নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা কখনো কখনো বিএনপির মুখে শোনা যেত, সাধারণ মানুষের মাঝে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যেত; আর এখন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নিজেই নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের অনেকেই মনে করেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না।
তবে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের ধারাবাহিকতা যদি পর্যালোচনা করা হয়, তাহলে দেখা যায় নির্বাচন প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এখনকার অবস্থান সম্পূর্ণ পরিষ্কার। এবং যত দ্রুত নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়, সেটাই মঙ্গল বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সমস্যা হলো সরাসরি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে না থাকলেও ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর দুই-একটি রাজনৈতিক দল তাদের মতাদর্শের লোকজনকে বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসাতে পেরেছেন। ফলে তারা মনে করছেন নির্বাচন দেরিতে হলে পরোক্ষভাবে ক্ষমতার প্রভাব টিকিয়ে রাখা এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক স্থাপনে অধিক সময় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
যাই হোক, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা ব্যক্ত করলেও আশার কথা হলো তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে এটাও বলেছেন, বাধাগ্রস্ত করার যে চেষ্টাই হোক না কেন, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সুস্পষ্টভাবেই এই নির্বাচনে অন্য দেশের থাবা মারার কোনো সুযোগ যেন সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা চেয়েছেন। গত ২ আগস্ট রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও একটি সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ আহ্বান জানান।
নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে গেল বছরের ১৯ নভেম্বর ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে বলেছিলেন—কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে। এবং এর এক বছর বাদেই বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে সেই বক্তব্যের পুনর্ব্যক্ত করতে গিয়ে তারেক রহমান বলেন, নির্বাচন ঘিরে ‘ষড়যন্ত্রের জাল’ বোনা হচ্ছে।
গেল দুই-তিন সপ্তাহ ধরে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে বিষয়টি অধিক মাত্রায় উঠে এলেও আরও দুই মাস আগে অর্থাৎ ৫ জুলাই যশোরে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল আয়োজিত এক নারী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক নার্গিস বেগম বলেছিলেন, নির্বাচন নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এটিকে সুষ্ঠু নির্বাচন ভণ্ডুল করার নীলনকশা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। পক্ষান্তরে তিনি আবার রোডম্যাপকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে মন্তব্য করেন। আবার অধ্যাপক ইউনূস যখন আগামী বছরের জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছিলেন; তখন ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন জামায়েতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। কাকতালীয়ভাবে হলেও জামায়াতে ইসলামীর আমিরের আহ্বান অনুযায়ী যেন নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। অথচ তারা এখন বলছে তাড়াহুড়ো না করে সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দেওয়া উচিত। তবে মজার ব্যাপার হলো, সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার ক্ষেত্রে অন্যান্য দলের তুলনায় তারা অনেকখানি এগিয়ে। প্রায় দুই মাস আগে পত্রিকার খবরে বলা হয়েছিল, বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বরিশাল বিভাগের ২১টি সংসদীয় আসনের দায়িত্বশীলদের সমাবেশে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১টি আসনে জামায়াত মনোনীত সম্ভাব্য প্রার্থীদের পরিচয় তুলে ধরা হয়। অবশ্য ওই সময়ে পিআর পদ্ধতি নিয়ে কোনো আলোচনা ছিল না; যেটা এখন প্রতি মুহূর্তে তাদের কথাবার্তায় উঠে আসছে।
আবার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা নাসীরউদ্দিন পাটওয়ারী ইতিপূর্বে তার এক বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রোডম্যাপ ঘোষণা প্রসঙ্গে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছিলেন, ‘জুলাই সনদ প্রকাশের আগে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া জনগণের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের সামিল’।
এই যে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি এবং কিছু ইসলামী ধারার রাজনৈতিক দল নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষ করে রোডম্যাপ ঘোষণাকে সহজভাবে নিতে পারেনি, সেটি তাদের নানা বক্তব্য ও আচরণে ফুটে উঠেছে।
কিন্তু আমরা যদি নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারি বা নির্বাচন পেছানোর দাবি তুলে রাজপথ অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করি, এতে করে লাভবান হবে গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এবং সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে সহিংসতা। কেননা গেল এক বছরে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যতগুলো অডিও কল ফাঁস হয়েছে, কোনটিতে অনুশোচনা প্রকাশ তো দূরের কথা—প্রতিটি বক্তব্যে প্রতিহিংসার তীব্র ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামীপন্থীদের প্রতিশোধ পরায়ণ মনোবৃত্তির প্রকাশ ঘটাতে দেখা যায় এবং দলীয় লোকজনের কেউ কেউ স্বপ্ন দেখেন ‘আপা’ ফিরে আসবেন এবং ক্ষমতা গ্ৰহণ করবেন!
এটি অলীক কল্পনা। আবার পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথাবার্তা একেবারেই পাগলের প্রলাপ বলে উড়িয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। কেননা দীর্ঘ ১৭ বছরের শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে যেভাবে নিজেদের মতাদর্শের লোকজনের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে; বিশেষ করে পুলিশ ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার ক্ষেত্রে, তা অবিশ্বাস্য।
সরকারি চাকরির প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ উয়িং ছিল; যাদের কাজ হতো প্রার্থীর সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক আইডিতে ঢুকে তার রাজনৈতিক মতাদর্শসহ প্রতিটি বিষয় স্টাডি করা। এরপর সেই প্রতিবেদন দেখে প্রকৃত আওয়ামী লীগ করা প্রার্থী বেছে নেওয়া হতো। চূড়ান্তভাবে উর্ত্তীণ হয়েও মেধাবী প্রার্থী বাদ পড়ে যেতেন; কেননা সরকারের সমালোচনা করে কোনো এক সময় তিনি ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিলেন।
সমস্যা হচ্ছে গেল এক বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফ্যাসিজমের বলয় থেকে বের করে আনা সম্ভব হয়নি। আবার শেখ হাসিনার শাসনামলে নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিতে না পারা যেসব পুলিশ কর্মকর্তাকে নানাভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের অনেকের চাকরির বয়স থাকলেও ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। অথচ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে দীর্ঘ দিন ধরে ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে চাকরি ফিরে পাওয়ার আবেদন। এদিকে পরিস্থিতির কারণে প্রশাসনের অনেকেই পোশাক বদলে কেউ বিএনপি কেউ বা জামায়াতের অনুসারী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে ফেলেছেন।
নির্বাচনী ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্রে এটাই আমাদের বড় ঝুঁকি। এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আরও একটি উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা হলো, আওয়ামী শাসনামলে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা পেশাগত নৈতিকতা জলাঞ্জলি দিয়ে রীতিমতো দুর্বৃত্তায়ন করেছেন, বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছেন, গুম করেছেন এবং ক্রসফায়ারের মতো নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছিলেন; সেইসব চিহ্নিত প্রভাবশালী পুলিশ কর্তাদের আইনের আওতায় আনা যায়নি। অধিকাংশই নির্বিঘ্নে চলে যেতে পেরেছেন দেশের বাইরে। কেউবা দেশের মধ্যে আত্মগোপন করে থাকলেও হদিস বের করা যাচ্ছে না।
কেন যাচ্ছে না? জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা বলুন আর গোয়েন্দা সংস্থা বলুন, সর্বক্ষেত্রে রয়ে গেছে ওই সব কর্মকর্তাদের অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষী। রদবদল করে ঘুরে ফিরে যাদের নিয়ে আসুন না কেন, তাদের অনেকেই কমবেশি ফ্যাসিস্টের দোসর। সুবিধাভোগী।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে পলাতক থেকে ওই সব হাই অফিসিয়ালরা কি কলকাঠি নাড়ছেন না! কমবেশি যোগাযোগ রাখছেন না? তাছাড়া পেশাগত কারণে অপরাধ জগতে পুলিশের যে ধরনের সোর্স তৈরি হয়; সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী, বোমাবাজ, পেশাদার খুনিসহ যত ধরনের অপরাধী রয়েছে, তাদের ঐক্যবদ্ধ করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ বড় ধরনের সহিংসতার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যদি বিপুল পরিমাণে অর্থায়ন করা হয়, সোর্স নামের এসব অপরাধীরা একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
নির্বাচনের আগে সর্বত্র অরাজকতা যদি তৈরি করা যায়; দেশের মধ্যে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী ক্যাডাররাসহ দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে ইউনূস সরকারের পতনে প্রাণপণ লড়াই শুরু করে দেন এবং প্রশাসনের মধ্যে থাকা আওয়ামী সুবিধাভোগীরা নীরবতা পালন করেন; তাহলে সামলে ওঠা সরকারের পক্ষে জটিল হয়ে পড়বে। তবে হ্যাঁ, এই সুযোগটি তৈরি হতে পারে যদি আমরা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন বানচালের পদক্ষেপ নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যেহেতু নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন; সরকারের উচিত হবে এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্ৰহণ করা যেন কোনোভাবেই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হতে না পারে। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা প্রতিটি বাহিনীর সদস্যকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে কেবল সততা নয়, দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে।
এবং রাষ্ট্র যদি সব ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করে ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করতে চায় তাহলে সবার আগে জরুরি হলো, ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ভেটিং’ সম্পন্ন করা। এটি মূলত নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের অংশ। প্রশাসনিক পদের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তির যোগ্যতা, দক্ষতা এবং ব্যাকগ্রাউন্ড অতিদ্রুত যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।
পরবর্তী ধাপে ‘প্রিভেনটিভ অ্যাকশন প্ল্যান’ বা প্রতিরোধমূলক কর্মপরিকল্পনা প্রস্তুত করা। এটি এমন এক অগ্রিম কর্মপরিকল্পনা, যার মাধ্যমে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্র, বিশৃঙ্খলা বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ঘটার আগেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব।
‘রিয়েল-টাইম ইন্টেলিজেন্স’ জোরদার করা। রিয়েল-টাইম ইন্টেলিজেন্সকে বলা হয় রাষ্ট্র ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ও কান, যা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা, প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতা দেয়। নির্বাচন বা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি প্রায় অপরিহার্য, কারণ সময়মতো সঠিক তথ্য না থাকলে ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
‘কন-টিন-জেন-সি প্ল্যান’ বা বিকল্প কর্মপরিকল্পনা ঠিক রাখা। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি ঘটার আগে যদি তা এড়ানো না যায় অর্থাৎ সাধারণ পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে অথবা হঠাৎ অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হলে বিকল্প কর্মপরিকল্পনাকে দ্রুত কার্যকর করে পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়। এ ধরনের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি সহিংসতা মোকাবিলা, জরুরি যোগাযোগ ও সমন্বয় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী অতিরিক্ত নিরাপত্তা দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা যায়।
‘ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট’ এর বিষয়ে আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। এটি মূলত ভিড়কে নিরাপদ, শৃঙ্খল ও নিয়ন্ত্রিতভাবে পরিচালনা করার কৌশল। সাধারণত রাজনৈতিক সমাবেশ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা মেলা, স্টেডিয়াম, নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র; মোট কথা পাবলিকের সমাগম ঘটে এমন স্থানগুলোতে ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট যেন যথাযথ হয়। এ সবকিছু ঠিক রাখতে তথা জননিরাপত্তার প্রশ্নে অস্ত্রবিরোধী অভিযান অতি দ্রুত শুরু করা উচিত।
ডিজিটাল মনিটরিং সেল গঠন করা এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্তভাবে ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। কেননা বর্তমান সময়ে গুজব বা অপপ্রচার রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির মূল কারণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ পায় না, সহজে বিশ্বাস করে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করতে থাকে।
সুনির্দিষ্টভাবে এ ধরনের একটি সাইট সরকার চালু করতে পারে, যেখান থেকে যে কেউ নিজ উদ্যোগে ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের কাজ সেরে নিতে পারেন। তাহলে গুজবে কান না দিয়ে অহেতুক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি হ্রাস পাবে।
এ ছাড়া জনগণের মাঝে অসন্তোষ বৃদ্ধির সুযোগ যাতে তৈরি না হয়, সেটি মাথায় রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা, হটস্পট চিহ্নিতকরণ, নিয়মিত বিদেশি কূটনীতিকদের নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে অবগত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা জোরদার করতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি এবং সহিংসতা বা ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা বেশি রয়েছে এমন এলাকা তালিকাভুক্ত করা।
সুজায়েত শামীম সুমন: অপরাধ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এমজেএফ