কেবল বাম ঘরোনার ছোট ছোট রাজনৈতিক দল পল্টন মোড় ও প্রেসক্লাব এলাকায় পহেলা মে সকালে সভা-সমাবেশ করে। তাও আবার জমাটবদ্ধ সমাবেশ নয়, ছোট ছোট ইউনিটে ভাগ হয়ে বিচ্ছিন্ন সভা-সমাবেশে সীমাবদ্ধ থাকে তাদের মে দিবসের কর্মসূচি।
অথচ নিকট অতীতে আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপতিম গঠন জাতীয় শ্রমিকলীগ, বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল, জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক পার্টি এবং জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক পরিষদ’র ব্যানারে বড় বড় জনসভা ও শ্রমিক সমাবেশে হতো।
গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় নিজ নিজ দলের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপতিম সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এসব সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং জামায়াতের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকতেন।
কিন্তু ২০১৩ সালের পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মে দিবসের কর্মসূচিতে ভাটার টান লক্ষ্য করা যায় । প্রধান চার রজানৈতিক দল এ ব্যাপারে যেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। অবশ্য এ ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ রয়েছে।
রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বলার চেষ্টা করছে সরকার তাদেরকে শ্রমিক সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। এবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে তারা পায় নি। উপায়ান্তর না দেখে বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল পহেলা মে সকাল ১০টায় নয়াপল্টন থেকে প্রেসক্লাব পযর্ন্ত র্যালি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু একটা প্রশ্নের সোজা জবাব মিলছে না বিএনপির কাছ থেকে। অতীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর, টঙ্গি, জয়দেবপুর মোড় ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন মাঠে সমাবেশ করলেও গত চার বছর ধরে কেন ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেই সমাবেশের জন্য বেছে নিচ্ছে বিএনপি? আর কেনই বা সরকার তাদেরকে ঢাকার কোনো স্পটে সমাবেশ করতে দিচ্ছে না!
মে দিবস নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেরও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই এবার। কেবল পহেলা মে সকাল সাড়ে ৯ টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে র্যালি করবে দলটির ভ্রাতৃপতিম সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগ। অথচ গত বছরও এ সংগঠনটি গাজীপুরে শ্রমিক সমাবেশ’র আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন।
এদিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। না ঘরকা, না ঘটকা অবস্থানে সরকার ও বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধার সম্মুখীন হচ্ছে না। মহান মে দিবসে সকাল-বিকাল প্রোগ্রাম সাজিয়েছে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দল জাতীয় পার্টি।
মহান মে দিবস উপলক্ষে পহেলা মে সকাল ১০টায় গাবতলীর মাজার রোডে খেলার মাঠে জাতীয় মোটর শ্রমিক পার্টি সমাবেশ ও র্যালি করবে। বিকেল ৩টায় কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয় শ্রমিক পার্টি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ দু’টি প্রোগ্রামে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
কিন্তু এ দু’টি প্রোগ্রামের একটিকেও সেই অর্থে শ্রমিকসমাবেশ বা বড় ধরনের জনসভা বলার সুযোগ নেই। বরং দায়সারা গোছের কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়েই বর্তমান সংসদের তথাকথিত প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি পালন করতে যাচ্ছে মহান মে দিবস।
স্বাধীনতাবিরোধী হলেও সাংগঠনিক শক্তির বিচারে দেশের চতুর্থ বড় দল জামায়াতও গত কয়েক বছর ধরে মহান মে দিবস উপলক্ষে তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করছে না। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি এবং গরুত্বপূর্ণ নেতারা কারাবন্দি থাকায় বস্তুত দলটির সব ধরনের কার্যক্রম সীমিত হয়ে পড়েছে। সেখানে মহান দিবসে তাদের কাছ থেকে তেমন কোনো কর্মসূচিও আশা করে না কেউ।
তবে বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলো অতীতের মতই নিজেদের মতো করে মহান মে দিবসের কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে। পহেলা মে সোমবার সকাল পল্টন মোড় ও প্রেসক্লাবের সামনে তাদের কর্মসূচি রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৭
এজেড/জেএম