ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আ’লীগের এমপি তুহিনের জামায়াতপ্রীতি!

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
আ’লীগের এমপি তুহিনের জামায়াতপ্রীতি!

ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের জামায়াতপ্রীতিতে তোলপাড় চলছে পুরো জেলাজুড়ে। তার সুপারিশে নান্দাইল পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রারের শূন্যপদে উপজেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক ও বিস্ফোরক মামলার জেলখাটা আসামি কাজী মো. শামসুদ্দিন নিয়োগ পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।

এমপি তুহিনের জামায়াতপ্রীতি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া!

সোমবার (১৬ মে) রাত সোয়া ১১টায় বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, ‘এমপি তুহিন সব সময় চলাফেরাই করেন জামায়াত-বিএনপি আর জাতীয় পার্টির নেতাদের নিয়ে। টাকা হলে তিনি সব করতে পারেন। উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারিকে কাজী হিসেবে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না’।

‘তার এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। জামায়াত পুনর্বাসনের জন্য নেত্রী তাকে এমপি বানাননি, এটিই হয়তো ভুলে গেছেন এমপি’- বলেন সিরাজুল।  

জানা গেছে, উপজেলার নান্দাইল পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত ছিলেন হুমায়ুন কবির। গত ২৮ এপ্রিল তিনি মারা যান। এরপর শূন্য এ পদে আঁচারগাঁও ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মো. নুরুল ইসলামকে ১২০ দিনের জন্য অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রার বিএম মোসাদ্দেক হোসেন ৩৭৯ (৭) নং স্মারকে গত ২ মে নুরুল ইসলামকে এ পদে দায়িত্ব পালনের আদেশ দেন। কিন্তু মাত্র ৮ দিনের মাথায়ই এ আদেশ পরিবর্তিত হয়ে যায়।

গত ১০ মে নান্দাইল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার কাজী মো: শামসুদ্দিন নিজেকে সংশ্লিষ্ট পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রারের অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের জন্য জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে আবেদন জানান।

শামসুদ্দিনের ওই আবেদনে ‘জোর সুপারিশ’ করেন এ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল আবেদিন তুহিন। এমপির সুপারিশে দৌলতে গত রোববার (১৫ মে) নিয়োগ পান জামায়াত নেতা শামসুদ্দিন।

অথচ এ জামায়াত নেতারই কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর নান্দাইল ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী পদে উপজেলা ওলামা লীগের সদস্য মাসুদ মিয়াকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য আইনমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার দিয়েছিলেন এমপি তুহিন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, কাজী মো. শামসুদ্দিন ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর নান্দাইল মডেল থানায় দায়ের করা বিস্ফোরক মামলার দুই নম্বর আসামি। থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন তাকেসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে ওই মামলা দায়ের করেছিলেন।

নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বাংলানিউজকে জানান, মাস কয়েক আগে শামসুদ্দিন ওই মামলায় কারাবরণ করে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন।

তবে জামায়াত নেতা শামসুদ্দিন বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, তিনি এখন আর জামায়াত করেন না। জেল খেটে বেরিয়ে আসার পর জামায়াতের সঙ্গে তার আর কোনো সম্পর্কও নেই। নিজেই স্বেচ্ছায় এমপির সুপারিশে পাওয়া এ অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেবেন।

সূত্র জানায়, জামায়াত নেতাকে নান্দাইল পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রারের শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলাকালেই জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে এ সংক্রান্ত অভিযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় এমপির সুপারিশের কারণেই কোনো কর্ণপাত করেননি জেলা রেজিস্ট্রার বিএম মোসাদ্দেক হোসেন।

ময়মনসিংহ জেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, ‘জামায়াতের লোক ছাড়া বিধি মোতাবেক যেকোনো কাজীকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার দাবি ছিল আমাদের। কিন্তু আমাদের দাবি আমলে নেওয়া হয়নি’।

সূত্র মতে, এমপি তুহিনের জামায়াতপ্রীতিতে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিতর্কের। আর এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরেই তোপের মুখে পড়া এমপি সোমবার (১৬ মে) কথা বলেছেন জেলা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে। দু’একদিনের মধ্যেই তিনি জামায়াত নেতার নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ পাঠাবেন বলেও জানিয়েছে একটি দায়িত্বশীল সূত্র।

ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রার বিএমমোসাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিধি মানতে গিয়েই হয়তো জামায়াত নেতাকে সুপারিশ করেছেন এমপি। কিংবা তিনি জানতেন না যে, শামসুদ্দিন জামায়াত করেন। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে তার জড়িত থাকার বিষয়টি আমারও জানা নেই’।

সংশ্লিষ্ট অফিস সহকারী কাজল চন্দ্র বাংলানিউজকে জানান, সব উপজেলাতেই কাজী নিকাহ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স মঞ্জুরি কমিটির উপদেষ্টা এমপি। এমপি যাকে নিয়োগ দিতে বলবেন, তাকেই নিয়োগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

শামসুদ্দিন জামায়াত নেতা কি-না, সেটি তাদের জানা নেই উল্লেখ করে কাজল চন্দ্র বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হওয়ায় এমপি এখন জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে নতুন করে কাগজ পাঠানোর কথা জানিয়েছেন’।

আর নুরুল ইসলামকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এ অফিস সহকারী জানান, নুরুল ইসলাম স্থানীয় চণ্ডিপাশা ইউনিয়নেও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছিলেন। এমন অভিযোগ ওঠার পর তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি মোবাইল ফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
এমএএএম/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।