বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের সংগঠিত করতে গত কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। আর এ কাজে তাকে সহযোগিতা করছেন ডা. জাফরুল্লাহ এবং প্রফেসর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী।
কিন্তু ডা. জাহিদ ও আবদুল হাই শিকদার দ্বন্দ্বে শুরুর আগেই ভেস্তে যেতে বসেছে তাদের এই উদ্যোগ। জানা গেছে, পেশাজীবী ফোরামে আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাই তাদের দ্বন্দ্বের মূল কারণ। মূলত এই দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণেই খালেদা জিয়ার বারংবার তাগাদা সত্ত্বেও এতদিন মাঠে নামতে পারেনি বিএনপিপন্থি পেশাজীবী ফোরাম।
তবে শেষ পর্যন্ত স্থবিরতা কাটাতে খালেদা জিয়ার নির্দেশে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত করার উদ্যোগ নেন ড. এমাজউদ্দীন আহমদ।
বেশ কিছুদিন ধরে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্কের পর অবশেষে শনিবার দুপুরে ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে সমমনা বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের নিয়ে বৈঠকে বসার ঘোষণা দেন তারা। এজন্য যথারীতি ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বুদ্ধিজীবী ও বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
সূত্রের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবারের সভায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী, পেশাজীবীদের মধ্যে বাছাই করা ৩০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের কনফারেন্স রুমে শনিবার দুপুরে সভা শুরু হওয়ার কথা ছিলো।
সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা সভা করে সরাসরি তারা সম্মিলিতভাবে গুলশানে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যাবেন-এমনই ছিলো পরিকল্পনা।
কিন্তু ডা. জাহিদ ও আবদুল হাই শিকদার গ্রুপের অন্তঃদ্বন্দ্বের কারণে এখন ভেস্তে যেতে বসেছে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের এই উদ্যোগ। তারা দুজনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পরস্পর বিরোধী দুই গ্রুপের।
ডা. জাহিদকে সমর্থন দিচ্ছেন ড. এমাজউদ্দীন আহমদ ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা। এছাড়া সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদ এবং আবদাল আহমেদও সমর্থন দিচ্ছেন তাকে।
অপরদিকে আবদুল হাই শিকদারকে সমর্থন যোগাচ্ছেন প্রফেসর ডা. মাহবুব উল্লাহ ও তার সমর্থকরা।
তবে শনিবারের বৈঠকের ব্যাপারে সবপক্ষের ইতিবাচক মনোভাব থাকলেও গোল বাধে এমাজউদ্দীন আহমেদের তরফে ফেসবুকে ডা. জাহিদের বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টিতে। এমাজউদ্দীনের তরফে ডা. জাহিদের এই আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আবদুল হাই শিকদার ও ড. মাহবুব উল্লাহ পক্ষ। তাদের ধারণা বিএনপিপন্থি পেশাজীবী-বুদ্ধিজীবীদের বৈঠকের মূল লাইমলাইট কেড়ে নিয়ে নেতৃত্ব আত্মসাৎ করতেই ডা. জাহিদ এমাজউদ্দীনের পক্ষে এই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পক্ষান্তরে সরকারের গোপন এজেন্ট হয়ে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার বিষয়টিতে বাগড়া দিতেই বৈঠক স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন আবদুল হাই শিকদার পক্ষ এমন দাবি করছেন তাদের বিরোধীরা।
তাদের দাবি খালেদা জিয়ার নির্দেশের পর ড. এমাজউদ্দীন ও ডা.জাফরউল্লাহ যখন গত কয়েক মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত করার কাজটিতে সফল হতে যাচ্ছেন, ঠিক তখনই সরকারের গোপন এজেন্ট হিসেবে পুরো প্রক্রিয়াটিকে ভেস্তে দিতে তৎপর হয়েছেন আবদুল হাই শিকদার পক্ষ।
সব মিলিয়ে পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস, গ্রুপিং এবং ব্যক্তিস্বার্থের নানা সমীকরণে শুরুর আগেই ব্যর্থ হতে চলেছে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের একত্রিত হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামার বিষয়টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৮, ২০১৮
আরআই