ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

তিস্তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত তৎপর থাকবে সরকার

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৭
তিস্তা নিয়ে শেষ পর্যন্ত তৎপর থাকবে সরকার

ঢাকা: ভারতের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ঝুলে থাকা তিস্তা নদীর পানি বন্টন চুক্তির ব্যাপারে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া না গেলেও এ ব্যাপারে আশা ছাড়েনি সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে তিস্তার জট খুলতে সরকারের পক্ষ থেকে তৎপরতা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর এ সফরেই একটা ইতিবাচক সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও মনে করছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকার তৎপর রয়েছে এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে সরকারের ওই নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

তবে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কসহ বিভিন্ন দিক থেকে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।
 
সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দুর না হওয়ায় সরকার অনেকটা অস্বস্থিতে রয়েছে। আর এ কারণে একটা সমাধান বের করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরেই যাতে তিস্তা চুক্তি সম্ভব হয়, সে জন্য কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বার্তাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
 
ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীর পৃথকভাবে ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বিরোধিতা করায় তা সম্ভব হয়নি।
 
২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তির সব কিছু নির্ধারিত ছিলো। কিন্তু মমতার বাধার কারণে চুক্তি হয়নি। এরপর ২০১৫ সালের জুনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময়ও এ চুক্তির ব্যাপারে প্রস্তুতি ছিলো। কিন্তু মমতার আপত্তির কারণে তখনও হয়নি। এবারও মমতা ব্যানার্জি আগের অবস্থানেই রয়েছেন।

আগামী এপ্রিলের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় নির্ধারণ হয়েছে। এর আগে গত বছর ডিসেম্বর এবং চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে এ সফরের কথা উঠলেও নানা কারণে সফর পিছিয়ে যায়। ওই সময় সফর পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়ার বিষয়টিও কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়। তাই প্রধানমন্ত্রীর আগামী সফরে স্বাভাবিকভাবেই তিস্তা চুক্তির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।  

তবে সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের মতে, শেষ পর্যন্ত তিস্তা চুক্তি না হলেও ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারকে জোরালোভাবে ভারত সমর্থন দিয়ে আসছে। ভারতে ক্ষমতার পালাবদলের পর নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি অপরিবর্তিত রেখেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় মোদি সরকারের সময়ই দীর্ঘ দিনের পুরোনো স্থল সীমানা সমস্যার সমাধান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ঢাকা সফর করে গেছেন।  

এদিকে গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সফর করেছেন। ওই সফরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন চুক্তি হয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারত এবং চীন উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে দুই দেশকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন এ সরকার। দুই দেশের সঙ্গেই সমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সমান নৈকট্য বজায় রেখে চলার নীতি নিয়ে সরকার অগ্রসর হচ্ছে।

সে দিক থেকে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা এবং ভবিষ্যত সম্পর্ক আরও জোরদার করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে সরকারের ওই নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭ 
এসকে/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।