ঢাকা: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবারও একটি ধাক্কা ও লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়ল বিএনপি। ফাঁস হয়ে গেল ‘অমিত কেলেংকারি’, কেটে গেল ‘খালেদা-অমিত ফোনালাপ’র ভ্রান্তি।
এটা অবশ্য এখন পুরনো খবর। তবে বিএনপির সৃষ্ট ‘অমিত কেলেংকারি’ নিয়ে দেশজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা পুরনো হয়নি। অমিত বলছেন, ‘বাত নেহি হুয়া! কিউ রিউমার ছিড়কতি হো আপলোগ!’ আর বিএনপির দাবি, খালেদা-অমিত কথা সত্যিই হয়েছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ফোন করে অসুস্থতার খোঁজ-খবর নিয়েছেন বলে প্রচার করে বিএনপি। এরপর থেকেই এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
শুক্রবার বিকেলে (৯ জানুয়ারি) ভারতীয় হাই কমিশনের বরাত দিয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবিতে বাংলানিউজ এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করে।
সেদিন হাই কমিশন জানায়, বিজেপি সভাপতি খালেদা জিয়াকে ফোনও করেন নি, কথাও বলেন নি।
হাই কমিশনের বরাতে দায়িত্বশীল সূত্রটি আরও জানায়, কমিশনে এ সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) খবরটি প্রচারিত হওয়ার পর শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে অমিত শাহকে ফোন করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
সুষমা টেলিফোনের বিষয়টি জানতে চাইলে অমিত তাকে জানান, বাংলাদেশ থেকে দু দফা তার দফতরে ফোন গিয়েছিলো। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনও কথা হয় নি।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে সেদিন দাবি করেন, ফোনালাপ যে হয়নি- সে বিষয়ে তাদের কাছেও সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।
এরপর শনিবার (১০ জানুয়ারি) আর কোন রাখঢাক-রহস্য রইলো না। অমিতের কন্ঠেই জাতি শুনলো, ফোনালাপের বিষয়টি ছিল অসত্য। একাধিক টেলিভিশন তার কন্ঠে শোনায়, ‘বাত নেহি হুয়া, সব রিউমার হ্যায়!’
রহস্য উদঘাটনে সাংবাদিকদের অব্যাহত চেষ্টার ফলেই বেরিয়ে এসেছে এই সত্য। তা নিয়েই কথা হয় সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে।
কোন সাংবাদিক আগে অমিতের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে তাদের প্রত্যেকের দেওয়া তথ্যের সারমর্ম প্রায় এক।
শনিবার দৈনিক সমকালের নয়াদিল্লী প্রতিনিধি গৌতম লাহিড়ি টেলিফোনে অমিত শাহ’র সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আলাপে অমিত সুস্পষ্টভাবে খালেদার সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টিকে ‘গুজব’ আখ্যা দেন। বিজেপি’র গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা বারবারই বলছিলেন, ‘কোয়ি বেসিস নেহি। ’
অমিত জানান, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা হয়নি তার। এ সংবাদের কোন ভিত্তি নেই। ’
টেলিভিশন ‘চ্যানেল টোয়েন্টিফোর’র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মোর্শেদ হাসিব হাসান বাংলানিউজকে জানান, খালেদা ও অমিতের ফোনালাপ হয়নি বলে শনিবার দুপুরেই নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।
হাসিব বলেন, ভারতের নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে দলটির নেতাদের নাম ও ফোন নম্বরের তালিকা নেন তিনি। অমিত শাহ’র সঙ্গে একাধিকবার কথাও হয়েছে তার।
সেই সূত্র ধরেই যোগাযোগের চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। দলের মুখপাত্র নালিন কোহলি ও শ্রীকান্ত শর্মা মুখপাত্র হিসেবে সাংবাদিকদের দলীয় প্রধানের ‘কোট’ দেন। তাদের সঙ্গে আলাপে হাসিব জানতে পারেন, ফোনালাপের বিষয়টি সত্যি নয়।
অমিত শাহ উড়িষ্যা থাকায় তার ফোনে যোগাযোগ করার সুযোগ দেরিতে পান হাসিব, শনিবার দুপুর নাগাদ। প্রশ্ন শুনেই অমিত বলে ওঠেন, ‘নো, নো!’
কিন্তু এইটুকুর ওপর ভিত্তি করে রিপোর্ট হয় না টেলিভিশনে। তাই দ্বিতীয় দফায় যোগাযোগ করেন বিকেলে। সেই আলাপে অমিত বলেন, ‘নো, নো, টোটালি রিউমার!’
হাসিব অফিসে অবহিত করেন বিষয়টি, আর অফিসের নির্দেশনা, ‘করে দাও রিপোর্ট!’ব্যাস, হয়ে গেল। এর পরেরটুকু দর্শক ও শ্রোতারা জানেন।
একাত্তর টেলিভিশনের ফারজানা রূপা বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে তার সফল রিপোর্টিং-এর নেপথ্য কাহিনীর বর্ণনা দেন।
রুপা জানান, শুক্রবার(৯ জানুয়ারি) তার এক সোর্স থেকে জানেন, খালেদা-অমিত ফোনালাপের বিষয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। বিজেপি নেতাদের যে ক’জনের ফোন নম্বর ছিল, তাদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না, যাদের কোট করা যায়। দিল্লীতে তাদের একটি মিটিং ছিল বলে চারঘন্টা ফোনে তাদের পাওয়া যাচ্ছিল না।
‘এছাড়া ফোনালাপ একান্তই ব্যক্তিগত একটি বিষয়। এর বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারবেন একমাত্র খালেদা ও অমিত। খালেদা বলেছেন, ফোনালাপ হয়েছে। তাই অমিতের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন ছিল’- বলেন রূপা।
বিজেপি’র এক মুখপাত্রই রুপাকে অমিত শাহ’র নম্বরটি দেন। ফোনের ওপাশের ব্যক্তি সত্যিই অমিত কি না- আলাপের রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও ঢাকা ও দিল্লী থেকে সেই নম্বরে ফোন করিয়ে নিশ্চিত হন।
এছাড়া অমিতের বিভিন্ন সময় দেওয়া বক্তব্যের রেকর্ড শুনে নিশ্চিত হয়ে নেন- ফোনে রেকর্ড হওয়া কন্ঠ অমিতেরই। যাতে অমিত বলছিলেন, খালেদার সঙ্গে তার কোন কথাই হয়নি।
রিপোর্টের পর ফারজানা রূপা তারা ফেসবুক দেয়ালে একটি পোস্ট দেন। তাতেও মেলে রিপোর্টটি করার ক্ষেত্রে তার অব্যাহত প্রচেষ্টার কথা। তিনি লিখেছেন:
অফিস থেকে বার বার বলছিলো, চন্দন মিত্র, সুধাংশু, প্রথাগত রায়...বিজেপির কোনো নেতাকে একটু পাওয়া যায় কি না!!
কিন্তু, খুঁজছিলাম অমিত শাহকেই। ক্ষীণ আশা ছিল ফোনটা তিনি নিজে ধরবেন। ফোনের চার্জ একদফা শেষ। লাগাতার চেস্টা। ফোন বাজে। কেউ ধরেনা। এক হাতে ফোন। অন্য হাতে রেকর্ডার। চন্দন মিত্র ফোন ধরলেন। বললেন, অপেক্ষা করুন। আর এরপরেই, বুঝলাম, ভাগ্যের শিকে ক্যামনে ছিড়ে। জীবনে অনুসন্ধান করেছি বহু, কিন্তু, অমিত শাহর...did u talk to our ex prime minister khaleda zia?.......no …no…no…no..its a fake news! শীতে জুবুথুবু নিউজরুমটাকে গরম করে দিলো! ভুলে গেলাম...ইনক্রিমেন্ট না কি যেনো হওয়ার কথা ছিলো!!?
** কংগ্রেসম্যানদের নিয়ে জাহিদের জালিয়াতিতে ডুবলো বিএনপি
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৪ ঘন্টা, (আপডেটেড- ১৫৫৭ ঘন্টা), জানুয়ারি ১১, ২০১৫