বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত সেমিনারে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা একই মঞ্চে বক্তব্য দিতে গিয়ে পরস্পর পরস্পরকে এ আহ্বান জানান।
'অ্যাডভান্সিং ইয়থ লিডারশিপ অ্যান্ড পার্টিসিপেশন ফর পিচফুল ইলেকশন' শীর্ষক এ সেমিনারে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এইচ টি ইমাম, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী ও ওয়াসিকা আয়শা খান।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে সেমিনারে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. মঈন খান ও সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা।
আয়োজকদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের কেটিয়া ক্রোক এবং ইউএসএইড'র মিশন ডিরেক্টর জেনিনা জারুজেস্কি।
সেমিনারে নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাজনীতিতে সহনশীলতা ও গণতন্ত্র চর্চার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। নইলে আমাদের সব অর্জন বিফলে যাবে। তিনি বলেন, রাজনীতিবিদদের হাতেই রাজনীতি থাকতে হবে। পেশি শক্তি আর অর্থ শক্তির হাত থেকে রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে। যারা টাকা পয়সা কামানোর জন্য রাজনীতিতে আসেন এবং সংসদে যান তারা দেশ ও জাতির জন্য কী করবে- তা বুঝতে কারো কষ্ট হয় না।
বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রতি সহনশীল আচরণের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, এ যে গুম হচ্ছে খুন হচ্ছে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে- এসব বন্ধ করতে হবে। সর্বোপরি চলমান সংকট নিরসনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে।
নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য যে উদ্যোগ অতীতে আমরা দেখেছি, সেখানে রাজনৈতিক সহনশীলতা কতটুকু ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশে সরকার ছিল, আইন ছিল, প্রশাসন ছিল তার পরও একটা রাজনৈতিক দলের প্রধানসহ সব নেতাকে এক সঙ্গে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা হয়েছে। ২৪ জন মানুষ সেখানে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এরপরও আমরা সহনশীল রাজনীতি চর্চার মধ্যেই আছি। গত ৯ বছরে বিরোধী দলের কোনো নেতার ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে নি-বলেন যোগ করেন আওয়ামী লীগের এ শীর্ষ নেতা।
তিনি বলেন নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন। তাদের সব রকম সহযোগিতা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনকালীন সরকার নির্বাচন কমিশনের কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
আব্দুর রাজ্জাকের বক্তব্যের পর বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান।
তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা প্রধানমন্ত্রীর কাজ নয়। এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ। শুধু এ গ্যারান্টি আমাদেরকে দেন, আপনারা নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেবেন কী না। আমরা জানি এটা আপনারা পারবেন না। এ জন্যই প্রয়োজন নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার।
প্যানেলভুক্ত সর্বশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিতে উঠে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, রাজনৈতিক সহনশীলতা ও গণতন্ত্র চর্চার ভার শুধু সরকারি দলের ওপর বর্তায় না। সকল রাজনৈতিক দলেরই দায়িত্ব এটি চর্চা করা।
তিনি বলেন, অতীতে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়েছে, নির্বাচনগুলো কেমন ছিলো, সে বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হবে- ওদিকে যেতে চাই না। আমরা সহনশীলতার মধ্যেই থাকতে চাই।
আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের অনুরোধ করবো, আল্লাহর ওয়াস্তে গতবারের মতো নির্বাচন বয়কট কইরেন না। নির্বাচন প্রতিরোধের নামে অগ্নি সন্ত্রাস কইরেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৭
এজেড/ওএইচ/