রাজধানীর গুলিস্তানে অবস্থিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ১০ তলা ভবনটি এক নাটকীয় পরিবর্তনের সাক্ষী হয়েছে।
এক সময় যেটি ছিল ক্ষমতার কেন্দ্র, আজ সেখানে ঝুলছে ‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামের একটি ব্যানার।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় এক বছর পর বুধবার থেকে ভবনটির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শুরু হয়েছে। ১০-১২ জন কর্মী প্রতিটি তলায় নিরলসভাবে কাজ করছেন। নিচতলা ও দোতলার আবর্জনা ইতোমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে, যা দেখে পথচারীরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন।
এক সময় ভবনের নিচতলা একটি উন্মুক্ত শৌচাগারে পরিণত হয়েছিল, যা পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের জন্যও ভোগান্তির কারণ ছিল।
পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা জানান, পুরো ভবনটি পরিষ্কার করার পর এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ভবনে গত বছরের অভ্যুত্থানে আহতদের জন্য একটি অফিস এবং শহীদ পরিবারের স্মৃতিরক্ষায় একটি অফিস স্থাপনের কথাও জানানো হয়। তবে ভবনের ভেতরে কী কার্যক্রম চলবে, তা সাধারণ ছাত্র-জনতা নির্ধারণ করবে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন।
‘আন্তর্জাতিক ফ্যাসিজম ও গণহত্যা গবেষণা ইনস্টিটিউট’ নামের ব্যানারটি কে বা কারা লাগিয়েছে, সে বিষয়ে এখনো স্পষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি, ফলে বিষয়টি রহস্যাবৃতই থেকে গেছে।
উল্লেখ্য, এই ১০ তলাবিশিষ্ট ভবনটি ২০১৮ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছিলেন। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি ছিল আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এক নিদর্শন।
তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটে এবং এক মাসব্যাপী চলে লুটপাট। এরপর থেকেই ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল।
ভবনটির সামনে দিয়ে যাওয়া পথচারীরা নতুন ব্যানার এবং পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম দেখে অনেকেই ছবি তুলছেন।
তাদেরই একজন, পথচারী পলাশ বলেন, ‘একসময় আওয়ামী লীগ সরকার অন্যায়ভাবে বিএনপির কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল, কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিত না। আজ সৃষ্টিকর্তার কী বিচার-তাদের নিজের অফিসই টয়লেট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এখন সেটি অন্যরা ব্যবহার করছে। আওয়ামী লীগের এমন পরিণতি থেকে অন্যদের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
ইএসএস/এসআইএস