ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

‘বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে সরকার’ 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৭
‘বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে সরকার’  রুহুল কবির রিজভী আহমেদ

ঢাকা: প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে জোরপূর্বক এক মাসের ছুটি দিয়ে সরকার গোটা বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। 

শনিবার (০৭ অক্টোবর) সকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।  

রিজভী বলেন, বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার প্রথম ধাপ হলো প্রধান বিচারপতিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া।

এখন নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য নেই। সব বিভাগের উপরই একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলো শেখ হাসিনার। মানুষের বিচার প্রার্থনার শেষ আশ্রয় স্থলটুকু আর থাকলো না। এর ফলে আগামী দিনের সকল রায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই নিয়ন্ত্রণ হবে বলে জনমনে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রধান বিচারপতিকে হুমকি দিয়ে ছুটি নিতে বাধ্য করা অথবা ছুটির নামে জালিয়াতি করা হয়েছে সেটি নজীরবিহীন। যেভাবে তাকে নাজেহাল করা হয়েছে, যেভাবে বিচার বিভাগের সম্মান, মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নস্যাৎ হয়েছে তাতে বিচারবিভাগের সম্মান ও ভাবমূর্তি বলে কিছু অবশিষ্ট রইলো না।  

তিনি বলেন, এই সরকারের দু:সহ দৌরাত্মের বিরুদ্ধে সকলে মিলে সোচ্চার না হলে ভবিষ্যতে বিরোধী দল, মত ও বিশ্বাসের লোকদেরসহ ন্যায় বিচার পাওয়ার আরা কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। সরকারের নিষ্ঠুর প্রতিহিংসার শিকার হবে সরকারবিরোধীরা। দেশকে স্থায়ী দু:শাসনের বজ্রআটুনিতে বেঁধে ফেলা হলো। বিচার বিভাগের ওপর আরো নগ্ন হস্তক্ষেপ করে ন্যায় বিচারের পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেওয়া হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই ঘটনায় গোটা বিচার ব্যবস্থাকেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেওয়া হলো।  

রিজভী বলেন, একজন সুস্থ ব্যক্তিকে অসুস্থ বানিয়ে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার ইতিহাস আওয়ামী লীগের অনেক পুরনো। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক টাঙ্গাইলের শামসুল হককে পাগল বানানো হয়েছিলো। এরপর আওয়ামী লীগের কতো নেতাকেই অসুস্থ বানিয়ে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রধান বিচারপতিকেও তারা আওয়ামী স্টাইলে অসুস্থ বানিয়ে এখন বিদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র করছে। বাস্তবে প্রধান বিচারপতি অসুস্থ নন। গত পরশু তিনি যখন মন্দিরে গেছেন তখন তার সঙ্গে যাদের দেখা হয়েছিলো তারা পরিষ্কার করে বলেছেন প্রধান বিচারপতিকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি।  

সুপ্রিমকোর্টের কর্মকর্তারা তার বাসভবনে দেখা করে গণমাধ্যমকে বলেছেন প্রধান বিচারপতিকে দেখে অসুস্থ মনে হয়নি। তাকে জোর করে ছুটিতে পাঠিয়ে এখন দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। এজন্য গত দু’দিন ধরে সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা দেখা করে তার ওপর প্রচন্ড চাপ প্রয়োগ করছেন। অথচ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি বারবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করলেও পুলিশি বাধায় দেখা করতে পারেনি।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘কোনো সমস্যাই দেশের অগ্রগতি থামাতে পারবেনা’। এ কথাতো তিনি বলবেনই, কারণ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধীনতা, বিরোধী দলের চিন্তা ও বিশ্বাসসহ গণতন্ত্রই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর মনঃপীড়া ও তার ক্ষমতায় টিকে থাকার একমাত্র সমস্যা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ রাষ্ট্রের স্বাধীন স্তম্ভগুলোকে কঠিন কুঠারাঘাতে উপড়ে ফেলে এখন প্রধানমন্ত্রীর একক ক্ষমতার আধিপত্যের রঙ্গিন অগ্রগতি ও ক্ষমতাসীনদের লোভ লালসার অগ্রগতিতে জাতীয় সম্পদ লোপাট হতে আর কোনো বাধা থাকার তো কথা নয়।

রিজভী বলেন, দিল্লিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন ‘সার্বভৌমত্বের নামে আমরা অন্যদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবো না’। পররাষ্ট্র সচিবের এই বক্তব্য আমাদের বিস্মিত ও হতবাক করেছে। তাহলে কি তিনি সার্বভৌমত্ব দুর্বল করে অন্য দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চাচ্ছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি সার্বভৌমত্ব সংহত রেখেই অন্য দেশের সম্পর্ক ও জোট গঠন করেছিলো। স্বাধীনতার ঘোষক বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান আঞ্চলিক জোট সার্ক এর স্বপ্নদ্রষ্টা। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখেই এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের জোট গঠিত হয়। এতে মূল উদ্দেশ্য থাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনয়ন, সংঘাত ও বৈরিতার অবসান। পৃথিবীর নানা দেশে নানা অঞ্চলে দেশ সমূহের জোট সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রেখেই গঠিত হয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য দেশের ভোটারবিহীন সরকারের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার নীতিরই প্রতিফলন। গত পাঁচ মাসে বিএসএফ পাঁচজন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আজ দুর্বল বলেই বিএসএফ একতরফাভাবে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তকে রক্তাক্ত করছে। দেশের সার্বভৌমত্বের কথা না ভেবে গোপন চুক্তির মাধ্যমে অন্যকে উজাড় করে দিলে প্রতিদিনই সীমান্তে বাংলাদেশিরা হত্যাকাণ্ডের শিকার হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৭
বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।