বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক যুগান্তকারী কর্মসূচি ছিল ৩০ জুলাই লাল ব্যাজ ধারণ করা। ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এই কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক এবং ওই সময়ের নীতিনির্ধারণী ভূমিকা রাখা সমন্বয়ক আবদুল কাদের।
রোববার (৬ জুলাই) নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছেন কাদের।
এর আগে এক সাক্ষাৎকারে লালব্যাজ ধারণের প্রস্তাব প্রথম দেওয়ার দাবি করেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এস এম ফরহাদ।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, রাষ্ট্রীয় শোক ও কালো পতাকার পরিবর্তে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব তিনি প্রথম শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সভাপতি সাদিক কায়েমকে দেন এবং পরে তারা প্রেস বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে আন্দোলনের সমন্বয়কদের পাঠান।
এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন সমন্বয়ক আবদুল কাদের, রিফাত রশীদ এবং মাহিন সরকার মুখ খুলেছেন।
আবদুল কাদের তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘২৯ জুলাই সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেওয়ার পর ওইদিন বিকেলে ছাত্রদলের নাছির ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয়। তখন নাছির ভাই রাষ্ট্রীয় কালো ব্যাজের বিপরীতে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দেন। রাকিব (ছাত্রদলের সভাপতি) ও নাছির ভাইয়ের সঙ্গে এবিষয়ে আমাদের একাধিকবার কথা হয়।
তিনি লিখেন, পরে আমি সাদিক কায়েম (শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা) ভাইকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানাই। তিনি বললেন, আলোচনা করে আমাকে জানাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি ফোন দিয়ে সম্মতি দেন।
তিনি আরও লিখেন, প্রতিদিন কর্মসূচি ফাইনাল করার আগে আমরা চারজন- আমি, মাসউদ, রিফাত, মাহিন আলোচনা করতাম। শিবির এবং ছাত্রদলের সঙ্গে অনেক সময় গ্রুপ কলে মিটিং করে কর্মসূচি ফাইনাল করতাম। তারই ধারাবাহিকতায় ঐদিনও আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম। রিফাত বললো যে, ‘শোক দিবসের প্রতিবাদে আমরা কালো কাপড় চোখে মুখে বাঁধতে পারি’। আমি রিফাতকে নাসির ভাইয়ের আইডিয়ার কথা বললাম, লীগ যেহেতু কালো কাপড় দিছে, আমরা এইক্ষেত্রে লাল কাপড় বাঁধতে পারি। মাহিনও একই প্রস্তাব দিল।
নাছির উদ্দীন নাছিরের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল জানিয়ে আব্দুল কাদের বলেন, পরবর্তীতে সাদিক ভাই এবং নাছির ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে চোখেমুখে লাল কাপড় বাঁধার কর্মসূচি ফাইনাল করা হলো এবং ছবি তুলে প্রোফাইল পিকচার দেওয়ার আহ্বান জানানো হলো। যাদের কাছে লাল কাপড় নেই, তারা যেনো প্রোফাইল ‘লাল’ করে। ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সেই সময়ে রিফাত রশিদ দেশবাসীর প্রতি এমন আহ্বান জানিয়েছিলেন। প্রোফাইল পিকচারের সঙ্গে বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ জুড়ে দেওয়ার বিষয়ে সাদিক ভাই পরামর্শ দেন। পরামর্শের আলোকে তিনি কিছু হ্যাশট্যাগও দিয়ে দেন।
এদিকে কাদেরের পোস্টের পর নিজের অবস্থানে থেকে ফের পোস্ট করেছেন এস এম ফরহাদ। তিনি লিখেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে বিকৃত করার অপচেষ্টা কখনোই সফল হবে না। আমাদের কোনো দাবি বা বর্ণনার বিপরীতে কেউ ভিন্ন কিছু দাবি করলে, প্রয়োজনে সাংবাদিকদের কাছে তাদের জন্য পর্যাপ্ত ডকুমেন্টস সরবরাহ করা হবে। ব্যক্তিগত আলাপ, চ্যাট এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়ার পক্ষপাতী নই।
এফএইচ/আরআইএস