তৃতীয় একটি পক্ষ উসকানি দিতে পারে এই আশঙ্কা করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেছেন, যেহেতু অভ্যুত্থানের দুইটি পক্ষের পাশাপাশি কর্মসূচি রয়েছে, সেহেতু তৃতীয় একটি পক্ষ উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করবে।
রোববার (০৩ আগস্ট) দুপুর ১টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে আপলোড করা এক ভিডিওবার্তায় তিনি এমনটি বলেন।
‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে রাজধানীতে জনসমাবেশ করতে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ সমাবেশ থেকে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহারও ঘোষণা করবে দলটি।
রোববার (৩ আগস্ট) বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এরই মধ্যে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশে প্রচুর জনসমাগমের প্রত্যাশা করছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। এই সমাবেশ উপলক্ষেই ভিডিওবার্তা দিয়েছেন সারজিস আলম।
এদিকে ‘জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে দুপুরে শাহবাগে ছাত্র সমাবেশ করবে ছাত্রদল। তাই দুই সমাবেশ ঘিরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সেজন্য নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়েছেন ।
সারজিস আলম বলেন, এক বছর পরে এই ৩ আগস্টে আমরা আবারও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেল ৪টায় এসে দাঁড়াবো পুরো বাংলাদেশের মানুষের সামনে এনসিপির ইশতেহার নিয়ে। আজকে একটি অনডে। আমাদের এই প্রোগ্রাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে হওয়ায় আমাদের শিক্ষার্থী ভাই বোনদের কিছুটা কষ্ট হবে। আমরা তাদের কাছে আগেই দুঃখ প্রকাশ করছি।
তিনি বলেন, সারা দেশ থেকে যারা আজকের সমাবেশে আসবেন তাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, আমাদের কথা বলায় কিংবা আমাদের চলাচলে সৌহার্দ্য এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের যেন বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, যেহেতু এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের জায়গা আমরা সমাবেশ করব, আমাদের জায়গা থেকে কোন ধরনের প্যাকেট, খাবার কিংবা বোতল এরকম কোন কিছু এই জায়গায় যেন না ফেলি। আমরা যেন ময়লাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে ডাস্টবিনে ফেলি।
সারজিস বলেন, আমাদের প্রোগ্রাম শেষে যদি কোনো বোতল প্যাকেট বা এই জাতীয় কোনো উচ্ছিষ্ট ময়লা কিংবা কোনো ধরনের প্যাকেট পড়ে থাকে, আমরা যেন নিজেদের দায়িত্বে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলি এবং নির্দিষ্ট একটি জায়গায় ফেলি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাসে করে আমাদের ছাত্র-জনতা এসে সমাবেশে উপস্থিত হবে। বাসগুলো ক্যাম্পাস এলাকায় বা আশেপাশে রাস্তায় রাখা যাবে না। এই বাসগুলো নিয়ে রাখতে হবে পুরাতন বাণিজ্য মেলার মাঠে। সেখানে আমাদের মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা আছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, শহীদ মিনারের আশেপাশেও আমাদের মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। আজিমপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে পলাশী হয়ে সলিমুল্লাহ হলের সামনে, সেখানেও এই মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া আমাদের ম্যাথ বিল্ডিং বা ঢাকা মেডিকেলের যে বহির্বিভাগ, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি গেটের যে রাস্তাটা সেখানেও একপাশে মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থা থাকবে এবং শহীদ মিনারের ঠিক অপোজিটে আমাদের আইন বিভাগের যে বিল্ডিংটি রয়েছে, সেখানে আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থাকবে।
তিনি বলেন, এমনিতেই এই প্রোগ্রামের জন্য মানুষের হয়তো কিছুটা কষ্ট হবে। এই কষ্ট যেন আমাদের মাধ্যমে না বাড়ে, সেজন্য সব বাসকে পুরাতন বাণিজ্যমেলার যে মাঠ সেই জায়গাটিতে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের এই প্রোগ্রাম চলাকালীন যদি তপ্ত রোদ থাকে, আমাদের সঙ্গে যেন অবশ্যই পানির ব্যবস্থাটি থাকে এবং নিজেরা যেন এটা রাখি। কেউ যদি গুরুতর আহত কিংবা অসুস্থবোধ করি, আমরা যেন প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে যাই, পাশেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ রয়েছে, আমরা যেন সেখানে দ্রুত সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করি।
সারজিস বলেন, আজ আমাদের অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধা এবং আমাদের ভাই ছাত্রদলের যারা রয়েছেন তাদের শহীদ মিনার সংলগ্ন শাহবাগে একটা বড় প্রোগ্রাম রয়েছে। আজ সেখানে আমাদের অভ্যুত্থানের অনেক সহযোদ্ধারা আসবেন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আসবেন। তাদের প্রতি আমাদের যেন পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সবসময় বজায় থাকে এবং আমরা আমাদের জায়গা থেকে একে অন্যকে যেন সহযোগিতা করি।
তৃতীয় একটি পক্ষ উসকানি দিতে পারে এই আশঙ্কা করে সারজিস আলম বলেন, আজকে যেহেতু আমরা অভ্যুত্থানের দুইটি পক্ষ একসাথে পাশাপাশি দুইটি প্রোগ্রাম করছি, তৃতীয় একটি পক্ষ এখানে আমাদের মধ্যে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করবে। তারা ছাত্রদলের বা আমাদের কেউ না। তাদের উসকানিতে যেন আমরা কোনভাবে পা না দিই এবং বিষয়গুলো থেকে যেন আমরা বিরত থাকি। দলীয় শৃঙ্খলা যেন রক্ষা করি।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনাদের অনুরোধ করব আমাদের প্রোগ্রাম যেহেতু বিকাল ৪টায়, আপনারা ৩টার পরে শহীদ মিনারের আশেপাশে আসবেন। আপনারা দোয়েল চত্বরের যে রাস্তাটি, সেদিক দিয়ে আসতে পারেন। ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি গেটের যে রাস্তা চানখারপুল হয়ে সেদিক দিয়ে আসতে পারেন। আপনারা বকসিবাজার দিয়ে আসতে পারেন। আপনারা পলাশীর মোড় অর্থাৎ আজিমপুর বাস স্ট্যান্ড নীলক্ষেত মোড় এই রাস্তাগুলো দিয়ে আসতে পারেন। যেহেতু শাহবাগে এত বড় একটি প্রোগ্রাম হচ্ছে, সেহেতু শাহবাগের ওই রাস্তাটা এড়িয়ে চলা ভালো। তাহলে আপনাদের জন্য চলাচল সুবিধা হবে। তাদেরও প্রোগ্রাম সুন্দরভাবে চলবে।
এসসি/আরএইচ