সবশেষ জনমত জরিপে শিনজো আবের দল এগিয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির প্রধান গণমাধ্যমগুলো। জরিপে শিনজো আবের দল তিন শতাধিক আসন পাওয়ার আভাস দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনে উত্তর কোরিয়ার সামরিক হুমকি মোকাবিলা, ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব অলিম্পিক আসর ও দ্রব্যের ট্যাক্স বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু বিষয় মূল ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে।
প্রধান দুই দল থেকেই জনগণের সমর্থন পেতে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হয়েছে। নেই মারামারি-হামলা-মামলা ও কেন্দ্র দখলের সংস্কৃতি। জনগণ ইচ্ছানুযায়ী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রোববার ভোটের দিন হওয়ায় ভোটারের উপস্থিতি বেশি হবে বলে ধারণা করছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
ভোটের আগেও চারিদিকে শান্ত ও স্বাভাবিক পরিবেশ। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। সত্যি শান্তির দেশ জাপান। সংসদের নিম্নকক্ষে ৪৬৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৮৯ জন আইনপ্রণেতা সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন। বাকি ১৭৬ জন নির্বাচিত হবেন আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। ক্ষমতায় যেতে হলে অন্তত পক্ষে ২৩৩টি আসন পেতে হবে।
নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) বেকায়দায় ফেলতেই নতুন দল কিবো নো তো (পার্টি অব হোপ) গঠন করেছেন টোকিও সিটির প্রথম নারী গভর্নর ইউরিকো কোইকে।
এছাড়াও নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান (ডিপিজে) এবং অপেক্ষাকৃত ছোট দল জাপান ইনোভেশন পার্টি (জেআইপি) একীভূত হয়েছে। এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান প্রধান কাতসুয়াওকাদা। অন্যদিকে কন্সটিটিউশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান (সিডিপিজে) ও জাপানিজ কমিউনিস্ট পার্টিসহ বেশ কয়েকটি ছোট দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাপানের পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে শিনজো আবে আগাম নির্বাচন ঘোষণা করেন। নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই এবং উত্তর কোরিয়া নিয়ে বিদ্যমান সংকটে জনমত জানতে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার একবছর আগেই সাধারণ নির্বাচন দিলেন শিনজো আবে। তিনি তার সমর্থনে আরও শক্তিশালী জনরায় চাইছেন। অন্যদিকে ইউরিকো কোইকেও জাপানের প্রথম নারী হিসেবে তাকে নির্বাচিত করতে জনগণের ভোট ও সহযোগিতা চেয়েছেন।
এর আগে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শিনজো আবে। তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ডায়েটে (জাপানের পার্লামেন্ট) জোট সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে শিনজো আবের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। তবে জাপানের ওপর দিয়ে উত্তর কোরিয়ার দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় আবের প্রতি জনসমর্থন আবারও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আবের এই আগাম নির্বাচন ঘোষণায় বিশ্লেষকরা বলছেন, বেড়ে যাওয়া জনসমর্থন ও বিরোধী দলের দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছেন শিনজো আবে। জুলাইয়ে আবের জনসমর্থন ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি।
জাপানে সংসদীয় রাজতন্ত্র, অর্থাৎ এই ব্যবস্থায় সম্রাটের ক্ষমতা মূলত আনুষ্ঠানিক ও সীমিত। অন্য অনেক রাষ্ট্রের মতো জাপানেও সরকার ব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগ। ১৯৪৭ সালে প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী জাপান সরকার পরিচালিত হয়। এটি একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র, যার প্রশাসনিক অঞ্চল ৪৭টি এবং সম্রাট হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান। সম্রাটের প্রকৃত ক্ষমতা নেই; শুধু আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা আছে। সরকার চালানোর প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বারা পরিচালিত ক্যাবিনেটের হাতে অর্পিত।
ক্যাবিনেট প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে জাতীয় সংসদ বা ডায়েট। জাতীয় ডায়েট হল আইন বিভাগের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক। এটি দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট, যেখানে উচ্চকক্ষটি হলো উপদেষ্টা পরিষদ এবং নিম্নকক্ষ জনপ্রনিধি পরিষদ।
মাহবুব মাসুম, প্রবাসী সাংবাদিক
masum86cu@yahoo.com
+8107041063143
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৭
এএ