ঢাকা, বুধবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

রাজনীতি

গোলাম পরওয়ারের বক্তব্যকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বলছে এনসিপি

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:১১, অক্টোবর ২১, ২০২৫
গোলাম পরওয়ারের বক্তব্যকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বলছে এনসিপি

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জাতীয় নাগরিক পার্টি- এনসিপির উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে দলটি। দলটির নেতারা বলছেন, গোলাম পরওয়ার ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’ বক্তব্য দিয়েছেন।

ওই বক্তব্যকে তারা ‘অসদাচরণ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন।

তবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসান মাহবুব জোবায়ের বলেছেন, গোলাম পরওয়ার কথা প্রসঙ্গে কিছু কথা বলেছেন, তিনি কোনও দল বা ব্যক্তির নাম নেননি। স্নেহের অবস্থান থেকে বলেছেন।

কিন্তু গোলাম পরওয়ার যে ভাষায় বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে স্পষ্টই বোঝা যায় যে তিনি এনসিপির উদ্দেশেই তা বলছেন।  

রোববার এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে তার পোস্টে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী পিআর পদ্ধতি নিয়ে যে তথাকথিত আন্দোলন শুরু করেছিল, আসলে তা ছিল এক সুচিন্তিত রাজনৈতিক প্রতারণা। ’

তিনি আরও বলেন, ‘সেই আন্দোলন পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছিল ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়া ও জাতীয় আলোচনাকে গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র ও সংবিধান পুনর্গঠনের আসল প্রশ্ন থেকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই। ’

এর প্রতিক্রিয়ায় সাতক্ষীরায় দলীয় এক সমাবেশে গোলাম পরওয়ারের বলেন, ‘একটা দল ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছে আমরা সংস্কার, অংশীদারিত্বের রাজনীতি, দেশ গঠন, অভ্যুত্থানে কোনো ভূমিকা রাখিনি। আরে বাবা তোমরা নতুন ছাত্রদের দল, রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর সাথে পাল্লা দিতে গেলে আরও বহুদূর যাইতে হবে। জন্ম নিয়েই বাপের সাথে পাল্লা দিও না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ওনারা চাচ্ছেন আমরা ওনাদের একটু সমালোচনা করি। কেউ তো ওনাদের নাম নেয় না। জামাতের মতো বড় দল বললে যদি আমাদের নাম মুখে নেয়। আমরা আপনাদের অতো আমলে নেই না। জামায়াতের রাজনৈতিক ম্যাচিউরিটি বোঝার জন্য আরও অনেক দূর যেতে হবে। ’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ‘অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি’ হিসেবে জামায়াতে ইসলামী ও তখনকার সমন্বয়কদের মধ্যে বরাবর হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্কই দেখা গেছে।

এমনকি সমন্বয়কদের মধ্য থেকেই কয়েকজন পরবর্তীতে শিবির নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিভিন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়লাভও করেছেন।

এছাড়া হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়াদের অনেকে পরোক্ষভাবে ‘জামায়াত বা শিবিরেরই লোক’ এমন প্রচারণাও রাজনৈতিক অঙ্গনে ছিলো।

এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এনসিপি দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পরেও দুই দলের মধ্যে যথেষ্ট সুসম্পর্কই দেখা গেছে। এমনকি এনসিপি নেতারা বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বিভিন্ন সময় নানা সমালোচনামূলক মন্তব্য করেছেন। কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে পোস্টও দিয়েছেন।

কিন্তু জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে তেমন কোনও নেতিবাচক বক্তব্য এনসিপির দিক থেকে আসেনি। এমনকি এনসিপির গঠিত হওয়ার আগেই ‘অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে জামায়াতের কাফফারা হয়ে গেছে’ -নাহিদ ইসলামের এমন বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে যে নির্বাচনের জন্য পিআর ইস্যুতে জামায়াত যেমন সোচ্চার তেমনি সংসদের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের জন্য পিআর পদ্ধতিতে ভোট দাবি করেছিলো এনসিপিও।

কিন্তু হঠাৎ করে এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে দল দুটির মধ্যে এক ধরনের তিক্ততা দেখা যাচ্ছে। এই পোস্ট রাজনৈতিক মহলে কিছুটা বিস্ময়েরও জন্ম দিয়েছে।

নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, কোনও দলের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখা উচিত।

অনেকেই মনে করেন গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য দুই দলের মধ্যকার ‘টানাপড়েনকে’ প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে। তার ওই বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এনসিপির মধ্যেও।

দলটির যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা শারমিন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, রাজনীতিতে একপক্ষ আরেকপক্ষকে ব্যাশিং করে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকে। তবে এনসিপিকে নিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার যে বক্তব্য দিয়েছে সেটি শুধু অসৌজন্যমূলকই না, রাজনৈতিক ঔদ্ধত্যপূর্ণও বটে।

তিনি বলেন, ওনারা সিনিয়র রাজনীতিবিদ। আমাদের বাবা-দাদাদের বয়সী, ওনাদের কাছ থেকে এই ধরনের বক্তব্য আমরা প্রত্যাশা করি না।  

দলটির সিনিয়র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, গোলাম পরওয়ার যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা রাজনৈতিক সৌজন্যতাকে আরো এক ধাপ পিছিয়েছে।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতিতে কারও বাপ হইতে চাওয়া এক ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিগত সমস্যা। গণঅভ্যুত্থান সবার বাপ। কারণ এনসিপির জন্ম এনসিপির প্রেক্ষাপটে। এখনকার সব রাজনৈতিক দলের বাপ গণঅভ্যুত্থান। তখন অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব মেনে সবাই আন্দোলন করেছে। এই বৈষম্যবিরোধীরা তখন যে সব কর্মসূচি দিয়েছে তার প্রতি সংহতি জানিয়ে তখন তারাও আন্দোলন করেছে। বিপদের সময় অন্যের কমান্ডিংয়ে কাজ করে, বিপদ কেটে যাওয়ার পর কমান্ডারের ওপর এখন নিজেদের কমান্ডার দাবি করা এক ধরনের রাজনৈতিক বালখিল্যতা বা অসদাচরণ। ’ 

বিবিসি বাংলার সৌজন্যে

এনডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ