ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

চীন-জাপান বিরোধের তিন সত্য।। শেইলা এ স্মিথ

অনুবাদ/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৪
চীন-জাপান বিরোধের তিন সত্য।। শেইলা এ স্মিথ

জাপান ও চীনের মধ্যে শত্রুতা দীর্ঘদিনের। অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা-শত্রুতাসহ নানান আঞ্চলিক স্বার্থ ও ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলে আসছে এশিয়ার এ দুই প্রবল ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের মধ্যে।

বিশেষ করে গত এক দশকে সমুদ্র সীমানা নিয়ে বিরোধ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে চীন ও জাপানের মধ্যে।

আঞ্চলিক অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়ার পথে এশিয়ার এ দুই বড় অর্থনীতির বিবদমান বিরোধ ভালোরকম বিপদ তৈরি করে রেখেছে।

বিরোধ নিষ্পত্তিতে কূটনৈতিক চেষ্টাও কম হয়নি। একদিকে জাপানের সঙ্গে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের প্রতিযোগিতামূলক স্বার্থের বিরোধ রয়েছে। চীনের ক্রমাগত পরাশক্তি হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা ও প্রচেষ্টা এই বিরোধকে স্থিতিশীল করার চাইতে বরং আরো উস্কে দিচ্ছে।

চীনের সঙ্গে সমুদ্র সীমান্ত নিয়ে যে শুধু জাপানের বিরোধ রয়েছে তা নয়, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, তিব্বতসহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে সীমান্ত সংঘাত চলে আসছে। জাপান শক্তিশালী হওয়ায় তার সঙ্গে বিরোধের মাত্রাও মারাত্মক হওয়ায় এর উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করলে পুরো অঞ্চলেই এই বিরোধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।  
কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই দুদেশের এই সম্পর্ক সহজ ও শিথিল করা খুবই জরুরি। কারণ এই দুই বৃহৎ শক্তির মধ্যে শান্তিময় পরিস্থিতি বজায় থাকার সঙ্গে অন্যান্য প্রতিবেশি ও আঞ্চলিক দেশগুলো, তথা এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশের স্থিতিশীলতার সম্পর্ক জড়িয়ে আছে।

তবে জাপান ও চীনের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে তিনটি জিনিস জরুরি। এই তিন জিনিসই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনা ও বিরোধের প্রধান কারণ।  
 
এক.
চীন ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠছে। রাজনৈতিকভাবে চীনের এই শক্তিশালী হয়ে ওঠার পেছনে মূল চালিকা শক্তি হলো দেশটির অর্থনীতি। সেকারণে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরিতে জাপানের এক ধরনের চেষ্টা আছে। ইতিপূর্বে এশিয়ার প্রধান শক্তিশালী দেশ হওয়ায় জাপান চীনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু জাপান পুরনো শক্তি হওয়ায় চীনের প্রতি তার ভঙ্গি কঠোরই বলা চলে। চীন প্রশ্নে অভ্যন্তরীণভাবে জাপানের মধ্যে রয়েছে নানান রকম রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি। উদার ও রক্ষণশীল চিন্তাধারার সংঘাত মূলত জাপানের রাজনীতির মূলধারা। দেশটিতে প্রায়ই বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার বদল ঘটে। এই অদলবদলের ফলে চীনের ব্যাপারে জাপানে প্রায়ই তাদের নীতির পরিবর্তন ঘটে। যে কারণে চীনের সঙ্গে জাপানের বিরোধ মীমাংসা হওয়ার মতো কোনো আলোচনার পরিবেশও তৈরি হয় না।

চীন ও জাপানের মধ্যে স্থায়ী এই বিরোধের মূল মনঃস্তাত্ত্বিক কারণ হলো যুদ্ধের তিক্ত ইতিহাস। যে কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে চীনের বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধের স্মৃতি দেশটির প্রতি চীনা শত্রু মানসিকতা সবসময়ই কাজ করে।     

দুই.
বিরোধ কমিয়ে আনা চীন-জাপানের জন্য বেশ কঠিন। দুই দেশই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অটল। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি না। ধারণা করা হচ্ছে, সম্পর্ক শিথিল করে আনতে দুই দেশকেই কঠোর উদ্যোগ নিতে হবে। সম্প্রতি এপেক সম্মেলনের পর বিশ্লেষকরা কিছুটা আশাবাদী। বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এপেকের শীর্ষ সম্মেলনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজু আবে এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বৈঠক করেন। দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার এটিই ছিল কোনো ভালো উদ্যোগ। বিশ্লেষকরা বলেছেন, স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে বড় ধরনের কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে দুই দেশকে।     

তিন.
দুই দেশের বিরোধের এই সময়টাতে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় ধরনের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু এই সুযোগ ও সম্ভাবনাকে কার্যকর করার পথে মূল চালিকাশক্তিই হচ্ছে চীন ও জাপান। ‘ইন্টিমেট রিভ্যালস: জাপানিজ ডোমেস্টিক পলিটিক্স এন্ড এ রাইজিং চায়না’ বইয়ের লেখক শেইলা স্মিথ মনে করেন, ‘পুরো এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন সম্ভব তখনই যখন চীন ও জাপান শান্তিপূর্ণভাবে তাদের বিরোধ নিরসনে এগিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ’

মোটকথা দুইদেশের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা বাড়ানোর মানসিকতা এড়িয়ে টোকিও ও বেইজিংয়ের কূটনৈতিক আপোসরফাই এশিয়া এবং এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ পন্থা।     

শেইলা এ স্মিথ: জাপান স্টাডিজ ও কাউন্সিল ফর ফরেন রিলেশন্সের সিনিয়র গবেষক

অনুবাদ: শাহাদাৎ তৈয়ব

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।