আজ প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের উদ্যোগে সম্পূর্ণ পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ দিবস পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দিবসটি পালনে পরমাণু বিস্তার রোধ বিষয়ক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ বাণী প্রকাশ করা হয়েছে।
পটভূমি

১৯৫৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সম্পূর্ণভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব তোলা হয়। এতে করে ১৯৭৫ সাল থেকে নিউক্লিয়ার নন-প্রোলিফারেশন ট্রিয়েটি বা পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির পক্ষের রাষ্ট্রগুলো জাতিসংঘে পারমাণবিক অস্ত্র সম্পর্কে একটি রিভিউ প্রোগ্রাম চালু করে।
এটি প্রতিবছরই অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। পরে ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থনে সাধারণ অধিবেশন পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে একটি বিশেষ সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
দিবস নির্ধারণ
এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর কাছে প্রায় ১৭ হাজার পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে। এসব অস্ত্র তৈরিতে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কোটি কোটি ডলার অর্থ ব্যয় করছে। সেইসাথে এসব অস্ত্র আরো গতিশীল ও অত্যাধুনিকভাবে তৈরি করতেও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার মতো কোনো কোনো পরমাণু শক্তিধর দেশ। এসব কারণেই পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণ ধ্বংসের উপর গুরুত্ব দিয়ে একটি বিশেষ দিন ধার্য করার তাগিদ তৈরি হয়।
পরে ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২৬ সেপ্টেম্বরকে সম্পূর্ণভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ দিবস হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। চলতি বছরের মে মাসে নিউইয়র্কে পারমাণবিক অস্ত্র বিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন আনফোল্ড জিরো ও আইএএন এর উদ্যোগে এক অনুষ্ঠানে ২৬ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করা হয়। ২৬ সেপ্টেম্বরকে নির্ধারণ করার আরেকটি কারণ ছিল, ১৯৮৩ সালে রুশ-মার্কিন পারমাণবি যুদ্ধের সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল এই একই দিন ২৬ সেপ্টেম্বর।
পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ভয়াবহতা
বিশ্বে বর্তমানে ঘোষিতভাবে পারমানবিক অস্ত্রধারী মোট ৯টি দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চায়না, ভারত, পাকিস্তান, ও উত্তর করিয়া। এর মধ্যে শুধু ইসরাইল তাদের দেশে পারমানবিক অস্ত্রের উপস্থিতি স্বীকার করেনি। এছাড়া এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে - উত্তর কোরিয়া, ইরান, ইসরাইলেরও পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।

যুদ্ধের ইতিহাসে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় মাত্র দুটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত করা হয়েছিল। লিটল বয় নামের প্রথম বোমাটি ৬ আগস্ট ১৯৪৫ সালে
জাপানের হিরোশিমাতে এবং ফ্যাট ম্যান নামক দ্বিতীয় বোমাটি তিনদিন পর জাপানের নাগাসাকিতে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু এর ফলাফল ছিল ভয়াবহ। প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ও ক্ষতিকর আলোক-কণা বিকিরণের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মারা গিয়েছিল প্রায় ১২০,০০০ লোক এবং আয়নাইজিংয়ের ফলে ধীরে ধীরে আরো অসংখ্য মানুষ মারা গিয়েছিল। এ বোমার বিস্ফোরণ এবং কোন দেশের অস্ত্রভাণ্ডারে এ বোমার সংরক্ষণ খুবই বিতর্কিত একটি বিষয়।
হিরোশিমা ও নাগাসাকির সেই বিস্ফোরণের পরেও এখন পর্যন্ত আরও পাঁচ শতাধিকবার পরীক্ষামূলকভাবে এবং প্রদর্শনের জন্য এ বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৪