ আমাদেরকে ঘৃণা করে। কারণ আপনারা যা করবেন, তার নেতিবাচক প্রভাব দলের ওপরও পড়বে। এজন্য আমি বাংলাদেশের ৬৪ জেলার প্রতিটি নেতাকর্মীকে অনুরোধ করছি— এমন কিছু করবেন না, যাতে জনরোষ তৈরি হয়।

তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের ভালো কাজ ও ইতিবাচক আচরণের মাধ্যমে জনআস্থা অর্জন করতে হবে এবং সহনশীলতা ও ভিন্নমতকে সম্মান করার চর্চা করতে হবে। প্রশাসন যদি সহযোগিতা চায়, তবে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করতে হবে।

তারেক রহমান সব সময় দলের নেতাকর্মীদের যেকোনো দুর্নীতির প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ দেখিয়ে সাংগঠনিক ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকেন। ইতোমধ্যে বিএনপি কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে শোকজ করেছে, এক হাজারের বেশি নেতাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা করেছে।

দুর্ভাগ্যবশত, বিএনপি যেখানে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং অপরাধীরা প্রায় অবাধে অপরাধ করে যাচ্ছে। বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বীরা তারেক রহমানের প্রতি অসন্তুষ্ট, কারণ তিনি গণতান্ত্রিক ধারায় একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চাচ্ছেন— যার জন্য দেশের জনগণ ও অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সংগ্রাম করে আসছে।

অপর দিকে কয়েকটি দল, বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বলছে— সংস্কার ও জুলাই সনদ ছাড়া তারা কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। যদিও রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ আছে।

এ দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করছে, যা স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করবে। অথচ বিএনপি বলছে, একটি নির্বাচিত সংসদ সংস্কার বাস্তবায়ন করবে এবং পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই চক্রান্তে পরাজিত ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর সহযোগীরাও সক্রিয় রয়েছে।

এর আগে, ১/১১ পরিবর্তনের সময় তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা দেখে অগণতান্ত্রিক শক্তিগুলো তাকে নানা ধরনের মিথ্যা অপপ্রচারে জর্জরিত করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং সব মামলায় খালাস পান। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি।

এখন তার জনপ্রিয়তাই যেন তার প্রধান শত্রুতে পরিণত হয়েছে। চক্রান্তকারীরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ভোটের মাধ্যমে তাকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে তারা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।  

বর্তমান এই প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে আরও সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে, কারণ তারেক রহমান শুধু দলের নেতা নন, বরং দেশের একটি মূল্যবান সম্পদ এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য অপরিহার্য একজন নেতৃত্ব।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।