ঢাকা: ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকা এবং রায় নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করায় আদালত অবমাননার অভিযোগে তিন জামায়াত নেতা, দুই শিবির নেতা এবং জামায়াত নেতাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলামকে কারণ দর্শাও (শো’কজ) নোটিশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতারা হচ্ছেন- জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ড. শফিকুর রহমান এবং ছাত্রশিবিরের সভাপতি আব্দুল জব্বার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান।
নোটিশে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না- তা জানতে চেয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাদেরকে সশরীরে হাজির হয়ে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।
২৮ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
সোমবার (১২ জানুয়ারি) এ শো’কজ নোটিশ জারি করেন চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে ইসলামের স্পিরিট ও ও নবীর সুন্নতের সঙ্গে এ ধরনের সহিংস আন্দোলন কর্মসূচি কতোটা খাপ খায়- সে বিষয়ে আগামী ধার্য দিনে আসামিপক্ষ ও প্রসিকিউশনকে শুনানি করতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। চেয়ারম্যান এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের গত রায়ে বলা ছিল। আমরা এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে চাই।
প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম রাষ্ট্রপক্ষে এবং অ্যাডভোকেট মোঃ শিশির মনির আসামিপক্ষে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
গত ১ জানুয়ারি সংগঠন হিসেবে জামায়াত এবং ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করেছিলেন প্রসিকিউশন। ৫ জানুয়ারি এ অভিযোগের শুনানি নিয়ে সোমবার আদেশের দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। আদেশে জামায়াত বাদে বাকিদেরকে শো’কজ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ রায়ের প্রতিবাদে ৩১ ডিসেম্বর ও ১ জানুয়ারি দু’দিনের হরতাল ডাকে জামায়াত। বিবৃতিতে এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নানা বিরুপ কথা বলেন জামায়াত-শিবিরের শীর্ষ পদে থাকা নেতারা।
অন্যদিকে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’।
এসব অভিযোগে ১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ওই সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ আল মালুম, সুলতান মাহমুদ সীমন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, তাপস কান্তি বল, রেজিয়া সুলতানা চমন।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় যে সাক্ষ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে তা এক ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলেও মন্তব্য করেন তাজুল।
আজহারের এই আইনজীবী বলেন, একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে ট্রেন থেকে আজহারকে নামতে যে তিনজন দেখেছেন বলে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাদের কেউ দেখেছেন ৬ কিলোমিটার দূর থেকে, কেউ ৩ কিলোমিটার ও আবার কেউ দেখেছেন দেড় কিলোমিটার দূর থেকে। এসব সাক্ষ্যের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা ‘অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা’ বলে আমরা মনে করি।
অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, যেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক প্রমাণের ভিত্তিতে আজহারুল ইসলামকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য ও দালিলিক কাগজপত্র যদি ডাস্টবিনে ফেলা হতো তাতে সুবিচার হতো।
এসব সাক্ষ্য-প্রমাণে মৃত্যুদণ্ড হওয়া দূরের কথা, এসব অভিযোগ দাখিলের জন্য প্রসিকিউশনের জরিমানা হওয়ার দরকার ছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গত ৫ জানুয়ারি শুনানিতে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘আজহারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়েছেন, সেটা গ্রহণ না করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হলেই সুবিচার হতো’ তাজুলের এমন বক্তব্যে আদালত অবমাননা হয়েছে।
প্রসিকিউটর মালুম বলেন, জামায়াত নেতা এটিএম আজহারের রায়ের পর আসামিপক্ষ থেকে তাজুল ইসলাম যে বক্তব্য, অঙ্গভঙ্গি ও শব্দচয়ন করেছেন তা মোটেই আইনজীবীসুলভ ছিল না। তাজুল জামায়াত-শিবিরের প্রোপাগান্ডা হিসেবে কাজ করছেন এবং ট্রাইব্যুনালের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য অপবাদ ছড়াচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সেদিন শুনানিতে আরও অংশ নেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন, তুরিন আফরোজ ও রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোঃ শিশির মনির ও অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম।
গত ৩০ ডিসেম্বরের রায়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল। আজহারের বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে রায়ে প্রমাণিত হয়েছে পাঁচটি অভিযোগ। এর মধ্যে তিনটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং দু’টিতে ২৫ ও ৫ বছর করে আরও ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির(উর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযোগ ছাড়াও তিনি যে আলবদর কমান্ডার ছিলেন তাও প্রমাণিত হয়েছে রায়ে। প্রমাণিত না হওয়া বাকি একটি অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন এই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী।
বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০১৫
** মাহিদুর-আফসারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু ২১ জানুয়ারি