খুলনা: খুলনায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দায়সারা আন্দোলন করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তারা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি দল ও প্রশাসনের সঙ্গে আতাত করে চলছে ২০ দলীয় জোটের রাজনীতি।
প্রতিটি হরতাল-অবরোধে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালনে নগরীতে একটি মিছিল আর দলীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে বসে সমাবেশের মাধ্যমে দায়সারা আন্দোলন করছেন মহানগর ও জেলার সিনিয়র নেতারা।
ফলে হরতাল-অবরোধে মহানগরী খুলনার জীবনযাত্রায় বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়ছে না।
তৃণমূলের কর্মীরা যখন মামলা আর গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, তখন শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কিংবা বাড়িতে পুলিশি অভিযান চলেছে, এমন কোনো নজির নেই মহানগরী খুলনায়। এ নিয়ে ক্ষোভ, হতাশ ও সমালোচনা রয়েছে সর্বত্র।
খুলনা ঐতিহ্যগতভাবে বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত। অধিকাংশ সময় খুলনা সদর আসনের এমপি ও করপোরেশনের মেয়র হয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা। তবুও খুলনাতেও তাদের আন্দোলন সফলতার মুখ দেখা যায়নি।
দলটির শীর্ষ নেতারা দলের পদ ধরে রাখতে বক্তৃতায় কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারন করলেও মাঠে নামতে দেখা যায়নি। আন্দেলনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের নামিয়ে গা ঢাকা দেন তারা। এমনকি কোনো কর্মী আটক হলেও তাদের পাশে থাকছেন না শীর্ষ নেতারা।
এছাড়া কঠোর আন্দোলনের কথা বলে গোপনে কর্মীদেরকে কোনো প্রকারের সহিংসতায় জড়াতে নিষেধ করেন বলে জানা গেছে।
গত ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ আখ্যায়িত করে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি নিয়ে সারা দেশ যখন টানটান উত্তেজনা তখনও খুলনা ছিল সম্পূর্ণ নিরুত্তাপ। পরদিন থেকে শুরু হওয়া টানা অবরোধেও জীবনযাত্রা রয়েছে স্বাভাবিক। অবরোধের তৃতীয় দিনে ২০ দলের মিছিল থেকে খুলনায় পিটিআই মোড়ে বিআরটিসির দুটি বাসে ইট ছোড়ার ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ঘটনা নেই। দূরপাল্লা ও স্বল্পপাল্লার যানবাহন এবং মালবাহী ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে সে সময় মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া জোটের সমন্বয়ক ও মহানগর বিএনপি সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বাস দুটি রক্ষায় কর্মীদের শান্ত করতে যে জোরালো তৎপরতা চালিয়েছিলেন তা মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হয়। ফলে ওই ঘটনায় একটি মামলা হলেও তিনি আসামি হননি।
এর আগে ২০১৩ সালে বছরব্যাপী নানা সংঘাতের ঘটনাতেও আসামি হননি তিনি। অথচ অসুস্থ হয়ে বাসায় শয্যাশায়ী নগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্ত্তজা এবং দেশের বাইরে অবস্থানরত মহানগর যুবদল সাধারণ সম্পাদক শের আলম সান্টু এ মামলায় আসামি হয়েছেন।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুজ্জামান মনির প্রতিও কর্মীদের ক্ষোভ রয়েছে। বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচিতে অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত থেকেছেন তিনি। দাপ্তরিক ব্যস্ততার অজুহাতে মিছিল সমাবেশে দেখা যায়নি তাকে।
দলের কর্মীরাই বলছেন সরকারের সঙ্গে তার গোপন সমঝোতা বা আতাতের কথা। তার অবর্তমানে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে মহানগর বিএনপির প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলামকে। অবরোধে তার নেতৃত্বে প্রতিদিন দৌলতপুর থানায় মিছিল সমাবেশ হচ্ছে। দলের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অনিয়মিত থাকলেও মেয়রের পদ আকড়ে রয়েছেন মনিরুজ্জামান মনির।
এদিকে প্রতিনিয়ত পুলিশের অভিযান চলছে জেলার পাইকগাছা, কয়রা, রূপসা, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়া, দিঘলিয়া, ফুলতলা উপজেলার বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বাড়িতে। বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ অন্য সংগঠনের সভাপতি, সম্পাদকসহ নেতারা আত্মগোপনে। অথচ খুলনা মহানগরীতে চিত্রটি প্রায় বিপরীত।
চলমান অবরোধে খুলনায় জামায়াত-শিবির নেতাদের কোনো কর্মসূচিতে তেমন কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
সমঝোতার রাজনীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আন্দোলন চাঙা করতে কোনো কার্পণ্য নেই। কিন্ত কর্মীদের একেক জনের বিরুদ্ধে পাঁচ-সাতটি করে মামলা থাকায় কিছুটা প্রভাব পড়েছে।
তবে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মসূচি বিশৃঙ্খলা নয়, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে চায় বলেও জানান মহানগর বিএনপির সভাপতি।
বাংলাদেশ সময় : ১২৫৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫