ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

শেষ সময়ে কৌশলী প্রচারণায় প্রার্থীরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৪ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
শেষ সময়ে কৌশলী প্রচারণায় প্রার্থীরা

বরিশাল: বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ জুন। সেই হিসেবে প্রচার-প্রচারণার সময় একেবারে শেষের পথে।

আর শেষ দিকে এসে প্রচারণার মাঠে ভিন্নতা এনেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সঙ্গে দল মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহও (খোকন সেরনিয়াবাত)।  

যদিও জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমও প্রচারণায় কিছুটা ভিন্নতা রাখছেন প্রতিনিয়ত। তবে বাকি প্রার্থীরা শুরু থেকে ধারাবাহিক কৌশলে জনসংযোগ আর উঠান বৈঠকেই প্রচারণায় সীমাবদ্ধ রয়েছেন।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, কৌশলী প্রচারণা প্রার্থীদের পরিচিতির পাশাপাশি সমর্থন বাড়ায়। সেক্ষেত্রে যে যতো কৌশলী হবে, সে ততো সমর্থন পাবে।

ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মিডিয়া উপ-কমিটির সদস্য কে এম শরীয়তউল্লাহ বলেন, প্রচারণার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের নারী ও পুরুষ কর্মী-সমর্থকরা নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।  

যে যেভাবে পেরেছেন সেইভাবে এই প্রার্থীর বার্তা ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আর প্রার্থী নিজেই চেষ্টা করেছেন নগরের ৩০টি ওয়ার্ডের সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের কাছে যাওয়ার, সেক্ষেত্রে জনসংযোগের পাশাপাশি উঠান বৈঠকসহ শিক্ষাবিদ, সিনিয়র সিটিজেন, যুব সমাজ, শ্রমিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন, ইমাম সমিতি, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেছেন।

অন্যদিকে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপসও তার প্রচারণায় প্রতিনিয়ত রেখেছেন নতুনত্ব, উঠান বৈঠক, গণসংযোগের পাশাপাশি তিনিও সুশীল সমাজ, শিক্ষক সমাজ, যুব সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সেইসঙ্গে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে সমালোচনার পাশাপাশি প্রতিবাদীও ছিলেন।

এদিকে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সমর্থন বাড়াতে কাজ করেছেন তাপসের নিজের হাতে গড়া সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও। তবে প্রচারণার মাঠে সরব থেকে আলোচনায় ছিলেন লাঙ্গলের এই প্রার্থীর সহধর্মিণী ইসমত আরা টুপুর। যদিও আওয়ামী লীগের প্রার্থীর আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর (খোকন সেরনিয়াবাত) স্ত্রী লুনা আব্দুল্লাহ সবার প্রথম প্রচারণার মাঠে নেমে নারী ভোটারদের মন কেড়েছেন।

তবে তাপসের অভিযোগ, নানাভাবে তার প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা যদি কোনো ট্রেড ইউনিয়ন, কোন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে প্রোগ্রাম করতে যাই এবং সময় ঠিক করি, তাহলে দেখি পরের দিন তা বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে।  তারা বলে সরকারি দলের চাপ রয়েছে, আমরা আপনাকে ভোট দেব, কিন্তু আমরা প্রোগ্রাম করতে পারব না।

যদিও কোনো প্রার্থীর সমালোচনা না করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। প্রার্থীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বয়স্ক ব্যক্তি হলেও তিনি প্রচারণার শুরু থেকে নিজেকে যেমন জনসংযোগ আর উঠান বৈঠকে ব্যস্ত রেখেছেন, তেমনি তার সহধর্মিণী লুনা আব্দুল্লাহও গোটা নগরী চষে বেড়িয়েছেন।  

নগরবাসী বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নৌকাকে এক অনন্য স্থানে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করেছেন লুনা আব্দুল্লাহ। আর প্রচারণার শুরু থেকেই খোকন সেরনিয়াবাত ও তার সহধর্মিণী বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত মতবিনিময় করেছেন। সেইসঙ্গে প্রার্থীর ছেলে আবিদুর রহমান সেরনিয়াবাতও যুব সমাজকে ঘিরে সক্রিয় প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে শেষদিকে এসে প্রচারণার কৌশলে আশপাশের জেলা-উপজেলাকেন্দ্রিক নগর কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন প্রার্থীরা। এ ছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতারাও এ সময়ে সরব রয়েছেন প্রচারণার মাঠে। আবার মাঝামাঝি সময়ে এসে ১৪ দলের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী মাঠে প্রাণবন্ত প্রচারণা চালানোয় সর্বোচ্চ আলোচনায় রয়েছেন নৌকার প্রার্থী।  

নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের ভিপি মঈন তুষার বলেন, তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা চেষ্টা করছেন শহরের প্রতিটি বাড়ি এবং ভোটারসহ সব ধরনের মানুষের কাছে প্রার্থীর বার্তা পৌঁছে দিতে।  

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা খোকন সেরনিয়াবাতের মনোনয়ন দেওয়ায় নগরবাসীও বুঝতে পারছেন, গত এক দশকে বরিশালে যে উন্নয়ন হয়নি, তা খোকন সেরনিয়াবাতের হাত ধরেই হওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে ভোটাররা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনে শহরের উন্নয়নে ১২ জুন ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং নৌকার পক্ষেই তাদের মূল্যবান ভোট দিবেন।

এদিকে ২০১৩ সালের পর এবারই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রচারণার মাঠ চষে বেড়ানোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সাবেক শিক্ষিকা ফাতেহা খানুন বলেন, কম-বেশি সব মেয়র প্রার্থী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এভাবে একজন প্রার্থী প্রচারণায় নগর চষে বেড়াবেন এটা ইতিবাচক দিক। আর এটা সুষ্ঠু নির্বাচনেরও ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৩
এমএস/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।