ঢাকা: দুর্নীতি মামলা পরিচালনাকারী বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের মামলায় আদালত শুনানি গ্রহণে সময়ের আবেদন মঞ্জুর করলেও সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবির আবেদন নামঞ্জুর করায় এই অনাস্থা ঘোষণা করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন।
তার পক্ষে দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া এই অনাস্থা ঘোষণা করেন। তারা এ সংক্রান্ত আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন।
ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ, আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারের আদালতের ওপর এই অনাস্থা জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (১৫ জানুয়ারি) হরতাল চলাকালে খালেদা জিয়া এই মামলার শুনানিতে হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে সময় আবেদন করেন। এছাড়াও সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবির আবেদনও করেন তার আইনজীবীরা। এর মধ্যে একটি আবেদন নামঞ্জুর করে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেন আদালত।
সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতেই অবশ্য ‘এজাহার দেখে সাক্ষ্য দেওয়া’র বিষয় নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বচসা হয়।
এর পরপরই সাক্ষ্যগ্রহণ মুলতবি আবেদন নামঞ্জুরের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। সে আবেদনটিও নামঞ্জুর করে দেন বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। তখনই আদালতের প্রতি অনাস্থা ঘোষণা করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার আবেদন করেন আসামি পক্ষের দুই আইনজীবী।
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়কে বদল করে। তার পরিবর্তে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ পান আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদার।
মামলার বাদী হারুন-অর রশিদ গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর শুরু করে আরও পাঁচ কার্যদিবস সাক্ষ্য দিয়েছেন। সেদিন থেকেই খালেদার আইনজীবীদের নানা বিষয়ে একের পর এক আবেদন, এজলাসকক্ষে হট্টগোল ও বিচারকের উদ্দেশ্যে বাজে ভাষার প্রয়োগ করে বিচারিক কার্যক্রম ভণ্ডুল করার চেষ্টার ফলে ব্যাহত হয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। সময়ের আবেদন জানিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ কয়েক দফা পিছিয়েও নিয়েছেন তারা। ফলে প্রায় চার মাসেও হারুন-অর রশিদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়নি। তিনিই জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলারও প্রথম সাক্ষী ও বাদী।
এ অবস্থায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের সুপারিশে আইন মন্ত্রণালয় এ আদালতের আগের বিচারক বাসুদেব রায়কে বদল করে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ হিসাবে নিয়োগ দেন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু আহমেদ জমাদারকে।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর ছিল নতুন বিচারকের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম দিন। সেদিন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বকশিবাজার এলাকায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে এমপি ছবি বিশ্বাসসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন। বিএনপির কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও আওয়ামী লীগের নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি ছবি বিশ্বাসের মাইক্রোবাসে আগুন ধরিয়ে দেন।
প্রথম দিনের বিবেচনায় খালেদার আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে ২৪ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে বুধবার (৭ জানুয়ারি) ধার্য করেছিলেন নতুন বিচারক। ৭ জানুয়ারি আংশিক সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে পুনরায় ১৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়।
খালেদা ছাড়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার অপর পাঁচ আসামি হচ্ছেন- বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান।
তাদের মধ্যে কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন।
মামলার অপর আসামি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে পলাতক।
অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ মোট ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
অন্যদিকে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা দায়ের করা হয়। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।
মামলাটির অভিযোগে বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি।
জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুন-অর রশিদ খান।
বাংলাদেশ সময় ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১৫
** খালেদার অনুপস্থিতেই শুরু দুর্নীতি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ
** খালেদার পক্ষে সময়ের আবেদন