ঢাকা: দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে দিন রাত ব্যস্ত এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে আনতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই এখন নির্বাচনের মাঠে।
কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে দলীয় এমপি ঢাকা মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের সর্ব স্তরের নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে জোরালো গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু দলের নেতাকর্মীরাই নন, ব্যবসায়ী, শিল্পী-সাহিত্যিক শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ও জনপ্রিয় ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ ও প্রচারকাজে অংশ নিচ্ছেন। তবে যারা মন্ত্রীসহ সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন তারা নির্বাচনী আইনে বাধার কারণে সরাসরি অংশ নিতে পারছেন না।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণে আওয়ামী লীগের দুই মেয়রপ্রার্থী বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, পথসভা করে ভোট চাচ্ছেন। মেয়র প্রার্থীরা যেখানেই গণসংযোগে নামছেন সেখানেই দলের স্থানীয় এমপি, থানা, ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা সঙ্গে থাকছেন। প্রার্থী ছাড়াও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীরা মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে গণসংযোগ করে ভোট চাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রতিটি ওয়ার্ডে দল-সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য যারা ভোট চাচ্ছেন তারাও একই সঙ্গে মেয়র প্রার্থীর জন্যও ভোট চাচ্ছেন। আবার যেসব কর্মী মেয়র পদের জন্য ভোট চাচ্ছেন তারা একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য ভোট চাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, মেয়র, কাউন্সিলর ও মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর--সব পদেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে এক সঙ্গে প্রচার করা ও ভোট চাওয়া হচ্ছে।
রোববার কল্যাণপুর বস্তিতে পথসভায় মেয়রপ্রার্থী আনিসুল হক নিজের পক্ষে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য ভোট চেয়েছেন। এ পথসভায় স্থানীয় এমপি আসলামুল হক আসলামও মেয়র প্রার্থীর জন্য ভোট চাওয়ার পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীদের জন্য ভোট চেয়েছেন।
এদিকে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ব্যতিক্রমী প্রচারেও অংশ নিচ্ছেন মেয়রপ্রার্থীরা। উত্তরের মেয়রপ্রার্থী আনিসুল তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে দুই-তিন কিলোমিটার দৌড়ে গণসংযোগ করেছেন। অংশ নিচ্ছেন নগর পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে ঝাড়ু– হাতে প্রতীকী পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী সাঈদ খোকন যেখানে গণসংযোগে যাচ্ছেন সেখানেই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শত শত কর্মী-সমর্থক তার সঙ্গে যাচ্ছেন এবং গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন।
বিভিন্ন এলাকায় মেয়রপ্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প করা হয়েছে। রয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের ক্যাম্প। এছাড়া আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কার্যালয়গুলো থেকেও নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উত্তর ও দক্ষিণ দুই অংশেই মেয়রপ্রার্থীদের পক্ষে প্রচার ও গণসংগযোগ চালাচ্ছেন। মহানগরের অন্য নেতারা উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ হয়ে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুকুল চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। মহানগরে আমরা যারা সিনিয়র আছি তারা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটিতেই গণসংযোগ করছি।
এদিকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সহস্র নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিদিনই ঢাকার দুই অংশে ভাগ হয়ে আনিসুল হক ও সাঈদ খোকনের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে।
সোমবার(২০ এপ্রিল) সাঈদ খোকন ও ২২ এপ্রিল আনিসুল হকের পক্ষে সুধী সমাবেশের কর্মসূচি নিয়েছে সহস্র নাগরিক কমিটি। সেই সঙ্গে ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশবরেণ্য ১০০ জন বুদ্ধিজীবী দুই প্রার্থীকে একসঙ্গে নিয়ে ‘নৈরাজ্য নাশকতার বিরুদ্ধে শান্তি-প্রগতি-আধুনিক ঢাকা চাই’ স্লোগানে শপথ পাঠ করবেন।
বুধবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে এই সুধী সমাবেশ করা হবে ঢাকা দক্ষিণের প্রার্থী সাঈদ খোকন এবং ২২ এপ্রিল মিরপুরে উত্তরের প্রার্থী আনিসুল হককে নিয়ে।
এসব কর্মসূচির কথা জানিয়ে সহস্র নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব গোলাম কুদ্দুস বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই ৮/৯টি টিম দুই ভাগে ভাগ হয়ে আমরা দুই মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করছি। মানুষের কাছে গিয়ে ভোট চাচ্ছি।
দুই সিটি করপোরেশনে দলীয় প্রচার ও দলীয় প্রার্থীদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা যারা মন্ত্রী তারা অংশ নিতে পারছি না। তবে আমাদের কর্মীরা গ্রুপ-প্রচারে নেমে পড়েছেন। সর্বস্তরের নেতাকর্মীরাই নেমেছেন। তারা মানুষের কাছে যাচ্ছেন। ’
বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তারা গত তিন মাস ধরে সহিংসতা করেছে, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। খালেদা জিয়া এখন তাদের কাছে কোন মুখ নিয়ে ভোট চাচ্ছেন! যে মানুষকে তারা পুড়িয়ে মেরেছেন সেই মানুষ তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে? মানুষের বিবেক একটুও নাড়া দেবে না? এটা তো হতে পারে না। ’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘মানুষ আমাদের প্রার্থী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রার্থীকে ভোট দেবে। খালেদা জিয়া নৈতিকভাবে পরাজিত। তিনি পুড়িয়ে মানুষ মেরেছেন আবার মানুষের কাছে ভোটও চাচ্ছেন। ’
বাংলাদেশ সময় ২০৫০ ঘন্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৫
জেএম