মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, চলতি সপ্তাহে এক লাফে প্রায় সব চালের দাম কেজি প্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বর্তমানে দেশে যে খাদ্য সংকট চলছে, যেভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে চালের দাম বাড়ছে, যেভাবে অভিযানের নামে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, খাদ্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা যেভাবে মিথ্যাচার করছেন তাতে প্রকৃত ও প্রকট সংকট আড়াল করা যাবেনা। ৭৪ এর ন্যায় ভয়াল দুর্ভিক্ষ চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে। আর এজন্য দায়ী সরকারের দেশ পরিচালনায় লুটপাটের নীতিকে অবলম্বন।
এদিকে বাংলাদেশে চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটি বলেছে, গত তিন মাসে দেশে চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এই সময়ে দেশে খাদ্যের দাম, খাদ্যের সহজলভ্যতা ও খাদ্যের মান, এই তিন ক্ষেত্রেই পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। চালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে দেশের মানুষসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হলেও বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এখনও নির্বিকার। তারা শুধুমাত্র বিরোধী দল নিধনেই সদাতৎপর। তাদের ভাবখানা এরকম যেন না খেয়ে মানুষ মারা গেলেও তাদের কিছু যায় আসেনা। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, বেপরোয়া লুটপাট, দখল ও চাঁদাবাজিতে রাষ্ট্র ও সমাজে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। তাদের বিশৃঙ্খল অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার কারনে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা আজ চরম ঝুঁকিতে। চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই বলেই মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার।
এদিকে বর্তমান সরকারের পরম বন্ধু ভারত বাংলাদেশে চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। ভারত সরকার সুস্পষ্টভাবে বলেছে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর দুই মাস তারা কোনো চাল বাংলাদেশে রফতানি করবে না। এই সময়ে কৃষকদের কোনো কাজ থাকেনা। এ কারনে আমাদের দেশে মরা কার্তিক বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। এই সময়ে কৃষকদের অকৃষি কাজেরও কোনো সুযোগ নেই। কারন প্রবল বৃষ্টিপাতে এবারে বন্যার ঢলে গ্রামীণ অবকাঠামো তছনছ হয়ে গেছে। ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে জীবন ধারণেরও কোন সুযোগ নেই। ক্ষমতা ধরে রাখার গর্ব খর্ব হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের চাল রফতানি বন্ধ করার প্রতিবাদ করতেও ভয় পাচ্ছে। আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে চালের সরবরাহ বৃদ্ধির জোর দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও বর্বর নির্যাতনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়লেও সরকার এখনও কোনো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে খাদ্য নেই, খাবার পানি নেই, আহত-গুলিবিদ্ধ ও অসুস্থ নারী-পুরুষ-শিশুরা খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে প্রতিদিনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গাদের শরীর পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। গুলি করে গণহত্যা, যুবতি মেয়েদের অপহরণ ও ধর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা খাবার ও পানির সংকটে ছটপট করছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে শুরু থেকেই সরকারের বিভিন্ন বাধা উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাসহ বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে সেবা প্রদান করে আসছে। অথচ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয়ের নামে তাদের সর্বস্ব লুটে নেওয়ার খবরে দেশবাসী স্তম্ভিত।
প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৭
বিএস