ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এবং ডাকসু কেন্দ্রিক ছাত্র রাজনীতির রূপরেখা নির্ধারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে বৈঠক করেছে ছাত্রদল।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত উপাচার্যের অফিসে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক থেকে বের হয়ে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হল পর্যায়ে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক যে সংগঠনগুলো রয়েছে সেখানে ছাত্র রাজনীতি কীভাবে চালু থাকবে এবং ছাত্র রাজনীতির ধরন কী হবে, তার রূপরেখা প্রণয়নে সর্বশেষ যে মিটিং হয়েছিল তার আপডেট নেওয়ার জন্য আমরা আজকে এসেছিলাম। আমরা সময় নিয়েছি স্যারের কাছ থেকে। কারণ আমাদের ডাকসু নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। আমরা ডাকসুর বিষয়ে ছাত্রদল পজিটিভ মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা এত মবের শিকার হয়েছি, সোশ্যাল মিডিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সমস্যাগুলো ক্রিয়েট হয়েছে এবং একটি গুপ্ত গোষ্ঠী যেভাবে প্রতিনিয়ত একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, তারপরও ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনে ইতিবাচকভাবে দ্রুততম সময় কীভাবে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়ে সচেতন রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরামের সঙ্গে মিটিং করে সেই রূপরেখা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তারা (শিক্ষক) আমাদেরকে (ছাত্রদল) অবহিত করেছেন যে তারা আজ কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্র রাজনীতির ধরন প্রণয়নে একটি কমিটি ঘোষণা করবেন। সেই কমিটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হল পর্যায়ে এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোতে ছাত্র রাজনীতির ধরন কী হবে সেই রূপরেখা প্রণয়নে আমাদের ছাত্র সংগঠনের মাঝে থেকে ২৩টি সংগঠন থেকে এরই মধ্যে মতামত নিয়েছেন। এখন তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মতামত নেবেন এবং আরও যারা অংশীদার রয়েছে, তাদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে অতি দ্রুততম সময়ে এটি রূপরেখা প্রণয়ন করবেন বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা তাতে আশ্বস্ত হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দীর্ঘ আলোচনায় ডিসি স্যারসহ প্রোভিসি স্যার, প্রক্টর স্যার, কোষাধ্যক্ষ স্যার তারা সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মব ক্রিয়েট থেকে শুরু করে, সর্বশেষ যে বড় ধরনের প্রবলেমগুলো হচ্ছে তার পেছনে গুপ্ত রাজনীতি জড়িত। শুধু তাই নয়, তারা এ গুপ্ত রাজনীতির সংজ্ঞাও নাকি নির্ধারণ করেছেন। যদিও আমাদের মাঝে মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক হয়। আজকের মিটিংয়েও আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি, তারা গুপ্ত রাজনীতির কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন। তাদের মাঝে একটা ভীতি কাজ করে। এটি নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তারা যেটি বলেছে, তারা যদি কখনো গুপ্ত রাজনীতি নিয়ে কথা বলে কিংবা এ আলোকে কিছু কাজ করতে যায় তাদের চরিত্র হরণ করা হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের হেয় করা হয়। তারা তাদের সে আফসোসের কথা আমাদের বলল।
ছাত্রদল অবশ্যই ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কিন্তু আমাদের যে দাবি ছিল এবং ছাত্র সমাজের যে দাবি এবং বিশেষ করে ৫ আগস্টের গণঅভ্যুথান পরবর্তী যে প্রধান দাবি ছিল, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিতপূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসা। স্যাররা তাদের এ গাফিলতি স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, এরই মধ্যে শাহবাগ থানায় যে মামলা করা হয়েছে, সেখানে আরও কীভাবে ইনক্লুড করা যায় সে বিষয়ে তারা কাজ করছে। এখন আমরা তাদের কাজের প্রতিফলন দেখতে চাই। আমরা আশা করছি আগামী শনিবারের মধ্যে তারা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক এবং হল ভিত্তিক বিভিন্ন সামাজিক ও সংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। এখানে অধিকাংশ সংগঠনের গঠনতন্ত্রে লেখা রয়েছে যে, কেউ যদি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে, তাকে এখানে নেতৃত্বে নিয়ে আসা যাবে না। আমাদের শিক্ষকরাও এটি স্বীকার করেছেন। যে এখানে ইসলামী ছাত্রশিবির গুপ্ত রাজনীতি করে তাদের পরিচয় গোপন করে ওইসব জায়গায় দখল করে নিচ্ছে। এটি সরাসরি দখলদারিত্ব কায়েমের মতো। ছাত্রলীগ যেভাবে করেছে ছাত্রশিবির ঠিক সেভাবে দখলদারিত্ব কায়েম করছে। তারা (শিক্ষক) বলেছে, এ বিষয়টি তারা আইডেন্টিফাই করেছে, তারা এ বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবে। রূপরেখা প্রণয়নে এ বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
ছাত্রদল সভপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংসদের দুইটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। এখানে যারা অ্যাডমিন রয়েছে, তারা এটিকে কুক্ষিগত করেছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মব ক্রিয়েট করার ক্ষেত্রে, নারীদের হেনস্ত করার ক্ষেত্রে এবং এমনকি কোনো শিক্ষক যদি গণতান্ত্রিক ভাষায় কথা বলে তাদের বিপরীতে কীভাবে এখানে মব ক্রিয়েট করা যায় সেই প্রক্রিয়া এখানে হয়ে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ গ্রুপে যে ধরনের বাজে ভাষা ব্যবহার করা হয়, এটি কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করে না। আমাদের ভিসি স্যারসহ অন্যদের সাধুবাদ জানাই। তারা নাকি এ গ্রুপগুলোর যে অ্যাডমিন রয়েছে তাদের চিঠি ইস্যু করে ডেকেছে। এই দুটো গ্রুপের বিষয়ে তারা আইনাগত ব্যবস্থা নেবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কমিটি থাকবে না উপাচার্যের এমন মন্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের উপাচার্য সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, তিনি হল কমিটি নিষিদ্ধের কথা বলেননি। তিনি ওইদিন একটি মবের সামনে নিয়ন্ত্রণের কথা বলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পর্যায়ে রাজনীতি কি ধরনের হবে সেই বিষয়ে কমিটি গঠন করা হবে। তবে অবশ্যই আমাদের হল কমিটি থাকবে স্যাররা সেটা বলেছেন।
এসসি/জেএইচ