ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

রেজা কিবরিয়াকে আইনি নোটিশ গণফোরামের একাংশের 

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
রেজা কিবরিয়াকে আইনি নোটিশ গণফোরামের একাংশের 

ঢাকা: গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু, সাবেক নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী ও  জগলুল হায়দার আফ্রিক।

মঙ্গলবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে এ চার নেতার পক্ষে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মো. হেলাল উদ্দিন এ নোটিশ পাঠান বলে গণমাধ্যমে ওই চার নেতা জানিয়েছেন।

আইনি নোটিশের অনুলিপি গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকেও দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে ড. রেজা কিবরিয়াকে বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক, গণফোরাম উল্লেখপূর্বক হেলাল উদ্দিন জানান, আমার উপরোল্লিখিত মোয়াক্কেলদের নির্দেশনা মতে আমি আপনার উদ্দেশ্যে নিন্মরূপ বর্ণনা করিতেছি:-

১.  আপনি রেজা কিবরিয়া আমার মোয়াক্কেলদের পৃথক পৃথক ভাবে গত ২৮ তারিখে সম্পূর্ণ এখতিয়ার বহির্ভূত কথিত কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন।

২.  আপনি উক্ত নোটিশে নিজেকে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদকের মিথ্যা ও ভূয়া পরিচয় দিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন।

৩. আপনি কর্তৃক গঠিত গঠনতন্ত্র বিরোধী আহবায়ক কমিটিতে কোথাও আমার মোয়াক্কেলরা না থাকায় তাদের কথিত কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া বা কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার আপনার বা উক্ত আহবায়ক কমিটির নেই। কাজেই এ নোটিশ দিয়ে আপনি এখতিয়ার বহির্ভূত গঠনতন্ত্র বিরোধী গর্হিত কাজ করেছেন।

৪.   আপনি গণফোরামের নাম ব্যবহার করে উপরোল্লিখিত কথিত কারণ দর্শানোর নোটিশ নেহায়েত অসৎ উদ্দেশ্যে আপনি কর্তৃক সৃজিত প্যাডে, যেখানে গণফোরামের কেন্দ্রীয় অফিস দেখানো হয়েছে জনৈক আইনজীবীর চেম্বারকে। অথচ গত প্রায় দুই যুগ ধরে সবার জ্ঞাতসরে গণফোরামের কেন্দ্রীয় অফিস ইডেন কমপ্লেক্স ২/১-এ, আরামবাগ (১৬৭, মতিঝিল ইনার সার্কুলার রোড) ঢাকা-১০০০। রাজনৈতিক দল হিসেবে গণফোরামের নিবন্ধন সনদে উক্ত ঠিকানায় উল্লেখ আছে এবং এখনও গণফোরামের কেন্দ্রীয় অফিস একই ঠিকানায় স্থিত আছে। এক্ষেত্রেও আপনি ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।

৫. আপনি স্বীকার করেছেন গঠনতন্ত্রের ১৪(ছ) অনুচ্ছেদের বিধান মতে সভাপতির পরামর্শে সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটি বা ইহার আওতাধীন যেকোন পরিষদের সভা আহ্বানের ক্ষমতা প্রাপ্ত কিন্তু আপনি গঠনতন্ত্রের ১৪(খ), ১৫, ১৮ ও ৪৩ অনুচ্ছেদের বাধ্যতামূলক বিধান সমূহ সম্পূর্ণরূপে লঙ্ঘন তথা ভঙ্গ করেছেন। আপনি ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল জাতীয় বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর ২০১৯ সালের ৫ মে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণফোরামের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণার পর থেকে অদ্যাবধি কেন্দ্রীয় কমিটির (৯০ দিনের মধ্যে), স্থায়ী পরিষদের (৬০ দিনের মধ্যে) কিংবা সম্পাদক পরিষদের (৩০ দিনের মধ্যে) কোনো সভাই আহ্বান করেননি বরং কেন্দ্রীয় কমিটির ৭০ জন সদস্য সভা ডাকার জন্য সম্মিলিতভাবে বার বার অনুরোধ জানালে আপনি এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতায় গঠনতন্ত্রের ৪৩ অনুচ্ছেদ সম্পূর্নরূপে লঙ্ঘন করে গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির চার জন দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত সম্পাদক পরিষদের কর্মকর্তাকে জনৈক মোস্তাক আহমেদের স্বাক্ষরে বহিষ্কারের চিঠি দিয়েছেন যা আপনি কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় উপস্থিত দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সিদ্ধান্ত ব্যতিরেকে গঠনতন্ত্রের চরম লঙ্ঘন করেছেন।

৬. উপরে বর্ণিত মতে গঠনতান্ত্রিক বাধ্য বাধকতা থাকা সত্ত্বেও আপনি গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি, স্থায়ী পরিষদ ও সম্পাদক পরিষদের কোনো সভা অদ্যাবধি আহবান করতে বা অনুষ্ঠিত করতে সম্পূর্নরূপে ব্যর্থ হয়েছেন। কাজেই গণফোরামের সাধারণ সম্পাদকের পদ দখল করে রাখার কোনো নৈতিক কিংবা গঠনতান্ত্রিক কোনো অধিকার আপনার নেই। গণফোরামের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট বিধান (৪৩ অনুচ্ছেদ) সম্পূর্ণরূপে ভঙ্গ করে চার জন কেন্দ্রীয় কমিটির পরীক্ষিত কর্মকর্তাকে আপনার ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাচারিতার ধৃষ্টতা দেখিয়ে তথাকথিত বহিষ্কারের চিঠি পাঠিয়েছেন। আপনার এহেন কর্মকাণ্ডে বাধ্য হয়ে  ২০২০ সালের ১৪ মার্চ কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে  নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে দলের মূখপাত্র নির্বাচিত করা হয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় আপনি রেজা কিবরিয়াসহ আরও চার জনকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়। আপনি গণফোরাম থেকে বহিষ্কৃত হয়েও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের ভূয়া ও মিথ্যা পরিচয়ে আমার মোয়াক্কেলদের কথিত কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চরম ধৃষ্টতার পরিচয় ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে আমার সম্মানিত মোয়াক্কেলদের সম্মানহানি ঘটিয়েছেন।

৭. আপনি রেজা কিবরিয়া আপনাকে সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করে আরও বলেছেন যে,‘‘গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি আমার মোয়াক্কেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা ও এখতিয়ার রাখে’’। অথচ আপনি নিজেই পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে গঠনতন্ত্রের বিধান চরমভাবে লঙ্ঘন করে বিগত জাতীয় কাউন্সিলে গঠিত গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। আর এখন বিলুপ্তি করা কেন্দ্রীয় কমিটির স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক সেজে আমার মোয়াক্কেলদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়ে আবারো স্বেচ্ছাচারিতা ও প্রতারণার পুনারাবৃত্তি ঘটালেন।

৮. গণফোরামের গঠনতন্ত্রে আহ্বায়ক কমিটির কোনো বিধান নেই, তা সত্ত্বেও জাতীয় কাউন্সিলে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি সম্পূর্ণরূপে গঠনতন্ত্র  লঙ্ঘন করে নিজে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় বিলুপ্তি করে কথিত আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নিজেই স্বঘোষিত সাধারণ সম্পাদক সেজেছেন যা বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল সমূহের ইতিহাসে বিরল এক হাস্যকর ও উদ্ভট সংযোজন। অধিকন্তু গঠনতন্ত্রে অনুপস্থিত আহবায়ক কমিটি কিংবা আপনার মতো স্বঘোষিত তথা কথিত সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো রূপ কারণ দর্শানোর নোটিশ বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ বা বহিষ্কারের কোনো এখতিয়ার রাখেন না।

৯. ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর  গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় আপনাকেসহ চার জনকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আপনি বহিষ্কৃত হওয়া সত্ত্বেও গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির (যা ইতোমধ্যে আপনার দ্বারা বিলুপ্ত ঘোষিত হয়েছে) সাধারণ সম্পাদকের ভূয়া ও মিথ্যা পরিচয়ে কথিত কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে আপনি আমার মোয়াক্কেলদের শাস্তি দিতে হুমকি দিয়েছেন এবং চরমভাবে অসম্মানিত করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছেন।

এমতাবস্থায়, আমি আমার মোয়াক্কেলদের পক্ষে আপনাকে এ মর্মে জানাচ্ছি যে, অত্র নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে আপনার কথিত কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহারসহ ভবিষ্যতে এধরনের প্রতারণামূলক ধৃষ্টতাপূর্ণ ও মানহানিকর কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবেন, অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালতে যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২০
এমএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।