কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে, কেইবা হাসতে যাচ্ছেন শেষ হাসি, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। রাজশাহী-১ আসনে এবার মুখোমুখি হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ওমর ফারুক চৌধুরী।
বর্তমানে অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে সংসদ সদস্য ফারুক চৌধুরী রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। তবে নানান কারণে ভালো নেই প্রতিপক্ষ আমিনুল হক। মামলার তথ্য গোপনের কারণে প্রথমেই মনোনয়ন বাতিল হয় তার। এরপর আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান আমিনুল হক। কিন্তু ভোটে থাকলেও মাঠ জমাতে পারছেন না বিএনপির এই প্রার্থী।
জঙ্গি মদতদানের অভিযোগে দীর্ঘ সময় এলাকায় পলাতক ছিলেন আমিনুল হক। এরপর দেশে ফিরলেও এলাকায় খুব একটা যাতায়াত ছিল না তার। ফলে ভোটের সময় এসে নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে পারছেন না। এর ওপর পড়েছেন কর্মী সঙ্কটে। এলাকায় তার পোস্টারের সংখ্যাও কম। এরপরও সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশি হয়রানি ও পোস্টার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলাসহ নানান অভিযোগ করেছেন আমিনুল।
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি নেতারা। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ব্যারিস্টার আমিনুল হক জানান, তার এলাকার বিভিন্ন স্থান থেকে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এরই মধ্যে তার নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের অভিযোগ করেছেন তিনি।
এছাড়াও আমিনুল হকের দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। ফলে প্রচার প্রচারণার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সমর্থক ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে, রাগ, ক্ষোভ, অভিমান ভুলে গিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ‘সেভেন স্টার’ নামে পরিচিত গোদাগাড়ী-তানোরের ৭ আওয়ামী লীগ নেতা। তারা সবাই এবার মনোনয়নের জন্য যুদ্ধ নেমেছিলেন। মনোনয়ন পাওয়ার জন্য একযোগে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফারুক চৌধুরীর বিরোধিতাও করেছিলেন। তবে গত ১২ ডিসেম্বর রাতে ওমর ফারুক চৌধুরী নিজে উদ্যোগে ওই নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। এর পরদিনই নির্বাচনী মাঠে সেভেন স্টারের সঙ্গে ফারুক চৌধুরীর মিলের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তারা এখন একযোগে প্রচারণাও চালাচ্ছেন।
রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, এতদিন নিজেদের মধ্যে যা কিছু ঘটে গেছে তার সবকিছু ভুলে গিয়ে শেখ হাসিনার নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের এক হওয়া প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে দূরত্ব থাকলে অন্যরা সুযোগ নিতে পারে। আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ দল। এখানে চাওয়া-পাওয়া বেশি থাকতেই পারে। প্রার্থী হতে চাওয়া কোনো অপরাধ না। শেখ হাসিনার বিজয়ের জন্য আমাদের এখন এক হয়ে কাজ করতে হবে। তাই সকল বিভেদ ভুলে দলীয় নেতাকর্মীরা উন্নয়নের প্রতীক নৌকার বিজয়ের জন্য একাট্টা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮৬ সালের আগ পর্যন্ত রাজশাহীর গোদাগাড়ী-তানোর আসনটি ঘাঁটি ছিল আওয়ামী লীগের। প্রথম জাতীয় সংসদের মতো দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। ১৯৭৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে এখানে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোহসীন।
তবে ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচনে আসনটি জামায়াতে ইসলামীর কব্জায় চলে যায়। সেবার এমপি নির্বাচিত হন জামায়াত নেতা অধ্যাপক মজিবুর রহমান, যিনি বর্তমানে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত আমির।
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ৪র্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ দুরুল হুদা এই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১ সাল থেকে পাল্টে যায় এখানকার রাজনৈতিক দৃশ্যপট।
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার আমিনুল হক বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংস্থাপন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ঠাঁই পান খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভায়। ব্যারিস্টার আমিনুল হক ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সালের পয়লা অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন। ফলে একটানা তিনবার সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জঙ্গিবাদে মদদদানসহ আমিনুল হকের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা হয়। এতে গ্রেফতার এড়াতে তিনি আত্মগোপন করেন। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন তার বড় ভাই সাবেক পুলিশ প্রধান এনামুল হক। তবে তিনি বর্তমানে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে হেরে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৮
এসএস/এমজেএফ