ইতোমধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সেক্রেটারি জাপানে অবস্থান করছেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে এক সম্মেলনে অংশ নিতে জাপানে অবস্থান করছেন ট্রাম্প কন্যা মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইভানকা ট্রাম্প।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দেশ দুটির এটি দ্বিতীয় শীর্ষ বৈঠক। গত ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম শীর্ষ বৈঠকের পর এটিকে সবচেয়ে গুরুপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে জাপান কতোটা শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবে, সেটিই এখন আলোচনার মুখ্য বিষয়।
বৈঠকে বিশেষ করে, দু'দেশ কিভাবে উত্তর কোরিয়া পরিস্থিতির মোকাবিলা করবে এবং চীনের কর্মকাণ্ডের জবাব দেবে সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
সফরে টোকিও এবং ওয়াশিংটনের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদারের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এবং ট্রাম্প পিয়ংইয়াং'এর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ধাপে ধাপে কঠোরতর করার কার্যকর উপায় নিয়ে আলোচনা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর কোরিয়ার হাতে জাপানি নাগরিকদের অপহরণের বিষয়টি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার জাতিসংঘের বক্তব্যে উল্লেখ করেন। এবং তার জাপানে এক অপহৃতের পরিবারের সাথে দেখা করার কথা রয়েছে।
বৈঠকে জাপানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক দ্বিপাক্ষিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে চাচ্ছে। তবে জাপান আন্তঃপ্রশান্ত অংশীদারিত্ব বা টিপিপি অবকাঠামো বজায় রাখার মূলনীতিতে অনড় রয়েছে। জাপান বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর ১০টি দেশ নিয়ে এক নতুন টিপিপি অবকাঠামো তৈরিকে প্রাধান্য দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিপিপি'তে প্রত্যাবর্তনের আশা নিয়ে জাপান একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়েছে। দু'পক্ষই যদি তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে নড়তে অনীহা প্রকাশ করে, তবে বাণিজ্য বিষয়ে দু'দেশের মতৈক্যে পৌঁছানো কঠিন হতে পারে বলে এনএইচকে কে জানিয়েছে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের অধ্যাপক ফুমিয়াকি কুবো।
তিনি বলেন, এ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অপ্রত্যাশিত কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। তবে, আবে এবং ট্রাম্পের মধ্যকার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। তারা অনেকবার ফোনালাপ করেছেন, এবং জাপানে তারা একসাথে গলফ খেলার রুটিন করছেন। তাই, তাদের পারস্পরিক আস্থার সম্পর্ক শীর্ষ সম্মেলনে সাফল্য বয়ে আনবে এমন আশা রয়েছে।
জাপন সফরে মেলানিয়া ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও সফর করবেন জাপান। তার নিরাপত্তার জন্য জাপানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ ইউনিটের ব্যবস্থা করছে। এই ইউনিটের সব সদস্যই নারী। গত বুধবার টোকিওর ইমপেরিয়াল প্যালেসের সামনে কালো স্যুট আর সাদা শার্ট পরা ওই বিশেষ নারী পুলিশ ইউনিট উপস্থিত মহড়া দিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জোনাথন ওয়াকরয়ের মতে, এভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাপানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আসলে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে।
ট্রাম্প কন্যা ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইভানকা ট্রাম্প জাপান
এদিকে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে সোচ্চার ট্রাম্প কন্যা ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ইভানকা ট্রাম্প এক সম্মেলনে অংশনিতে জাপানে অবস্থান করছেন। সম্মেলনে তিনি পুরুষদের আধিপত্যে থাকা খাতগুলোতে নারীদের এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। শুক্রবার টোকিও'তে ইভানকা ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড অ্যাসেমব্লি ফর উইমেন' এর সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, তার দীর্ঘদিনের স্বপন হচ্ছে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। তিনি বলেন, অর্ধেক নারী থাকা জনশক্তির পুর্ণোদ্যমে কাজে অংশগ্রহণ স্থানীয় সম্প্রদায়কে শক্তিশালী এবং উন্নত করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি এও জানান, ট্রাম্প প্রশাসনে যোগ দিয়েছেন একটি সমাজ গড়ার জন্য যেখানে নারীরাই বড় ধরনের এক ভূমিকা পালন করবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সামাজিক গণমাধ্যম এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে সমাজের সাথে যুক্ত করা "চতুর্থ শিল্প বিপ্লব" সংক্রান্ত খাতগুলোতে নারীশক্তির ঘাটতি নিয়ে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি বার বার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মত দেশগুলোর কখনোই পরিতৃপ্ত হওয়া উচিত না। কেবল নিজের দেশেই নয়, অন্যান্য দেশেও নারীর ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত সংস্কার কর্মকাণ্ড অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে।
মাহবুব মাসুম: প্রবাসী সাংবাদিক, masum86cu@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৭
জেডএম