সোমবার (০২ এপ্রিল) রাতে মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে খালেককে প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করা হয়। এতে স্বস্তি ফিরেছে খালেক সমর্থক ও আ’লীগ শিবিরে।
৮ এপ্রিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডে তালুকদার আব্দুল খালেককে মনোনয়ন দেওয়ার সুপারিশ করা হবে বলে সভায় আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই দিন প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।
খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা খালেক আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী না থাকায় হতাশায় ভুগছিলেন খালেক ভক্তরা। তার সময়ে খুলনার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এরপরও ২০১৩ সালের নির্বাচনে হেফাজত ইস্যু, দলীয় কোন্দলের কারণে বিএনপি প্রার্থীর কাছে প্রায় ৫৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তখন থেকেই আর নির্বাচন করবেন না বলে সাফ জানিয়ে আসছিলেন খালেক। বিএনপির দূর্গখ্যাত খুলনায় বর্তমানে আ’লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে তার বিকল্প না থাকায় সবাই তাকেই প্রার্থী চাচ্ছেন। যে কারণে তার অভিমানের বরফ কিছুটা গলছে বলে আ’লীগের একটি বিস্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
মেয়র পদে আ’লীগের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত হওয়ায় প্রার্থিতা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যকার মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের আপাতত নিরসন হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলীয় প্রধান চাইলে প্রার্থী হবো।
আ’লীগের প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত হলেও প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন এখন সে বিষয়টি নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কেসিসি নির্বাচনে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেও নগর উন্নয়নে তার তেমন ভূমিকা না থাকায় জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি যেবার অংশ নেয়নি সেবার মনি দলীয় সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করে কেসিসি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে খালেকের কাছে পরাজিত হন।
গত নির্বাচনে যেসব নেতা-কর্মী মনির পক্ষে কাজ করেছেন তারা মনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে অবমূল্যায়িত হয়েছেন। যে কারণে তারা মনির বিকল্প খুঁজছেন। যদিও মনি এবারও মেয়র প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
মনির জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ায় বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এবার মেয়র পদ ধরে রাখতে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাকে।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের সু-সংগঠিত করে রাখছেন মনা। তার সাথে দেখা করতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় না। হাসি মুখে সবার সুখ-দুঃখের কথা শোনেন। এখন সময় এসেছে যোগ্য নেতার যোগ্য মূল্যায়ন করবার। মনাকে মেয়র পদে দেখতে চান তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত টানা ১৫ বছর কেসিসির কাউন্সিলর ছিলাম। গত নির্বাচনে মেয়র পদে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। কিন্তু দলীয় নির্দেশে আমি নির্বাচন করিনি। এবার আশা করি আমাকে মেয়র নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে প্রার্থী ঘোষণায় দেরি করছে। খালেক তালুকদার প্রার্থী হওয়ায় শতভাগ বিজয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় বিএনপি খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ থাকায় কেসিসির মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার (০৩ এপ্রিল) বাংলানিউজকে বলেন, মহাসচিব অসুস্থ থাকায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। তিনি সুস্থ হলে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।
এদিকে জাতীয় পার্টি (জাপা) মহানগর আহ্বায়ক এস এম মুশফিকুর রহমান, জাতীয় পার্টি (জেপি) মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজী মাসুদ আহম্মেদ এবং ইসলামী আন্দোলনের মহানগর সভাপতি মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক কেসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রোববার (৩০ মার্চ) নির্বাচন কমিশন কেসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। ১৫ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন জমা দানের শেষ সময় ১২ এপ্রিল। যাচাই বাছাই ১৪-১৫ এপ্রিল। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। এবারের নির্বাচনে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ৩১টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ এবং নারী ভোটার ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৮
এমআরএম/এমজেএফ