ঢাকা: ভোটারদের পছন্দের তালিকায় দেশের ছয়টি বিভাগে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি। রংপুর বিভাগে এগিয়ে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী এবং বরিশাল বিভাগে এগিয়ে রয়েছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ।
বেসরকারি সংস্থা ইনোভিশন কনসালটিং পরিচালিত ‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় খণ্ড’ প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ানবাজারে বিডিবিএল ভবনে আয়োজিত ‘ভোটারদের সিদ্ধান্তে সামাজিক প্রেক্ষাপট ও ভিন্নতার প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় জরিপের ফল প্রকাশ করে বেসরকারি সংস্থাটি।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভয়েস ফর রিফর্মের সহ-আহ্বায়ক ফাহিম মাশরুর। প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন, ড. আসিফ শাহান, জামায়াতের ড. নকিবুর রহমান, এনসিপি নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ, পলিসি এনালিস্ট ড. অনন্য রায়হান, বাংলা আউটলুকের মোকতাদির রশিদ এবং গবেষণা সংস্থা ব্রেইনের ড. শফিকুর রহমান। জরিপের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন ইনোভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবাইয়াত সারওয়ার।
জরিপে দেখা যায়, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে বিএনপি এগিয়ে। ময়মনসিংহ বিভাগে বিএনপি ৪৫ দশমিক ৭ শতাংশ, জামায়াত ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগ শতাংশ ১৭ দশমিক ৩ ও এনসিপি ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। সিলেটে বিএনপি ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ, জামায়াত ২৯ দশমিক ৬ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১৪ শতাংশ। রাজশাহীতে বিএনপি ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ, জামায়াত ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ৯ দশমিক ২ শতাংশ। খুলনায় বিএনপি ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ, জামায়াত ৩০ দশমিক ১ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ। ঢাকায় বিএনপি ৪০ দশমিক ৮ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জামায়াত ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। চট্টগ্রামে বিএনপি ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ, জামায়াত ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ ও আওয়ামী লীগ ১৭ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার সমর্থন পেয়েছে।
অন্যদিকে রংপুর বিভাগে জামায়াত এগিয়ে ৪৩ দশমিক ৪ শতাংশ সমর্থন নিয়ে, যেখানে বিএনপি ৩৬ দশমিক ৭ শতাংশ, আওয়ামী লীগ ১২ দশমিক ৫ শতাংশ।
বরিশালে আওয়ামী লীগ এগিয়ে ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার সমর্থন নিয়ে, বিএনপি ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ ও জামায়াত ২৯ দশমিক ১ শতাংশ।
সার্বিকভাবে ভোটারদের পছন্দের তালিকায় প্রথমেই রয়েছে বিএনপি, জামায়াত দ্বিতীয়, আওয়ামী লীগ তৃতীয় এবং এনসিপি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে।
২০২৫ সালের ২ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পরিচালিত এই জরিপে রাজনৈতিক বিষয়, সামাজিক উন্নয়ন এবং নির্বাচনী পছন্দ নিয়ে জনগণের ধারণা জানতে সারা দেশে ১০ হাজার ৪১৩ জন উত্তরদাতার মতামত নেওয়া হয়েছে। জরিপে ৯ হাজার ৩৯৮টি পরিবার এবং এক হাজার ১৫ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত ছিল। এতে শহর ও গ্রামের বিভিন্ন বয়স, লিঙ্গ এবং পেশার মানুষের মতামত উঠে এসেছে।
জরিপের ফলাফলে আরও দেখা যায়, পুরুষ ভোটারদের ১৯.৬ শতাংশ মনে করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে না, যেখানে নারী ভোটারদের মধ্যে এই হার ১২.৯ শতাংশ।
বিএনপি ও জামায়াতের ভোট শহর এবং গ্রামে প্রায় সমান। তবে, এনসিপির ভোট গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি।
বিএনপি ও জামায়াতের জনপ্রিয়তায় বয়সভেদে তেমন পার্থক্য দেখা যায়নি। জামায়াতের তুলনায় বিএনপির স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট ভোটারের হার বেশি। তবে, জামায়াতের স্থানীয় রাজনীতি সম্পর্কে জানেন না, এমন ভোটারের সংখ্যাও বেশি। অন্যদিকে, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এনসিপির পক্ষে ও বিপক্ষে দুই দিকেই জোরালো সমর্থন রয়েছে।
সারাদেশে মোট ভোটারের ৩২.৬ শতাংশ এখনো সিদ্ধান্তহীন, যা ২০২৫ সালের মার্চে ছিল ২৯.৪ শতাংশ। জেন জি প্রজন্মের ৩৬.৩৪ শতাংশ এবং নারী ভোটারদের ৩৭.৮৮ শতাংশ এখনো কোনো দলকে বেছে নিতে পারেননি।
এনসিপির সমর্থকদের মধ্যে ৫৩ শতাংশ নারী এবং ৪৭ শতাংশ পুরুষ। যা বিএনপি ও জামায়াতের থেকে একেবারে ভিন্ন, কারণ ওই দল দুটির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমর্থকের হার প্রায় সমান।
বিএনপি কৃষক ও শ্রমিকদের মধ্যে থেকে বেশি ভোট পায়, অন্যদিকে এনসিপির সমর্থকদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি।
‘পিপলস ইলেকশন পালস সার্ভে’-র দ্বিতীয় পর্বের ফলাফল থেকে বাংলাদেশে একটি পরিবর্তনশীল এবং অনিশ্চিত নির্বাচনী আবহের চিত্র ফুটে উঠেছে। ভোটারদের পছন্দে অঞ্চল, প্রজন্ম এবং লিঙ্গভেদে বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
এই জরিপ বলছে, সিদ্ধান্তহীন ভোটার, বিশেষ করে জেন জি প্রজন্ম এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাই আগামী নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে মূল ভূমিকা পালন করবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এই বাস্তবতা মাথায় রেখে নিজেদের কৌশল সাজাতে হবে এবং ব্যাপক জনসমর্থন পেতে শহর-গ্রামের ব্যবধান কমাতে কাজ করতে হবে।
আরকেআর/জেএইচ