ঢাকা, রবিবার, ২ ভাদ্র ১৪৩২, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২২ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

আলোচনা সভায় এনসিপি নেতারা

দেশের বর্তমান সংকট নিরসনের একমাত্র পথ গণপরিষদ নির্বাচন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:৪৩, আগস্ট ১৬, ২০২৫
দেশের বর্তমান সংকট নিরসনের একমাত্র পথ গণপরিষদ নির্বাচন

বর্তমান সংবিধান শাসন ও শোষণের সংবিধান। এই পুরনো ব্যবস্থা দিয়ে নতুন করে দেশ গড়লে আবারো ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে।

দেশের এই বর্তমান সংকট নিরসনের একমাত্র পথ গণপরিষদ নির্বাচন।

শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকালে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন শীর্ষক আলোচনা সভায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয়।

আলোচনা সভায় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের এখনো ফাইনাল ড্রাফট আমাদের কাছে আসেনি। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সভাপতি জুলাই ঘোষণা পত্রে ‘সংস্কারকৃত সংবিধান’ শব্দের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন সংবিধানের দাবিকে পাশ কাটিয়ে গেছে। সংস্কারকৃত সংবিধানের শব্দ ব্যবহার করা রাজনৈতিকভাবে যারা নতুন সংবিধান চায় না তাদের পারপাসকে সার্ভ করে।

তিনি আরও বলেন, আমরা রাজপথে আন্দোলন করে নিজেদেরকে গড়ে তুলেছি। নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন চেয়েছি। যদি নিয়মতান্ত্রিক আলোচনার মধ্য দিয়ে, টেবিলের আলোচনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন করা সম্ভব না হয়, নতুন সংবিধান করা না হয়, আমরা রাজপথের মানুষ, রাজপথে ফিরে যেতে আমাদের এক সেকেন্ড সময় লাগবে না। নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারি মাসের কথা বলেছেন। আমাদের তরফে কোনো আপত্তি নেই। নির্বাচন যেকোনো সময় আয়োজিত হতে পারে। কিন্তু এই যে নির্বাচন সামনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে নির্বাচন যেন বাংলাদেশের পুরনো ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার নির্বাচন না হয়। সামনে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচন নতুন ব্যবস্থার ভিত্তিতে আয়োজন করতে হবে।

আলোচনা সভায় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্ট যে কারণে হয়েছে, যে কারণগুলো ৫ আগস্ট ঘটাতে সহায়তা করেছে, সেই কারণগুলোকে বিদ্যমান রেখে আবার আপনি একটি রাষ্ট্র গঠনের দিকে গেলে, ৫ বছর না হোক ১০ বছর না হোক, আপনি আবার একটি গণপ্রতিরোধের শিকার হবেন। আমরা ইতিহাস দিয়ে এটার ডিসপ্লে দেখতে শুরু করেছি। আমলাতন্ত্র হওয়ার কথা ছিল জনগণের, কিন্তু দুর্ভাগ্য তারা একটি রাজনৈতিক দলের কাছে নতজানু হচ্ছে।

নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, যে প্রশাসনের জন্য, যে সেনাবাহিনীর জন্য, যে মিডিয়ার জন্য একটি ফ্যাসিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমরা তাদের কাছেই আবার ৫ আগস্টের পর দায়িত্ব তুলে দিয়েছি একটি গণমুখী রাষ্ট্র গঠনের জন্য। আমরা প্রশাসনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি, মিডিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি, আমরা মিলিটারির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারিনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।

তিনি আরও বলেন, একজন রাজনীতিবিদ বলেছেন, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নাকি আমরা (এনসিপি) টাকা নিয়ে আসছি। আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি গত এক বছরের একটি নথিপত্র বা প্রমাণ দিতে পারে হাসনাত আব্দুল্লাহ বা তার সহযোদ্ধারা দুর্নীতি করেছে, আমরা রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেব। আপনারা যারা আমাদের শত্রুজ্ঞান করছেন, আমরা আপনাদের শত্রু না। আমরা বাংলাদেশটাকে সুন্দর করতে চেয়েছিলাম। আমাদের বলা হয়, আমরা নির্বাচন পেছাতে চাই। নির্বাচনের টাইমলাইন নিয়ে তো আমাদের সমস্যা নেই। নির্বাচন নভেম্বরে হোক, ডিসেম্বরে হোক, জানুয়ারিতে হোক এতে কিছু যায় আসে না। কিন্তু নির্বাচন হতে হবে ‌‘রুলস অব গেইম চেঞ্জের নির্বাচন’। নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব তত দ্রুত হোক, তাতে কিছু যায় আসে না, কিন্তু অবশ্যই সেটা গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। আমি আবার পুরোনো চুরিতন্ত্রের মধ্যে ঢুকতে চাই না।

হাসনাত আরও বলেন, একটি সরকার অর্ধেক পরিচালিত হবে পল্টন থেকে, অর্ধেক পরিচালিত হবে এফবিসিসিআই থেকে, অর্ধেক পরিচালিত হবে গণভবন থেকে, একটু পরিচালিত হবে বঙ্গভবন থেকে, এই ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা চাই না। আগের রাষ্ট্র ব্যবস্থা কাজ করেনি, যার কারণে ৫ আগস্ট আসছে। এটা তো সিম্পল হিসাব। আমাদের অবশ্যই একটি নতুন সংবিধান দিতে হবে। যারা মনে করছে গতানুগতিক রাজনৈতিক দলের বাইরে নতুন রাজনৈতিক দলের উত্থান হতে দেবেন না, তাদের বলতে চাই, আসন দিয়ে আপনি আমাদের কিনতে পারবেন না। আমরা বিক্রি হতে আসিনি। সেজন্য প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে বলবো, আগেই সমঝোতা করে নির্বাচন করলে, সেটার সঙ্গে মধ্যরাতের নির্বাচনের পার্থক্য কি? আমরা তো এই নির্বাচন চাই না।

সভায় দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের যদি সংকট নিরসন করতে হয় তাহলে এটার একমাত্র সমাধান গণপরিষদ নির্বাচন। এ সময় তিনি বিভিন্ন দেশের গণপরিষদ নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে ১৭ এপ্রিল একটি সামরিক ফরমান জারি করেছিলেন। সেই ফরমানে লেখা ছিল, বাংলাদেশে একটি গণপরিষদ গঠন করা যায় কিনা। এটা গ্যাজেটেড ফরমান।

প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে নাসির বলেন, বাংলাদেশের মানুষ উনার চোখে পড়ে না। উনার লন্ডন যেতে হয়। লন্ডনে গিয়ে সিজদা দিয়েছেন। সেজদার মাধ্যমে উনি আদেশ পেয়েছেন এবং সেখানে একটা প্রেসের মধ্যে জানিয়েছেন বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে ইলেকশন হতে হবে। কোনো সংবিধানের অধীনে ঠিক হয় নাই। আপনার সিজদা দিতে হবে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। দেশ যদি স্থিতিশীল হয় তাহলে আমাদেরও একটি সংবিধান আপনি দিয়ে দেন। যদি আপনি দিয়ে দিতে না পারেন তাহলে আপনারও বৈধতা থাকবে না। কারণ, আপনি যেই সংবিধানের ১০৬ এর মাধ্যমে আছেন, আপনার বৈধতা খুঁজে পেতে অনেক কষ্ট হবে। বাংলাদেশের জনগণের মধ্য থেকে আমরা লড়াই করে যাব। এই ক্ষেত্রে এক চুল পরিমাণও আমরা ছাড় দেব না। আসুন, নতুন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। যেই যুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের একটি নতুন সংবিধান তৈরি করতে হবে। সে লড়াইয়ে আপনারা যোগ দেন।

এনসিপি যুগ্ম সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের লড়াইটা গত ৩০০ বছর ধরে একটি শাসনতান্ত্রিক লড়াই ছিল। জনগণের নিজেদের নিজে শাসন করার যে অধিকার, সেই অধিকার ফিরে পাওয়ার অধিকার বারবার আমাদের করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের পুলিশকে নিজেদের পুলিশ মনে হয় না, মনে হয় জনগণের বাইরের একটা কিছু, জনগণের বাইরের এলিয়েন, যেটা জনগণের ওপর চেপে বসেছে। আমাদের আদালতকেও তেমন একটা কিছু মনে হয়। জনগণের বাইরে থেকে জনগণের ওপর তার শাসন চালিয়ে যায়। তার হুকুম জারি করে। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পুলিশ, আদালত বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কিন্তু এমন নয়।

তিনি আরও বলেন, গণমানুষ যুদ্ধ করে, লড়াই করে পুরানো বিধি ব্যবস্থা দূর করে। পরে কিছু আইনজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞের আবির্ভাব ঘটে। তারা বিভিন্ন বই-কিতাব খুলে বলে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। তাহলে এখন কি করবো? পুরোনো ব্যবস্থা খুলে দেখি, কোন জিনিসটা আস্ত আছে, সেখান থেকে আবার শুরু করতে হবে। বাহাত্তর সালে পুরোনো ব্রিটিশ আমলের সংবিধান থেকে শুরু করলো। চব্বিশ সালেও আমাদের সাথে এই বদমাইশিটা করা হয়েছে। এবং আমরা এই বদমাইশিটা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছি। এই ব্যর্থতার দায় থেকে আমরা এখনো রাস্তায় আছি। এই সংবিধান শাসন ও শোষণের সংবিধান।

এসসি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।