ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

প্যাট্রিক মোদিয়ানোর নোবেল বিজয়ের আসল স্ক্যান্ডাল ।। অ্যামা ব্রক্স

নোবেল/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৪
প্যাট্রিক মোদিয়ানোর নোবেল বিজয়ের আসল স্ক্যান্ডাল ।। অ্যামা ব্রক্স ফিলিপ রথ

নোবেল নিয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রে বড় বড় অক্ষরে লেখা হয়, তার মানে প্রতিবছরের মতো তখনই নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা একটি সাহিত্যিক ঘটনা হয়ে ওঠে। যখন এ বছরের পুরস্কার থেকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ৫০ বছর ধরে সাহিত্য চর্চা করে যাওয়া ফিলিপ রথের মতো এক শক্তিশালী দানবকে পরাজিত করতে পারায় ফিলিপ অতি খোশ আলাপের বিষয় হয়ে ওঠেন তখনই আসলে গাদা গাদা খুব প্রান্তিক রোমান্টিক ঔপন্যাসিকদের দেখা মেলে।

    

গেল বছর কানাডিয়ান গল্পকার এলিস মুনরোকে বিতর্কিতভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করেন সুইডেনের কর্তারা। বৃহস্পতিবার সকালে তারা আগের মতোই পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে বিতর্কের জন্ম দিলেন। ফ্রান্সের প্যাট্রিক মোদিয়ানোকে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা দেয়ায় বরাবরের মতো এবারো বিতর্ক সৃষ্টি হল।     

নোবেল পুরস্কারের ‘পক্ষপাত’ নিয়ে অসংখ্য তত্ত্ব চালু আছে। এর মধ্যে— নন-ইংলিশ দেশ থেকে কারা কারা পুরস্কার পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন আর সম্ভাবনা আছে তাদের নিয়ে নানান রকম সাহিত্য মহলের গল্পকথা চালু রয়েছে। পশ্চিমা দুনিয়ায় সেসব লেখকের পাঠক সংখ্যাও অনেক। তবে পশ্চিমে এই পাঠক তৈরি হয়েছে না পড়ে কিংবা না শুনেই। যেভাবেই এ পাঠক তৈরি হোক না সেটা হয়ত বেশ ভালই বটে।       

দি রয়েল সুইডিশ একাডেমির নিযুক্ত খোদ বিচারকরাই বলেছেন, তারা নিউইয়র্কের প্রকাশনা বিষয়ক চিন্তার দিক থেকে সৃজনশীল লেখালেখিকে পছন্দ করেন না। (সুইডেনের নোবেল কমিটির বিচারকরা বলেছেন, পশ্চিমের সাহিত্যকে হত্যা করছে মার্কিন ক্রিয়েটিভ কোর্সগুলো। তারা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রে সৃজনশীল লেখকদের আর্থিক সহায়তাদানের বিষয়টির কারণে পশ্চিমের সাহিত্য দরিদ্র হয়ে যাচ্ছে। )

তারা আরো আগ বাড়িয়ে বলেছেন, মার্কিন কালচারাল হেজিমনিকে কাউন্টার করার জন্য নোবেলই একমাত্র উপযুক্ত প্লাটফর্ম। তবে আসল কথা হল, যে লেখকরা সত্যিই বিক্রি হন না তাদেরকে পুরস্কার দিতে চান না প্যাট্রিক মোদিয়ানোর নোবেল বিচারকরা।

একবার ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর সাহিত্য সমালোচক ডোয়িট গার্নার এ প্রসঙ্গে ঠিক প্রসঙ্গটি তুলে ধরেন। ডোয়িট গার্নার বলেন, সাহিত্যে নোবেল বিচারকদের অন্ধচোখ এমন এক দাগ সৃষ্টি করেছে যা বেশ হাস্যকর। কারণ সংস্কৃতিতে তাদের খুব যাতায়াত আছে। কিন্তু যে জিনিসটির সম্ভাবনা এখনো উন্মোচিত হয়নি তা হল, সত্যিই যে এই বিচারকরা চরম ফানি-কৌতুককর পদার্থ। যদিও সুইডিশ স্টাইলে সারা বছরে একবার মাত্র তাদের এই কৌতুকময় পছন্দটা জেগে ওঠে। এতে হয়ত নোবেল বিজয়ে স্থায়ী ব্যর্থতার ব্যাপারে ফিলিপ রথকে কিছু বলতে হতে পারে।          

বেশ কয়েক বছর ধরে নোবেল পুরস্কার নিয়ে এই ঘটনাই চলছে। সেইসঙ্গে ফিলিপ রথও নিউইয়র্কে বসে ডাক পাবার আশায় অপেক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন— মানে পুরস্কারের জন্য তার প্রতিনিধিরা তাকে ডাকবেন। তার জন্য একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও প্রিন্ট করা হবে এবং সেটা বিলিও করা হবে। রথও হয়ত বসে থাকবেন কোনো মিটিং রুমে। একটু স্মার্ট হয়ে। কিন্তু আহা, দিন শেষে জানা যাবে এই সফর বড় দীর্ঘ, সো স্যাড। শেষ পর্যন্ত দুঃখের এই সফর ফিরিয়ে নিতে হবে কানেটিকাটে। মানে নিউইয়র্কের বিখ্যাত চলচ্চিত্র সংলাপ রচয়িতা চার্লি কফম্যানের কোনো মুভির চেয়েও এটি হবে মারাত্মক ভয়ঙ্কর।  

কেন রথই শুধু বারবার এইভাবে ব্যর্থ হন, এটি একটি রহস্য বটে। যুক্তরাষ্ট্রের পিনচন ও দে লিলো’র মতো বড় মাপের আর যে শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিকরা সমানভাবে নোবেল পাবার দাবিদার তাদের মধ্যে রথের এই ব্যর্থতা কেন এতবেশি বারবার মনোযোগ আকর্ষণ করে? নোবেল থেকে বাদ পড়লেও ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল, প্রিক্স মেডিসিজ ইটরেঞ্জার, পুলিৎজার ও ন্যাশনাল বুক অ্যওয়ার্ডের মতো প্রায় সব আন্তর্জাতিক সাহিত্য পুরস্কারই জিতেছেন ফিলিপ রথ।  
মার্কিনদের মধ্যে এই বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য ঔপন্যাসিক জোয়সি ক্যারোল ওয়াটসকে সম্ভাবনাময়ী মনে করা হয়েছিল। বেটার ম্যারিলিন রবিনসনের কথাও শোনা যায়। রবিনসন কিছুটা মজার ও অদ্ভুত রকমের লেখক। তবে তাকে বেশ ‘কঠিন’ রকম ঔপন্যাসিক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ তিনি জনপ্রিয় নন।  

যাইহোক, মোদিয়ানো বিজয়ী হলেন। তার ও বিশ্বব্যাপী তার বহু ভক্তের জন্য এটি একটি ভালো খবর। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল, পরবর্তী ফিলিপ রথ কে হতে যাচ্ছেন—যিনি হবেন চ্যাম্পিয়ন ঔপন্যাসিক? তার জন্য বছর শেষে আমরা সবাই লুকায়ে থাকতে পারি?

* লেখাটি ৯ অক্টোবর যুক্তরাজ্যের ‘দি গার্ডিয়ান’-এর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয় 

অনুবাদ : শাহাদাৎ তৈয়ব

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।