ঢাকা, শনিবার, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৯ জুলাই ২০২৫, ২৩ মহররম ১৪৪৭

মুক্তমত

স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে অনন্য তারেক রহমান

শাহেদ শফিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১৫, জুলাই ১৯, ২০২৫
স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে অনন্য তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

রাজনীতি কোনো ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। এই প্রমাণ যুগে যুগে বহু নেতাই দিয়েছেন।

গণতন্ত্রবিনাশী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে ইতিহাসে বহু জনপ্রিয় নেতা হয়েছেন নির্বাসিত, কিন্তু তাঁদের অনেকেই নির্বাসনের কারণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। তবে এর ব্যতিক্রম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

তিনি দীর্ঘদিন লন্ডনে নির্বাসনে থেকেও দল পরিচালনায় আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তিনির্ভর কৌশল অবলম্বন করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও ভার্চুয়াল নেতৃত্ব আজ রাজনীতিতে নতুন এক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।

ইতিহাসে দেখা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলা, ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমেনি, স্পেনের জোসে মনুয়েল গার্সিয়া বা তিব্বতের দালাই লামা এমন বহু নেতা স্বদেশে ফিরে পরিবর্তনের পথ তৈরি করেছেন বা প্রবাসে থেকেই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দীর্ঘ সময় বিদেশে থেকেও দেশ ও জনগণের মুক্তির স্বপ্ন ত্যাগ করেননি।

তারেক রহমানও সেই ধারার একজন আধুনিক প্রতিনিধি। হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নের কারণে বাংলাদেশে ফিরতে না পারলেও লন্ডন থেকে দলকে সুসংগঠিত রাখেন, ভার্চুয়াল সভা, সাংগঠনিক দিকনির্দেশনা ও রাজনৈতিক বার্তা প্রদান করেন।

বিশেষ করে বিএনপির ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণায় তাঁর নেতৃত্ব ও চিন্তাধারার প্রতিফলন দেখা যায়। যেখানে গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও সুশাসনের দিকনির্দেশনা তুলে ধরা হয়েছে।

ডিজিটাল যোগাযোগ ও আন্তর্জাতিক সংযোগের মাধ্যমে তিনি বিএনপিকে আধুনিক একটি রাজনৈতিক দলে রূপান্তর করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে দল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবি জোরালোভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে।

প্রবাসে থেকেও তিনি কখনো দলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে দেননি। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার পাশাপাশি সরকারের দুর্নীতি, দমননীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে বক্তব্য রেখেছেন, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাব ফেলেছে। এটা বলা বাহুল্য, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন যখন কঠিন হয়ে ওঠে, তখন নেতৃত্বের ধরন ও কৌশলই হয়ে ওঠে আন্দোলনের প্রাণ।

তারেক রহমানের প্রবাসে থেকেও বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।

তারেক রহমান দেখিয়েছেন, শারীরিকভাবে দেশে না থেকেও একটি রাজনৈতিক দলকে কৌশলগতভাবে নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। তিনি প্রমাণ করেছেন সংগঠনের সঙ্গে সুসংবদ্ধ যোগাযোগ, রাজনৈতিক বার্তার স্পষ্টতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা থাকলে প্রবাস থেকেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা যায়। তিনি প্রমাণ করেছেন আদর্শ, প্রযুক্তি ও নেতৃত্বের ভারসাম্য থাকলে দূরত্ব কখনো সংগ্রামের বাধা হতে পারে না।

তাঁর ডাকে মানুষ আবার রাজপথে নামে এবং গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যা ইতিহাসে আজ ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে চিহ্নিত। এই বিপ্লবে তারেক রহমান শুধু রাজনৈতিক বার্তাদানেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্দোলনের ধারাকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করেন।

তাঁর নেতৃত্বের মাধ্যমে আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো নেতৃত্ব মানে শুধু উপস্থিতি নয়, বরং সঠিক সময়, সঠিক বার্তা ও কার্যকর সংযোগের মাধ্যমে জনগণের শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। তারেক রহমানের ‘জুলাই বিপ্লব’ কৌশল প্রমাণ করে, স্বৈরাচার যতই শক্তিশালী হোক, সংগঠিত জনশক্তি ও দূরদর্শী নেতৃত্বই তাকে নতজানু করতে পারে।

স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রামে অনন্য তারেক রহমান। তাঁর প্রবাসজীবন শুধু আত্মরক্ষার উপায় নয়, বরং তা এক

রূপান্তরমূলক রাজনৈতিক সংগ্রামে রূপ নিয়েছে। দেশের মানুষ এখন তাঁকে একজন প্রতিশ্রুতিশীল ও পরিণত নেতা হিসেবে দেখছে, যাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পূর্ণ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা সম্ভব।

লেখক: সাংবাদিক, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

সৌজন্য: কালের কণ্ঠ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।