ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এবং এ জোটের বাইরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মতে, নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গারা এসেছেন, মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের দীর্ঘ দিন এখানে রাখতে গেলে বাংলাদেশকে অনেক বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
তাই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোই বর্তমান সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় বলে তারা মনে করেন।
তবে এই নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কিভাবে সম্মানের সঙ্গে ফেরত পাঠানো যায় সে নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে বলে মত দেন তারা। এজন্য তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর।
আর এটা করতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমেই মিয়ানমারকে তাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে। এটা রাতারাতি হবে না। এর জন্য এখনই কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে।
ক্ষমতাসীন জোট এবং এর বাইরের রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনেকের অভিমত, বাংলাদেশকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে তবে শুধু একা চালালে হবে না। এর জন্য বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতাও নিতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতা বিভিন্ন দিক থেকে জোরালো হলে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও জোরালো হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোই এই সংকটের একমাত্র সমাধান। দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় মিয়ানমান রাজি হয়নি ফেরত নিতে। এখন আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করেই মিয়ানমারকে ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে। আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করাই একমাত্র উপায়। বিভিন্ন দেশ ও সংস্থাকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। ইতোমধ্যেই সরকার তৎপরতা শুরু করেছে।
১৪ দলের বাইরে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন দরকার। মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে রোহিঙ্গাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে তাদের দেশে সম্মানের সঙ্গে ফিরিয়ে নিতে। এর জন্য আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন করতে বাধ্য করতে হবে। কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের দেশি ও আন্তর্জাতিক কোনো সাম্প্রদায়িক শক্তি যেন ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
১৪ দলের বাইরে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে চাপ দিতে সরকারকে আরও সিরিয়াস হতে হবে। এই রিপোর্টের পরপরই সরকারের উচিত ছিলো মাঠে নামা। এখন কুটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে, অল আউট তৎপরতা চালাতে হবে। বিশ্বের কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে হবে।
এ বিষয়ে ১৪ দলের শরিক জাসদের একাংশের সভাপতি শরিফ নুরুল আম্বিয়া বাংলানিউজকে বলেন, এর একমাত্র সমাধান রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এই সমস্যার সাধান বের করতে হবে। বিশ্বজনমতকে এক জায়গায় আনতে হবে। সরকারিভাবে কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি রাজনৈতিক তৎপরতাও চালাতে হবে। যত দেরি হবে সমস্যা ততই বাড়বে।
১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, এদের ফেরত পাঠাতেই হবে। কারণ মিয়ানমার তাদের জন্মভূমি। তবে তাদের ফিরিয়ে নিতে কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। এটা বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো করতে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিলে মিয়ানমারকে বাধ্য করা সম্ভব হবে।
১৪ দলের আরেক শরিক কমিউনিস্টকেন্দ্রের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অসিত বরণ রায় বাংলানিউজকে বলেন, এটা একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। আন্তর্জাতিকভাবেই এর সমাধান হতে হবে। দ্রুত সমাধান রেব করতে না পারলে এর সঙ্গে অনেক কিছু জড়িয়ে যেতে পারে। এদেরকে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা হতে পারে। তাই আমাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে যাতে করে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৭
এসকে/জেএম