লক্ষ্মীপুর: আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই অবৈধ ও থানা লুটের অস্ত্র উদ্ধার করে দেশে চলমান অস্থিরতা দূর করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থানা লুটের অস্ত্র দিয়ে এবং আওয়ামী লীগের অবৈধ অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসীরা সমাজে অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনের আগেই অস্ত্রগুলো উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার কথা জানান তিনি।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় ঢেউটিন বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বুধবার (৫ মার্চ) দুপুরে পুরাতন গো-হাটা সড়কের বশির ভিলা মিলনায়তনে জেলা বিএনপি এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
এ্যানি বলেন, সারা দেশে আমাদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে। এ সুদৃঢ় ঐক্যের কারণেই শেষ পর্যন্ত ফ্যাসিবাদ পালিয়ে গেছে। হাসিনা পালিয়ে গেছে, হাসিনার দোসরা পালায়নি। ৫ আগস্টের পর থানা লুট হয়েছে। থানার মধ্যে আগুন দেওয়া হয়েছে, লুট হয়েছে। অস্ত্র কি উদ্ধার হয়েছে? আওয়ামী লীগের আমলের অবৈধ অস্ত্র, আর ৫ তারিখে থানা লুটের অস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের হাতে। ওই আওয়ামী দোসর ও তাদের সঙ্গীরা ওই অস্ত্র দিয়ে সমাজে অপকর্ম করছে। চুরি করছে, ডাকাতি করছে, সমাজে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছে। সমাজে একটা অস্থিরতা কাজ করছে। এজন্যই অন্তবর্তী সরকারকে বারবার বলছি, এখনও বলছি- আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের স্বার্থে আপনাদের আরও বেশি সজাগ থাকতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে, সরকার থেকে কর্মসূচি দিয়ে অস্ত্র যদি উদ্ধার না করা হয়, তাহলে এদেশে হানাহানি বাড়বে। অস্থিরতা বাড়বে, আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতি হবে। আমি সরকারকে বিশেষভাবে অনুরোধ করব, অস্ত্র উদ্ধারের কাজটি আপনারা দায়িত্ব নিয়ে করুন। এ কাজটি করার মধ্য দিয়ে সমাজে অস্থিরতা দূর করেন।
একদিকে সংস্কার চলবে, একদিকে নির্বাচন চলবে, তবে আগে অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। আমি নির্বাচন করব, আমি সুরক্ষা করব, কিন্তু সন্ত্রাসীরা অপকর্ম করবে, ষড়যন্ত্র করবে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাবে। এ অস্ত্র দিয়েই আবার সে কেন্দ্র দখলে যাবে, এ সুযোগ বাংলাদেশের মাটিতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধার করতেই হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব। সরকার আমাদের আন্দোলনের ফসল। আমাদের দাবিও বেশি, প্রত্যাশার জায়গাও বেশি। আমরা সহযোগিতা করছি, আরও সহযোগিতা করব। অস্ত্র উদ্ধারে সহযোগিতা করব, যোগ করেন তিনি।
এ্যানি আরও বলেন, সমাজের বিশৃঙ্খলা, সমাজের মধ্যে থেকে ষড়যন্ত্র রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এ ম্যাসেজগুলো দিতে হবে সবাইকে, সতর্ক করে দিতে হবে। নিজেরাও সজাগ থাকতে হবে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে, সুদৃঢ় ঐক্যের মাধ্যমে মোকাবিলা করেন, কোনো ফ্যাসিস্টের ষড়যন্ত্র, অন্য যে কোন ষড়যন্ত্র, খুব সহজভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন। এরা পরাজিত শক্তি, এরা ফ্যাসিবাদি, এরা এ দেশে অত্যাচার, নির্যাতন, গুম, খুন সবই করেছে। লুটপাট করেছে। কিন্তু এখন দেশের বাইরে বসে ষড়যন্ত্র করছে। আমরা যদি সজাগ না হই, তাহলে ৫ তারিখ চলে গেছে, ৫ তারিখের পর এ দেশের মানুষের চাহিদা প্রত্যাশা আপনার-আমার, সরকার ওপর বেড়েছে। এজন্য আমাদের আরও বেশি দায়িত্বশীল এবং সজাগ থাকতে হবে।
সমাজে অনেকভাবে অনেক অস্থিরতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মনে রাখবেন- এটা কেন করছে, কারা করছে। সমাজ যদি অস্থির হয়, এ দেশে একটা হানাহানি হবে, অস্থিরতা বাড়বে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একজনের সঙ্গে একজনের মারামারি হবে, তাহলে আবার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে। আমার এবং আপনার উদ্দেশ্যটা হলো সামনে একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার। সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সুদৃঢ় ঐক্যের মধ্যে থেকে সজাগ এবং সতর্ক থেকে পরিস্থিতি শান্ত রেখে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নিয়ে আসা, যাতে বাংলাদেশের জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু অন্য। এটাই আমাদের চাওয়া, আমাদের বেশি চাওয়া পাওয়া নেই।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাব উদ্দিন সাবুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আহমেদ ফেরদৌস মানিক, বিএনপি নেতা শাহ মোহাম্মদ এমরান, বেলাল হোসেন, লক্ষ্মীপুর পৌর যুবদলের সদস্য সচিব মুনছুর আহমেদ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৫
এসআই